- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- কুরুক্ষেত্র নন্দীগ্রাম, শুভেন্দুর পাল্টা আক্রমণে নিজের জালেই জড়িয়ে যাচ্ছেন মমতা
কুরুক্ষেত্র নন্দীগ্রাম, শুভেন্দুর পাল্টা আক্রমণে নিজের জালেই জড়িয়ে যাচ্ছেন মমতা
- FB
- TW
- Linkdin
বহিরাগত
বিজেপি দলের পক্ষে তাঁকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে 'বহিরাগত' আক্রমণ শুরু করে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলারই এক জায়গায় বহিরাগত বলা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে, বিষয়টা হল, এই অস্ত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তুলে দিয়েছেন বিজেপির হাতে। যে যুক্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা বাংলায় বহিরাগত, সেই একই যুক্তিতে মমতা কিন্তু নন্দীগ্রামে বহিরাগত।
বিশ্বাসঘাতক
শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি বিশ্বাসঘাতক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁকে রাজনীতির মূল আঙিনায় তুলে এনেছেন, এখন তিনি দুঃসময়ে পিঠে ছুড়ি মেরেছেন। তবে শুভেন্দু অধিকারীর পাশ থেকে তারপরেও কিন্তু মানুষ সরে যাননি। তাঁর প্রতিটি সভা ও রোড শো-তে উপচে পড়ছে ভিড়। শুধু তাদের রঙটা বদলে গিয়েছে, ঘাসফুল ছেড়ে সেই জনতার হাতে এখন গেরুয়া পতাকা। বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ ন্যায্য না অন্যায্য় সেই বিতর্কে না ঢুকে বলা যায়, নির্বাচনের আগে মুখোমুখি লড়াইয়ে এই আক্রমণের আর ধার নেই।
মানুষের মনে বহিরাগত?
শুভেন্দু অধিকারী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে বহিরাগত ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়ার পরই নন্দীগ্রামে বেশ কিছু পোস্টার-ব্যানারে বহিরাগত কথাটি দেখা গিয়েছে। তেরঙ্গা সেই পোস্টারে লেখা ছিল, নন্দীগ্রাম মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রকে চায়, বহিরাগত প্রার্থী চায় না। তৃণমূল কংগ্রেস, ওই পোস্টার বিজেপির পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করলেও, সেখানকার স্থানীয় কিছু মানুষ কিন্তু দাবি করেছেন, এই পোস্টারের অর্থ নন্দীগ্রামের মানুষের মনে তিনি বহিরাগত হয়ে গিয়েছেন। বস্তুত মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগের দিনই তিনি সভা থেকে মানুষকেই প্রশ্ন করেছেন, তাঁকে জনতা চায় কি না। তাহলে কি তাঁর মনেও প্রশ্ন উঠছে?
দুর্নীতিপরায়ণ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মুখে না বললেও, তাঁর দলের নেতারা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বারবারই দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। নারদা কাণ্ডের ফুটেজে তাঁর মুখ দেখা গিয়েছিল। সেই ফুটেজ সত্যি কি না, তাই নিয়ে খোদ তৃণমূলই প্রশ্ন তুলেছে। তাছাড়া, ওই ভিডিও সামনে আসার পরও নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে ২০১৬ সালের বিধানসভায় জিতেছিলেন শুভেন্দু। কাজেই, নারদ কাণ্ডের কাদা, তাঁর গায়ে কোনওভাবেই লাগাতে পারবে না তৃণমূল। এছাড়া কিন্তু, শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ ওঠেনি।
আসেননি ৫ বছর
শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করছেন, ভোটের সময়ই মমতা নন্দীগ্রামে আসেন। বাকি সময় তাঁকে নন্দীগ্রামে দেখা যায় না। এক সভা থেকেই এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, নন্দীগ্রামের দায়িত্ব তাঁর হয়ে সামলাতেন শুভেন্দু। কাজেই তাঁর আসাটা বড় কথা নয়। শুভেন্দু কাজ করেননি। তবে, মজার বিষয় হল, বীধ্বংসী আমফানের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মণ্ড হারবার গিয়েছিলেন। একইরকম বিধ্বস্ত হয়েছিল নন্দীগ্রাম। সেখানে পা রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেত্রী
প্রথম জনসভা থেকেই নিজেকে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেত্রী বলে জাহির করেছেন মমতা। আন্দোলনের ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়েছেন। মমতাই যে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেত্রী ছিলেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তবে, তাঁর হয়ে মাঠে নেমে কাজ করতেন শুভেন্দু অধিকারীই। তাই, শুভেন্দু পাল্টা দাবি করছেন, তিনিই এই আন্দোলনের প্রকৃত নেতা। সত্যি বলতে, নন্দীগ্রামের বিধায়ক ছিলেন বলে, গত ৫ বছরেও মানুষ নিত্যদিনের সমস্যায় শুভেন্দু অধিকারীকেই দেখেছেন। তাই, মানুষ মমতার ইতিহাসের ডাকে কতটা সাড়া দেন, তাই নিয়েও সন্দিহান রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ভেজাল হিন্দু
মনোনয়নপত্র প্রকাশের আগে শিব মন্দিরে পুজো। তার আগের দিনই মঞ্চ থেকে নিজেকে 'হিন্দু' বলে পরিচয় দেওয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপগুলি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে ভেজাল হিন্দু বলে অভিযোগ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত। মুসলমান সম্প্রদায় তাঁর উপর ভরসাও রেখেছে একের পর এক ভোটে। তবে ইদানিংকালে বিজেপির তুষ্টিকরণের অভিযোগ এড়াতে হিন্দুত্বের প্রতিযোগিতাতেও নেমেছেন তিনি। আর তাতে করেই নিজেই নিনিজের জালে জড়িয়ে পড়ছেন, বহিরাগত আক্রমণের মতোই।