- Home
- World News
- Pakistan News
- ড্রাগনের বন্ধুত্ব কতটা ভয়ানক, কেন পাকিস্তানে ৬২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বেজিং
ড্রাগনের বন্ধুত্ব কতটা ভয়ানক, কেন পাকিস্তানে ৬২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বেজিং
- FB
- TW
- Linkdin
ইতিহাস
পাকিস্তানে চিনের লগ্নি শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে। গদর-এর ছোট্ট মৎস বন্দরকে বেজিং বড় সমুদ্র বন্দরে পরিণত করতে চেয়েছিল। সেই শুরু হয়েছিল। তারপর ২০১৪ সালে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে শি জিনপিং সরকার ৪৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল। যা চিন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর বা সিপিইসি নামে পরিচিত। গদর সমুদ্র বন্দর থেকে চিনের শিয়াং প্রদেশের কাশগার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিমান বন্দর, রেলপথ, হাইওয়ে - এইরকম বেশ কিছু পরিকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে চিন। ২০১৮ সালের মধ্যে এই ইকোনমিক করিডোরে চিনা বিনিয়োগের পরিমাণ পৌঁছেছে ৬২ বিলিয়ন ডলারে।
এতে পাকিস্তানের কী পাকিস্তানের সুবিধা?
চিনের এই প্রস্তাবে পাকিস্তানের রাজি না হওয়ার কোনও কারণ ছিল না। মাল্টি-বিলিয়ন এই বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা ব্যাপক অর্থনৈতিক বিকাশের প্রত্যাশা করছিল। তা পূরণ যে হয়নি তা বলা যাবে না। ২০০১ সালে যেখানে তাদের জিডিপি ছিল ৭২ বিলিয়ন ডলার সেখান থেকে ২০১৮ সালে তাদের জিডিপি পৌঁছে গিয়েছে ৩১৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে। সেইসঙ্গে চিনের মতো বিশ্বের অন্যতম শক্তির মিত্রতাও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের কুনৈতিক সুবিধা দেয়। দুই দেশের মধ্যে ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক বন্ধন বেড়েই চলেছে।
চিনের এত লগ্নির কারণ কী?
আপাত দৃষ্টিতে দেখলে পাকিস্তানের মতো পিছিয়ে পড়া অর্থনীতির দেশে পরিকাঠানোর উন্নয়নে এত অর্থ লগ্নি করাটা চিনের পক্ষে বোকামি। কিন্তু, সিপিইসি পাকিস্তানের চেয়ে চিনের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থনৈতিক করিডোর তৈরির ফলে চিন বেশ কিছু কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে।
আরব সাগরে নৌঘাঁটি
প্রথমেই বলে রাখা যাক গদর বন্দরের কথা। গদর বন্দরের উন্নয়নে চিন যে টাকা ধার দিয়েছিল, তা শোধ করতে পারেনি পাকিস্তান। পরিবর্তে তারা ৪০ বছরের জন্য লিজে বন্দরের কর্তৃত্ব দিয়ে দিয়েছে চিনকে। অর্থাৎ, আরব সাগর অঞ্চলে পাকিস্তানে চিনের একটি নৌবহর রাখার কৌশলগত বন্দর এসে গেল। যা চিনের সামুদ্রিক সিল্ক রুট পরিকল্পনার একটি অংশ।
মধ্যপ্রাচ্যের তেলের সহজ সরবরাহ
তবে এই করিডোরের মূল গুরুত্ব হল মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোলিয়াম রফতানিকারী দেশগুলির সঙ্গে চিনের যোগাযোগ সহজ হওয়া। সারা বিশ্বের মোট খনিজ তেল রফতানির ৬১ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলি। বিশ্বের খনিজ তেল মজুতের ৮০ শতাংশ রয়েছে এই অঞ্চলেই। ওপেক দেশগুলির কাছ থেকে তেল কিনে দেশে আনতে গেলে বিতর্কিত দক্ষিণ চিন সাগর দিয়ে সেই তেল দেশে আনতে হত বেজিং-কে। একে দক্ষিণ চিন সাগরের অধিকার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তার উপর এই পথটি অত্যন্ত দীর্ঘ। এখন সিপিইসির ফলে গদর বন্দরের মাধ্যমে ইকোনমিক করিডোর দিয়ে অত্যন্ত সহজেই সেই তেল দেশে আনতে পারবে চিন।
পূর্বাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন
এই পথে তেল এলে শুধু যে ব্যয়ের দিক থেকেই লাভবান হবে বেজিং তা নয়, এই পথে দেশে মধ্যপ্রাচ্যের তেল আসলে, দেশের পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে বলে মনে করে জিনপিং প্রশাসন। চিনের মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই বসবাস করেন দেশের পূর্বাংশে। পশ্চিমাঞ্চলে কোনও সমুদ্রপথও নেই এবং দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৬ শতাংশ এদিকে থাকেন। গদর বন্দরের মধ্য দিয়ে সিপিইসি ধরে পশ্চিম চিন দিয়ে ওপেক দেশের তেল এলে সরবরাহের পথটিই ছোট হবে না, পশ্চিম চিনের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতিও হবে।
চিনা কর্মসংস্থান
এই ইকোনমিক করিডোর গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে চিনা পরিকাঠামোগত উন্নয়নের সংস্থাগুলি প্রচুর কাজের বরাত পাচ্ছে। অর্থাৎ ঘুরপথে অর্থনৈতিক করিডোর থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নও হচ্ছে চিনের।
এতে ভারতের বিপদ কোথায়?
গদর সমুদ্র বন্দর থেকে চিনের শিয়াং প্রদেশের কাশগার পর্যন্ত যে অঞ্চলে চিন ও পাকিস্কান এই ইকোনমিক করিডোর তৈরি করছে, তার মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের অংশও রয়েছে। এই অংশে সিপিইসি প্রকল্প হওয়া মানে জায়গাটির উপর ভারতের অধিকারের দাবি মুছে যাওয়া।
পাকিস্তানের বিপদ কোথায়?
পাকিস্তান বর্তমানে দেশের একটানা অর্থনৈতিক উন্নয়নের রেখা দেখে বুঝতেও পারছে না ড্রাগনের সঙ্গে বন্ধুত্বে বিপদ কোথায় লুকিয়ে রয়েছে। ঘটনাচক্রে সম্প্রতি সিপিইসি-তে কাজ করা চিনা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে পাকিস্তানে নামাজ পড়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক আলেম বলেছেন পাকিস্তান যে চিনের বাপের জায়গা নয়, তা বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু, যে বিপুল লগ্নির জালে পাকিস্তানকে বেঁধে ফেলেছে বেজিং, তাতে দাসত্ব রা ছাড়া পাক সরকারের কিছু করার াছে বলে মনে হয় না।