দোলের সময় কলকাতার কাছে ধারে কোথাও ঘুরতে যেতে চান, রইল হদিশ
সামনেই রয়েছে দোলযাত্রা। সেই সময় অনেক অফিসেই ছুটি থাকে। তারপর দিন আবার হোলি। সেই দিনই অনেক অফিসও ছুটিই থাকে। আর হোলির পরদিনই রবিবার। ফলে টানা তিনদিন ছুটি পাওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। একঘেয়ে অফিসের ক্লান্তি কাটাতে এই ছুটিটাকে কাজে লাগাতে পারেন। আর বেরিয়ে পড়তেন পারেন কলকাতার খুব কাছে পিঠে থাকা কয়েকটি টুরিস্ট ডেস্টিনেশনে।
- FB
- TW
- Linkdin
আসলে অল্প কয়েকটা দিনের ছুটি (Holiday) থাকলেই অনেকেই ভাবতে থাকেন যে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। মাথায় কিছু না পাওয়ায় সোজা বেরিয়ে যান দীঘা (Digha) কিংবা মন্দারমণিতে। তবে কলকাতার (Kolkata) কাছে ধারে এমন অনেক জায়গাই রয়েছে যা খুবই অসাধারণ। আর সেই জায়গাগুলির কথাও হয়তো অনেকেই জানেন না। তাই এক ঝলকে দেখে নিতে পারেন সেই সব মনোরম টুরিস্ট ডেস্টিনেশনগুলিকে (Tourist Destination)। যা আপনার মন সতেজ করে তুলবে।
কলকাতা থেকে হেনরি আইল্যান্ডের (Henry Island) দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। এই জায়গা পর্যটকদের (Tourist Place) কাছে খুবই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বকখালির কাছে অবস্থিত হেনরি আইল্যান্ড আসলে একটি দ্বীপ। সমুদ্র ,জঙ্গ্ল, বিচ সবকিছু মিলে বেশ সুন্দর এখানে। সকালে মাঝিদের মাছ ধরা ও সমুদ্রের ধারে লাল কাঁকড়া বা নিত্যনতুন পাখির আনাগোনা অথবা সমুদ্রের (Sea Beach) ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখাসবই মন ভালো করে দেবে। এছাড়াও রয়েছে বোট রাইডিং এবং বন ফায়ারের ব্যবস্থা।
বারাসত (Barasat) নীলগঞ্জ বাজারের কাছেই রয়েছে এই বরতির বিল। যাঁরা প্রকৃতি দেখতে খুবই ভালোবাসেন তাঁরা এই এলাকায় যেতেই পারেন। আসলে জায়গাটি হল কয়েকটি বিল অর্থাৎ জলা জায়গা বা ডোবা নিয়ে। তবে একদমই ভাববেন না যে এই জায়গায় দেখার মতো কিছুই নেই। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, সূর্য অস্ত যাওয়ার এমনকী ভাগ্যক্রমে নৌকো চড়াও যদি কপালে জুটে যায় তাহলে তো কোনও কথাই নেই। শহরের মাঝে এই ধরনের এক টুকরো শান্তি মন ভালো করে দেবে। আসলে এই ডোবাগুলি চাষের জল ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। বহু কাল ধরে এই ডোবাগুলি এই ভাবে ব্যবহৃত হতে হতে অত্যন্ত সুন্দর হয়ে উঠেছে।
সুন্দরবন না পৌঁছেও সুন্দরবনের অনুভূতি যদি পেতে চান, তাহলে এই গোলপাতার জঙ্গল আপনার জন্য বেস্ট উইকেন্ড ডেস্টিনেশন। গোলপাতা গাছ, সুন্দরী গাছ ও নানা ম্যানগ্রোভে ভরা এই জঙ্গল উত্তর ২৪ পরগনার টাকিতে রয়েছে। এর পাশেই রয়েছে ইছামতী নদী আর তার ওপাশেই বাংলাদেশ। ইচ্ছা হলে নৌকায় চড়ে বাংলাদেশের খুব কাছ থেকে ঘুরেও আসতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে সঙ্গে পরিচয়পত্র রাখতে ভুলবেন না। কারনণ জঙ্গলের কিছু কিছু জায়গায় প্রবেশের জন্য তা প্রয়োজন হতে পারে। খুব বেশি দূরে নয়। শিয়ালদা থেকে লোকাল ট্রেনে করে টাকি রোড স্টেশন। আর সেখান থেকে অটো অথবা রিকশা করে গোলপাতার জঙ্গলে পৌঁছে যাবেন।
বর্ধমানের কাঁকসা থানার অধীনে গভীর জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম। অতীতের ঢেকুর নাম মুছে গিয়ে বর্তমান নাম গৌরাঙ্গপুর। জনবসতি নেই বললেই চলে। বয়ে গিয়েছে অজয়। ও-পারে কবি জয়দেবের কেন্দুলি, আর এ-পারে শাল-অর্জুন-শিরীষ এবং বুনো গাছগাছালিতে ভরা গা ছমছমে জঙ্গল। এমনই জঙ্গলের মাঝে রয়েছে ইতিহাস প্রসিদ্ধ এক বিশাল শিবমন্দির। শ’খানেক ফুট উঁচু মন্দিরের গায়ে জীর্ণ টেরাকোটার নকশা আজও বহন করে চলেছে অতীতের স্মৃতি। এই মন্দিরই ইছাই ঘোষের দেউল নামে পরিচিত। কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বরাবর পানাগড়। তারপর দার্জিলিং মোড় থেকে ডান দিকে ঘুরে সোজা ইলামবাজারের পথে। আর তার আগেই পড়বে বাঁ দিকের পিচ রাস্তা। এক সময় সেই পিচ রাস্তা শেষ হয়ে শুরু হবে লাল মাটির পথ, অজয় নদের ধার ধরে। পথ পৌঁছে যাবে ‘দেউল’-এ। ট্রেনেও যাওয়া যায়। নামতে হবে দুর্গাপুর স্টেশনে। সেখান থেকে মিনিবাসে মুচিপাড়া স্টপ। তারপর ট্রেকারে শ্যামরূপার মন্দির হয়ে দেউল।
শহর থেকে কিছুটা দূরে যদি নির্জন জায়গায় নদী ও সমুদ্রের ধারে নিজের কিছুটা অবসর যাপন করতে চান তবে অবশ্যই পিয়ালী দ্বীপ একটি অন্যতম জায়গা বলা যেতেই পারে। ছোটখাটো ফ্যামিলি পিকনিক বলুন, বা একান্তে আপনে বেড়ানোই বলুন সবকিছুতেই পিয়ালী দ্বীপ কিন্তু একটা যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ মূলক জায়গা। যে সব নদী সমুদ্রে গিয়ে মিশতে তা দেখতে পাবেন পিয়ালী দ্বীপে। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব বেশি নয়, চাইলে গাড়ি নিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টার একটি ছোট্ট জার্নি করে পৌঁছে যেতে পারেন পিয়ালী দ্বীপে। সেখানে অনেক রিসর্ট, হোটেল ছোট ছোট থাকা খাওয়ার জায়গা সব সময় পাওয়া যায়।
পশু পাখি জীবজন্তুর প্রতি আগ্রহ থাকলে তবে কলকাতা স্নেক পার্ক (Kolkata Snake Park) ঘুরে আসতে পারেন। ১৯৭৭ সালে এই পার্কটি নির্মিত হয়, এবং তখন থেকেই এটি শুরু। একদিনের ঘোরার জন্য যথেষ্ট সুন্দর একটি জায়গা। চারিদিকে গাছগাছালিতে ভরা এবং তার সঙ্গে দেখা পেতে পারেন একাধিক সাপের। কোন সাপ নেই সেখানে। চিড়িয়াখানা অনেকেই ঘুরতে যান, তাই এবার ছুটিতে স্বাদ বদল করতে কলকাতার এই স্নেক পার্কে ঘুরে আসতে পারেন।
আপনি যদি নিত্যান্তই প্রকৃতি প্রেমিক হন তবে চিন্তামনি পার্ক আপনার জন্য একেবারে সঠিক। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব খুব বেশি নয়। মাত্র ২২ কিমি। এই পার্কে আপনি বিভিন্ন রকম পাখির সমাহার দেখতে পাবেন। যেমন- কাঠঠোকরা, মাছরাঙা-সহ আরও অনেক পাখি। যা হয়তো কলকাতার মতো ব্যস্ত শহর থেকে হারিয়ে গিয়েছে। পাখির সঙ্গে এখানে অনেক ধরনের গাছ ও ফুলের সমাহারও দেখতে পাবেন। এই পার্কের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। পার্কটি খোলা থাকে সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।
হুগলি নদীর পাড়ে অবস্থিত কলকাতার মধ্যে নির্মল প্রাকৃতিক দৃশ্য যদি পেতে চান তবে নিশ্চয়ই শিবপুর ঘুরে আসতে পারেন। নির্মল প্রাকৃতিক আনন্দ আপনার একঘেয়ে জীবন কে এক নতুন স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তুলবে। এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন শিবপুর এর কাছে জগদীশচন্দ্র বসুর বোটানিক গার্ডেনে। আসলে রোজই তো শহরের কোলাহলের মধ্যে গা ভাসিয়ে দেন, একদিন যদি সেই কোলাহল থেকে দূরে থাকতে ইচ্ছে করে তাহলে এখানে যেতেই পারেন।
কাজের সূত্রে বজবজে গিয়েছেন অনেকবার। সেখানে থাকা আছিপুরে হয়তো অনেকেই যাননি। আসলে সুযোগও হয়নি। তাই এই ছুটিতে পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন আছিপুরে। আছিপুর দেশের এমন একটি জায়গা যার সঙ্গে পুরনো চিনা সংস্কৃতির ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে। শুধুমাত্র সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যই নয় এখানে আপনি বহু রকমের চিনা খাবারের স্বাদও গ্রহণ করতে পারেন। আছিপুরের জায়গায় জায়গায় রয়েছে চাইনিজ খাবারের সম্ভার। এছাড়াও এখানে রয়েছে বহু মন্দির। আছিপুর যাওয়ার সঠিক সময় হল চাইনিজ নিউ ইয়ার। কারণ সেই সময় এই জায়গা অসাধারণ সুন্দর হয়ে ওঠে। তবে তার আগে পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন এই জায়গায়।