নন্দীগ্রাম মহারণ - টান টান উত্তেজনা, একেবারেই স্বস্তিতে নেই মমতা
- FB
- TW
- Linkdin
নন্দীগ্রামের লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর কাছে এখন প্রেস্টিজ ফাইট। এই নন্দীগ্রামেই ঐতিহাসিক জমি আন্দোলন হয়েছিল। যে আন্দোলনে ভর করে, ৩৪ বছরের বাম সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই, আন্দোলনে মমমতার হয়ে মাঠে নেমে যুদ্ধ করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। যার জোরে পরবর্তীকালে শুভেন্দু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সেনাপতিদের একজন হয়ে উঠেছিলেন। তবে, তারপর থেকে হলদি নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। একসময়ের সহযোদ্ধারা এখন পরস্পরের ভয়ঙ্কর শত্রু।
নন্দীগ্রামে শেষবারের নির্বাচনে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ২০১৬ সালে তাঁর পক্ষে ভোট পড়েছিল ৬৭.২০ শতাংশ। তবে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বলছে, সেই সব ভোটই তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কাজেই, এবার সেই ভোট তিনি পাবেন না। তবে নন্দীগ্রামের 'ভূমিপুত্র' শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকে বলে আসছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি ৫০,০০০ ভোটে হারাবেন।
বস্তুত, 'ভূমিপুত্র' এবং 'বহিরাগত' এবার নন্দীগ্রামের লড়াইয়ে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ দুই শব্দবন্ধ হয়ে উঠেছে। নিজেকে ভূমিপুত্র দাবি করে মমতাকে বহিরাগত বলে দেগে দিয়ে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিলেন শুভেন্দু। এতে করে তৃণমূলের বহিরাগত রাজনীতিটাই গুলিয়ে গিয়েছে মানুষের মনে। মুখ্যমন্ত্রী বহিরাগত না হলে প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বহিরাগত কেন - প্রশ্ন উঠছে মানুষের মনে।
সত্যি বলতে, লড়াইয়ের ময়দানটা শুভেন্দু অধিকারীর হাতের তালুর মতো চেনা। জমি আন্দোলনের দিনগুলি থেকে নন্দীগ্রামের গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন তিনি। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু, নন্দীগ্রামকে নিয়ে কোনওদিনই সেভাবে ভাবিত ছিলেন না। নন্দীগ্রামের সব এলাকা এখনও পর্যন্ত চেনেন না তিনি। এমনকী মঙ্গলবারও মঞ্চ থেকেই একাধিকবার বিভিন্ন জায়গার নাম বলতে গিয়ে স্থানীয় নেতাদের সাহায্য় নিতে হয়েছে তাঁকে। মমতার দাবি, তাঁকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে দেননি শুভেন্দু-শিশির অধিকারীরা। কিন্তু, আসল কথা হল শুভেন্দুর মতো বিশ্বস্ত সেনাপতির হাতে নন্দীগ্রামকে দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন তিনি। এখন ঘুরে ঘুরে মন্দির-মাজার খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি।
হ্যাঁ, এইবারের নন্দীগ্রামের ভোট মন্দির-মাজারেরও। শেষ লগ্নে মেরুকরণের চাপ আরও বাড়িয়েছে বিজেপি। মমতার বিরুদ্ধে তুষ্টিকরণের অভিযোগ থেকে সরাসরি 'পাকিস্তানি', 'বেগমকে হারাবো'র মতো কথা শোনা যাচ্ছে শুভেন্দু অধিকারীর মুখে। নন্দীগ্রামের ২,৭৫,০০০ ভোটারের মধ্যে ৭৫,০০০-এর মতো মুসলিম ভোট রয়েছে, প্রায় ৩০ শতাংশ। স্পষ্টতই, বাকি ২,০০,০০০ ভোটকে বিজেপির পক্ষে সংহত করার লক্ষ্য নিয়েছেন শুভেন্দু। মুসলিম ভোট গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষেই গিয়েছে। কিন্তু, শুভেন্দুর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে মমতা এখন মঞ্চ থেকে প্রমাণ করতে চেষ্টা করছেন তিনি মমতাজ বেগম নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মীনাক্ষি মুখোপাধ্য়ায়ের সমর্থনে আব্বাস সিদ্দিকীর জনসভার ভিড় কিন্তু বলছে মুসলিম সমাজ মমতার এই পাল্টি পছন্দ করছে না।
অধিকারী পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির ময়দানে রয়েছে। সেই পরিবারেরই ছেলে শুভেন্দু। তাঁর বাবাও দল ছেড়ে ছেলের পাশেই এসে দাঁড়িয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করার ফলে, পূর্ব মেদিনীপুরে তাদের প্রভাব ভালোই। ২০১১ সাল থেকে এই নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল তার সংগঠন বাড়িয়েছে ঠিকই, কিনতু, তা হয়েছিল অধিকারীদের হাত ধরেই। কাজেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যারিশমা থাকলেও শুভেন্দুর দলবদলে সাংগঠনিকভাবে তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিজেপি নেতাকে মমতার ফোন করার ঘটনা তারই প্রমাণ।
গত শনিবার, বিজেপি এই অডিও টেপ প্রকাশ করেছিল। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রলয় পাল নামে এক স্থানীয় বিজেপি নেতা ফোন করে নন্দীগ্রামে জেতার জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন। ওই নেতা একসময় তৃণমূলেই ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন আগেই তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। প্রলয় পাল অবশ্য মমতার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনা, পরাজয়ের ভয়ে মমতার ঘাবড়ে যাওয়ার প্রতিচ্ছবি বলে দাবি বিজেপির। সত্যি কথা বলতে এই ঘটনা অন্তত পরিষ্কার বলে দিচ্ছে লড়াইটা একেবারে টানটান। মমতা একেবারেই স্বস্তিতে নেই।