- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে তৃণমূলের - ২৯৪ আসনেই মুখে কুলুপ, নয়তো ফিসফিস
পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে তৃণমূলের - ২৯৪ আসনেই মুখে কুলুপ, নয়তো ফিসফিস
শিয়রে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। কারা জিতবে ভোটে, কাকে ভোট দেবেন - নির্বাচনের আগে এই নিয়ে আলোচনা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু, বাংলায় এখন এইসব প্রশ্ন করলে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেরই মানুষ তাঁদের পছন্দের দল বা নেতা এবং ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে হয় মুখে কুলুপ এঁটে থাকছেন, অথরা বলছেন ফিসফিস করে। আর এই নীরবতা এবং ফিসফিসানির অর্থ ভোটাররা ক্ষমতার পরিবর্তন চাইছেন, এমনটাই মনে করছেন ভোট সমীক্ষকরা। এখান থেকেই তাঁরা বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের পায়ের তলা থেকে ক্রমে মাটটি সরছে। আর ফোকটে তার লাভের গুড় খেতে চলেছে কোনও বিরোধী দল বা জোট। কিন্তু, কেন দুর্বল হচ্ছে তৃণমূল? কারা পাবে তার লাভ? কী বলছেন ভোট সমীক্ষকরা?
- FB
- TW
- Linkdin
পার্টি থেকে ব্যক্তি
গত ১০ বছরে বাংলার রাজনীতির একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে। বাম আমলে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ছিল পার্টি কেন্দ্রীক। আর তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে তা হয়ে উঠেছে ব্য়ক্তি কেন্দ্রিক। পঞ্চায়েত স্তরের বাম নেতাদের বেশিরভাগই মূলত ছিলেন শিক্ষক সম্প্রদায়ের। কিন্তু, তৃণমূলের আমলে যারা রাজনীতির খ্যাতির আলোয় এসেছেন, বেশিরভাগই স্থানীয় ঠিকাদার, ব্যবসায়ী এবং এলাকার দাপুটে ব্যক্তি। তাদের কারণেই বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি পার্টি-পরিচালিত থেকে ব্যক্তিত্বকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। তাই এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষণে গুরুত্ব পায়, জঙ্গলমহলে শুভেন্দু অধিকারী, দার্জিলিং-এ বিমল গুরুং, মুসলমানদের মধ্যে আব্বাস সিদ্দিকীর প্রভাব। নেতাদল বদলালে কর্মীরাও দল ছাড়ছেন। দল থেকে ব্যক্তি - বাংলার রাজনীতির এই পরিবর্তনটি বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের হতাশার পরিচয় দেয়। ক্ষমতাসীনকে তারা সরিয়ে দিতে চায়।
সন্ত্রাসের রাজত্ব
প্রথম, রাজ্য জুড়ে তৃণমূল বিরোধী মনোভাব দেখা গিয়েছিল ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর। সিপিএমের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ - সকলেই বিরোধী দলের প্রার্থীদের কীভাবে মনোনয়ন দিতে দেওয়া হয়নি, ভোট দিতে দেওয়া হয়নি - তা বর্ণনা করেছিলেন। প্রতিরোধকারীদের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন এবং ভুয়ো পুলিশি মামলা দায়েরের ভয়াবহ ঘটনার কথা জানিয়েছেন বহু মানুষ। পুলিশ ক্ষমতাসীন দলেরই অংশ হিসাবে কাজ করেছিল বলে অভিযোগ। এই সন্ত্রাসের অভিযোগ ছিল বাম সরকারের বিরুদ্ধেও, কিন্তু তৃণমূল আমলে তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
দুর্নীতিরাজ
রাজ্যে তৃণমূল বিরোধী হাওয়া ওঠার আরেকটি কারণ হ'ল দুর্নীতিরাজ এবং একচেটিয়াকরণ। বাম শাসনামলের শেষ দিকে প্রশাসনে দুর্নীতি বাসা বেধেছিল, তবে তার ভাগ পেতেন সাধারণ মানুষও। কারণ তাঁদেরও বড় অংশ ছিলেন পার্টির সঙ্গে। কিন্তু, তৃণমূল আমলে পার্টটি পিছনে সরে গিয়ে ব্যক্তি আগে এগিয়ে এসেছে। স্থানীয় নেতাদের বেশিরভাগই ঠিকাদার, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই লুণ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সম্পদ সবই নেতাদের ঘরে গিয়েছে, এক ছটাকও পাননি সাধারণ মানুষ। দলের কর্মী হয়েও বঞ্চিত হতে হয়েছে স্থানীয় নেতাদের একচেটিয়া ব্যবস্থার কারণে। আমফান পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের দুর্গ হিসাবে বিবেচিত উ. চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দ. ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে এই দুর্নীতি ও নেতাদের একচেটিয়া ব্যবস্থা আরও বেশি করে ধরা পড়েছে।
বিজেপির সঙ্গে সাবঅল্টার্ন জনতা
একথা সকলেই জানে, বাংলার নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে গ্রাম বাংলা। আর তারমধ্যে দলিত, তফসিলি জাতি, উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। আর এই মানুষগুলোই তৃণমূলের সময়ে সবচচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের নিত্য়দিনের দুর্নীতি, বাংলার গ্রামে গ্রামে 'ক্ষমতাসীন দল বনাম সকলে' এমন রাজনৈতিক মেরুকরণের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সিপিএম এবং কংগ্রেসের সংগঠন এখন দুর্বল। নেতৃত্বের আর সেই ক্যারিশমা নেই, যা গ্রামের যুব সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করবে, ভরসা দেবে। এই অবস্থায়, মোদি ফ্যাক্টরকে বিকল্প হিসাবে দেখছে গ্রামবাংলা। তাদের বঞ্চনার ক্ষোভের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদের সূক্ষ্ম টানের সমন্বয়ে বিজেপির পক্ষে হাওয়া তৈরি হয়েছে। তৃণমূল বিরোধী মনোভাবের ফসল তাই গেরুয়া পক্ষই ঘরে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।