- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- বাংলা দখল করতে বিজেপির দরকার মাত্র ১৯ আসন, তাতেই কি আতঙ্কের প্রহর গুনছে তৃণমূল কংগ্রেস
বাংলা দখল করতে বিজেপির দরকার মাত্র ১৯ আসন, তাতেই কি আতঙ্কের প্রহর গুনছে তৃণমূল কংগ্রেস
বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যে রাজ্যে ক্রমশ চড়ছে রাজনৈতিক পারদ। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি ২০০-র বেশি আসন পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরদিকে এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপিও দাবি করছে, 'ইসবার দুশো পার'। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলই যে এই আত্মবিশ্বাস দিয়েছে পদ্ম শিবিরকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসভা নিরর্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফলেই পরিষ্কার বাংলার মসনদ দখলের খুব কাছে রয়েছে বিজেপি। যদিও পুনরায় ক্ষমতা দখলে আত্মবিশ্বাসী শাসক দলও।
- FB
- TW
- Linkdin
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৪২ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি, বিজেপি ১৮টি, কংগ্রেস ২টি ও খাতা খুলতে পারেনি বামেরা। কিন্তু বিজেপির উত্থান চমকে দিয়েছিল সকলকে। ২০১৪ সালে ২টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। সেখান থেকে ১৬টি আসন বাড়ায় তাড়া। বেশ কয়েকটি আসনে খুব কম ব্যবধানে হারে বিজেপি প্রার্থীরা। অপরদিকে ৩৪ আসন থেকে নেমে ২২ আসনে নেমে আসে শাসক দল।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে ২১১ আসন পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তারপরও একাধিক উপনির্বাচন জয় ও বিরোধী বিধায়কদের দলে যোগদান করিয়ে শক্তি আরও বাড়িয়েছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটের নিরিখে সেই ফলাফল ১৫৮তে নেমে আসায় স্পষ্ট যে বাংলায় ক্রমশ ঢিলে হচ্ছে শাসক দলের রাশ। ঘাসফুল সরিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছে পদ্ম।
ভোট শতাংশের নিরিখেও রাজ্যে ব্যাপক সাফল্য এসেছে পদ্ম শিবিরের ঝুলিতে। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে পেয়েছিল ১০ শতাংশ ভোট। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তা একলাফে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশে নিয়ে যায় পদ্ম শিবির। তৃণমূল ভোট পায় ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ দুই দলের মধ্যে ভোট শতাংশের ফারাকও মাত্র ৩ শতাংশ।
গ্রাম বাংলায় শাসক দলের ভোট ব্যাঙ্কেও থাবা বসিয়েছে পদ্ম শিবির। শুধু শাসক নয়, বাম-কংগ্রেসের ভোটের একটা বিপূল অংশ ঝুঁকেছে বিজেপির দিকে। কারণ লোকসভা ভোটে বিজেপির বিজয়রথকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে গ্রামীণ লোকসভা আসনগুলি। বাংলায় গ্রামীণ লোকসভা কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত ২৭টি আসন। এর মধ্যে ১৫টিতেই জয় পেয়েছে বিজেপি।
অন্যদিকে লোকসভা ভোটের নিরিখে রাজ্যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসন ১২টি। যার মধ্যে ৯টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ডায়মন্ডহারবার, মথুরাপুর, জয়নগর, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ, উলুবেড়িয়া, বসিরহাটের মতো সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে লোকসভা ভোটে তেমন দাগ কাটতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু মালদহ উত্তর ও দক্ষিণ আসনে সংখ্যা লঘু ভোটেও থাবা বসিয়েছে বিজেপি। সেখানে একটি আসন পেয়েছে বিজেপি ও একটি আসন খুব ব্যবধানে হারের মুখ দেখতে হয়েছে পদ্ম শিবিরকে।
কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যের সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতেও নিজেজের সংগঠন অনেক মজবুত করেছে পদ্ম শিবির। তারউপর এবার ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি ও মীম সহ একাধিক সংখ্যালঘু আঞ্চলিক দলকে নিয়ে নির্বাচনে আলাদা লড়তে চলেছে। ফলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক দলের অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও এক আতঙ্কের কারণ উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গল মহল। উত্তরবঙ্গে লোকসভা ভোটে একটিও আসন জিততে পারেনি শাসক দল। সেখানে একচ্ছত্র একাধিপত্য বিস্তার করেছে পদ্ম। জঙ্গলমহল মমতা অন্যতম ভোটব্যাঙ্ক ছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামে শক্তি ব্যাপক বৃদ্ধি করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।...
লোকসভা ভোট পরবর্তী সময়ে রাজ্য জুড়ে আরও শক্তি বাড়িয়েছে বিজেপি। আটটি বিধানসভা উপনির্বাচনের মধ্যে চারটিতেই জয়ী হয়েছে বিজেপি। এছাড়া শাসক দল থেকে একাধিক শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্ব বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদান শুধু দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম নয়, রাজ্য জুড়ে বিজেপির ভিত আরও শক্ত করবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। ভাঙন এখনও অব্যাহত রয়েছে শাসক দলে।
ফলে ২১-এর বাংলা দখলের লড়াইয়ে মুখে আত্মবিশ্বাসের কথা বললেও, রাজনৈতিক মহলের মতে বেশ চাপে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। দুর্নীতি, দলে ভাঙন, ভোট ব্যাঙ্কে ধস, দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দেবে তৃণমূলের কাছে। অপরদিকে, বাংলা বিজেপির জনপ্রিয়তা যেভাবে ক্রমশ বাড়ছে, মিটিং মিছিলে জনতার ঢল নামছে তাতে বাংলা দখলের স্বপ্ন আরও চওড়া হচ্ছে পদ্ম শিবিরের।