- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- ১ এপ্রিল সুন্দরবনে আসতে পারে 'রাজনৈতিক আমফান' - টিকবে তো তৃণমূলের দুর্গ, দেখুন
১ এপ্রিল সুন্দরবনে আসতে পারে 'রাজনৈতিক আমফান' - টিকবে তো তৃণমূলের দুর্গ, দেখুন
প্রথম দফা ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। ৩০টি আসনের মধ্যে তাঁরা ২৭টিতে জয়ী হবেন বলে দাবি করেছেন অমিত শাহ। তা তিনি দাবি করতেই পারেন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে প্রথম দফায় ভোট হওয়া অনেকগুলি বিধানসবা কেন্দ্রেই এগিয়েছিল বিজেপি। তবে দ্বিতীয় দফায় ভোট ঢুকছে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটটি হিসাবে পরিচিত দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায়। এখানে কী বিজেপি সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারবে?
| Published : Mar 29 2021, 09:18 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
আট দফা নির্বাচন পর্বের দ্বিতীয় দফায়, আগামী ১ এপ্রিল ভোটগ্রহণ হবে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ৪টি আসনে - গোসাবা, কাকদ্বীপ, সাগর এবং পাথরপ্রতিমা। ২০১১ সাল থেকে চারটি বিধানসভা আসনেই জিতে আসছে তৃণমূল। এমনকী ২০১৯ সালে রাজ্য রাজনীতির অনেক এলাকার রং পাল্টে গেলেও এই এলাকা মমতার উপরই ভরসা রেখেছিল। মথুরাপুর ও জয়নগর লোকসভা কেন্দ্র, যার মধ্যে এই চারটি বিধানসভা এলাকা পড়ে, সেই দুই কেন্দ্রে দুই-তিন লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল।
শুধু তাই নয়, সাংগঠনিক দিক থেকেও অনেক এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাম আমল থেকেই এই অঞ্চলে তৃণমূলের সংগঠন অত্যন্ত দৃঢ়। ব্লকে ব্লকে তাদের কার্যালয় রয়েছে। এমনকী, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার রাজ্যব্যাপী স্রোতের মধ্যেও এই জেলায় বিশেষ শক্তি হায়ারনি তৃমমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতোই এখানেও বিজেপির সংগঠন দুর্বল শুধু নয়, বলা যেতে পারে একেবারেই শিশু। সবে হাঁটার চেষ্টা করছে।
এসব সত্ত্বেও এই জেলায় তৃণমূলের এই দীর্ঘকালীন আধিপত্যে দাঁত ফোটানোর স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। তার কারণ, ২০২০ সালের মে মাসের ঘূর্ণিঝড় আমফান এবং তার পরবর্তী ঘটনাক্রম, আগামী ১ এপ্রিল ভোট মেশিনেও রাজনৈতিক আমফান তুলবে বলে মনে করছে তারা। যে আমফানে এবার উড়ে যাবে তৃণমূলের গড়।
আমফান সঙ্কটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির অন্যতম দক্ষিণ ২৪ পরগণা। উপকূলীয় অঞ্চলের বহু বাড়ির বাসিন্দাদেরই ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর আশ্রয় নিতে হয়েছিল রাস্তায়। কিছু বাড়ি টিকে গিয়েছিল জরাজীর্ণ অবস্থায়। এই ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে তাদের মাথার উপর নেমে এসেছিল আরেক বিপর্যয়ের খাড়া, যা ম্যানমেড। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে আমফানের সময় ব্যাপক ত্রাণ সামগ্রীর লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত অভাবীর পরিবর্তে মিষ্টিমেয় কিছু নেতার ঘরেই ঢুকেছিল চাল থেকে ত্রিপল, এমনটাই অভিযোগ সাধারণ মানুষের। এরসঙ্গে সামগ্রিকভাবে এলাকার উন্নয়ের অভাবের কারণে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তার জন্য গত কয়েক মাস ধরে হাওয়া তৃণমূলের দিক থেকে ঘুরছে।
তৃণমূলের এই দুর্নীতির খতিয়ান যেমন বড় করে তুলে ধরছে বিজেপি, তেমনই মানুষকে টানছে তাদের সংকল্প পত্রে বলা বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পও। এই এলাকার একটা বড় অংশের মানুষ মৎসজীবি। বিজেপির ইস্তেহারে প্রতি বছর মৎসজীবিদের জন্য ৬,০০০ টাকা করে যে সবায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা তারা পছন্দ করছেন। মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে চিকিত্সা, কন্যা সন্তানের বিনামূল্যে পড়াশোনা, বিবাহের আগ পর্যন্ত নগদ ডোল সরবরাহ করার মতো প্রতিশ্রুতিগুলি টানছে মহিলা ভোটারদেরও। সেই সঙ্গে আগ্রহ তৈরি হয়েছে পিএম কিষাণ সম্মান নিধি, আয়ুষ্মান ভারত-এর মতো প্রকল্পগুলি নিয়েও।
আমফানের সময় ত্রাণ বন্টনে যে দুর্নীতি হয়েছে তা মানছেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বও। তবে সবই নেতা-নেত্রীদের ঘরে গিয়েছে, তা মানছেন না তাঁরা। তাঁদের মতে অনেকেই ত্রাণ পেয়েছেন। কিন্তু, সমস্যা হল, বেশ কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা সত্যি-সত্যিই বঞ্চিত হয়েছেন এবং শাসক দলের উপর খুবই ক্ষুব্ধ। আর তাই, সেই বঞ্চনার কথা নিয়ে তাঁরা সোচ্চার। তাতে করে তৃণমূলের ভাবমূর্তি প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে।
আর এই বিষয়টা বুঝেই এই এলাকায় প্রচারে দারুণ জোর দিচ্ছে বিজেপি। রবিবারই, দলবদলু বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী পাথরপ্রতিমা এবং সাগর আসনে প্রচার করতে গিয়ে তৃণমূলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জনগণের উদ্দেশ্যে। এছাড়া এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ - তিন তিন জন বিজেপির তারকা প্রচারক এই সুন্দরবনে প্রচার করেছেন, অমিত সুন্দরবনকে আলাদা জেলা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। কাজেই আমফানের মতো ঝড় উঠতে পারে ১ এপ্রিলও। টিকবে তো তৃণমূলের দুর্গ?