চেনে তাঁদের প্যারিসও, কেমন আছে সোনাগাছির যৌনকর্মীরা, চলুন ফিরে দেখা যাক
- FB
- TW
- Linkdin
সোনগাছি কলকাতা শহরে অবস্থিত ভারতের বৃহত্তম নিষিদ্ধপল্লী। এখানে কয়েশ বহুতল ভবনে প্রায় ১ লক্ষ যৌন কর্মী বসবাস করেন।এই সোনাগাছি মূলত উত্তর কলকাতার মার্বেল প্যালেসের উত্তরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, শোভাবাজার এবং বিডন স্ট্রিটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত।
যৌন কর্মীদের সাংবিধানিক অধিকার প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। আর সুপ্রিমকোর্টের সেই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের পরেই নিজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সরব হয়েছেন,শহরেরে যৌনকর্মীরা।বুধবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও-র বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, যৌন কর্মী এবং তাঁদের সন্তানদেরও মানুষের মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
অষ্টাদশ এবং উনবিংশ শতাব্দির বাঙালি বাবু সম্প্রদায় সোনাগাছি এলাকায় নিজেদের উপপত্নীদের প্রতিপালন করতেন। বলা চলে সকলের আড়ালে ভোগবিলাশে সেই সময়ের বাঙালি বাবুরা ঘোড়ায় টানা গাড়ি চড়ে বিদেশি আদবকায়দায় অভ্যস্ত হয়ে সোনাগাছি আসতেন। সোনাগাছি অঞ্চলের বেশ কিছু বাড়ি তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ টাইমে।
বর্তমানে বেশ কয়েকটি এনজিও এবং সরকারি সংস্থা এখানে এইডস সহ নানা যৌন রোগ প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি পালন করছে। বিশেষ করে অনেক ক্ষেত্রেই খরিদ্দাররা কন্ডোম ব্যবহার করতে অনীহা দেখান। তাই আগাম সকল যৌন রোগ নিয়ে সর্তক করা হয়েছে তাঁদের।
শোনা যায়, প্যারিসের বিখ্যাত যৌন কর্মীরাও কলকাতার এই সোনালি অঞ্চল বা সোনাগাছি-র সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন। কারণ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে ভারতের এই যৌনকর্মীরা বিট্রিশ আমল থেকেই যেহেতু এই কাজে নেমেছেন, তাই তাদের খবর পৌছে গিয়েছে পাশ্চাত্যেও।
সোনাগাছি প্রকল্প যৌনকর্মীদের সমবায়। এটি সোনাগাছির যৌনকর্মীদের মধ্য়ে কাজ করে এবং তাঁদের মধ্যে কন্ডোম ব্যবহার এবং মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সচেতনতা প্রচার করে।
বৃহস্পতিপবার সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশে বলেছে যে, যৌনকর্মীদের সম্মতি দেওযার বিরুদ্ধে পুলিশ হস্পক্ষেপ করতে পারে না। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট বলেছে পুলিশের ফৌজদারী ব্যবস্থা নেওয়াও উচিত নয়। এতে বলা হয় পতিতাবৃত্তি একটি পেশা । যৌনকর্মীরা আইনের অধীনে মর্যাদা ও সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী বলে জানানো হয়েছে।
মাঝে দীর্ঘ কোভিড বর্ষে রোজগার হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিল সোনাগাছির কর্মীরা। একে যে মারণ রোগ স্পর্শেই ছড়ায়, যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে, সেখানে কীকরে কাজ করবে যৌন কর্মীরা। যদিও সোনাগাছির যৌনকর্মীদের কোভিড ভ্যাকসিনেশন নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোভিডের অভিশাপ থেকে এখন মুক্ত সোনাগাছি।
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি সোনাগাছি প্রকল্প সহ পশ্চিমবঙ্গের ৬৫ হাজার যৌনকর্মী ও তাঁদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে। এই সংস্থা যৌনকর্মীদের ও তাঁদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে।
সোনাগাছির যৌনকর্মীরা এখন নানা সামাজিক এবং সাংষ্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। মূলত সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আার জন্য এই প্রয়াস। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি প্রাক্তন সেক্রেটারি তথা মেন্টর ভারতী দে জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে যৌনকর্মীদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাঁদের কাজকে পেশা হিসেবে মেনে নিয়ে, সম্মান দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এটাই বড় পাওনা বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এটা নিয়ে আইন হলে তিনি আরও বেশি খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন ভারতী দে।