রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে এই ৫টি জিনিস, যা ২৫ বৈশাখে সকলের জানা উচিত
- FB
- TW
- Linkdin
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব কবি হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত তবে তিনি বহু প্রতিভার মানুষ ছিলেন। একদিকে তিনি প্রথম ভারতীয় সাহিত্যের জন্য নোবেল জিতেছিলেন এবং অন্যদিকে একজন উপন্যাসিক যিনি একটি সম্পূর্ণ ঘরানার গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা প্রচলিত শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করে গড়ে উঠেছিল মুক্ত প্রকৃতিতে। আবদ্ধ ঘর যে প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারে না, তিনি তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
ঠাকুর একজন চিত্র শিল্পী যিনি বাংলা শিল্পকে আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী, যিনি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পরে ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ নীতির প্রতিবাদ করার জন্য নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর ১৫৯ তম জন্মবার্ষিকীতে, রবি ঠাকুর সম্পর্কে পাঁচটি আকর্ষণীয় তথ্য অকজন ভারতীয় হিসেবে অবশ্যই জানা উচিৎ-
জন্মদিন নিয়ে বিভ্রান্তি- গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে রবি ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন, ১৮৬১ সালে ৭ মে। তবে বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে এটি ছিল২৫ শে বৈশাখ। তবে প্রতি বছর ২৫ শে বৈশাখ যে মে মাসের ৭ তারিখের পড়ে এমনটাও নয়। তবে বাঙালীর ঐতিহ্যকে বজায় রেখে বর্তমান যুগেও বিশ্ব কবির জন্মদিন পালিত হয় ২৫ শে বৈশাখেই বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী।
চার দেওয়ালে আবদ্ধ প্রথাগত শিক্ষার প্রচলিত ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে রবি ঠাকুর তার নিজস্ব একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে তিনি চেয়েছিলেন মানবতা "জাতি এবং ভূগোলের সীমা ছাড়িয়ে প্রাচীণ ঐতিহ্য মেনে প্রকৃতির মুক্তাঙ্গনে বসে নেওয়া যায় প্রকৃত শিক্ষা। বিশ্বভারতীতে তিনি তাই খোলা মাঠে গাছের নিচে বসে পড়াতেন ছাত্র-ছাত্রীদের। এখনও সেখানে অনেক ক্লাস খোলা মাঠে গাছের নীচেই নেওয়া হয়।
১৯১২ সালে বাংলার বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে শুরু হয়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্র। নোবেল পুরস্কারের সঙ্গে প্রাপ্ত নগদ অর্থ বিশ্বভারতীকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করেছিলেন। এর জন্য বিশ্বজুড়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত যথা 'জন গণ মন' এবং 'আমার সোনার বাংলা' দুটোই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। এর পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত ১৯৩৮ সালে মূলত ঠাকুরের লেখা একটি বাংলা গানের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল। এটি সিংহলিতে অনুবাদ হয়েছিল এবং ১৯৫১ সালে যাশ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত হিসাবে গৃহীত হয়েছিল।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুরের এক শিক্ষার্থী নাম আনন্দ সমরাকুন, উনি রবি ঠাকুরের লেখা নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা- গানটি সিংহলী ভাষায় অনুবাদ করেন। যা পরবর্তীকালে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। রবি ঠাকুর একজন বাঙালি ব্যক্তিত্ব যিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা।
রবি ঠাকুর একাধারে মহাত্মা গান্ধী এবং পাশাপাশি অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক ছিলেন তা আকর্ষণীয়। ১৯১৫ সালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে রবি ঠাকুরই 'মহাত্মা' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে ঠাকুর গান্ধীর প্রশংসা করলেও তিনি কিছু বিষয়ে তাঁর সঙ্গে মতভেদ করেছিলেন।
১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে চারবার রবি ঠাকুর অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। দেখা করেছিলেন আইনস্টাইনের সঙ্গেও। নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবি ঠাকুর আইনস্টাইনকে প্রথম সাক্ষাতের পরে লিখেছিলেন: '' তাঁকে নিয়ে কোনও কঠোর কিছুই ছিল না - কোনও আচ্ছন্নতা ছিল না। তিনি আমাকে এমন এক ব্যক্তি বলে মনে করেছিলেন যিনি মানুষের সম্পর্কের মূল্যায়ণ করতে জানে এবং তিনি আমার প্রতি প্রকৃত আগ্রহ এবং বোধগম্যতা দেখিয়েছিলেন। "