- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- 'মমতার আদর্শ বাংলার সর্বনাশ করে ছেড়েছে', এই ভাবেই ২০২০-র শেষে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদী
'মমতার আদর্শ বাংলার সর্বনাশ করে ছেড়েছে', এই ভাবেই ২০২০-র শেষে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মোদী
- FB
- TW
- Linkdin
প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের কিস্তির টাকা দেওয়ার পর ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা সরকারের বিরুদ্ধে। কড়া ভাষায় জানিয়ে ছিলেন, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলার কৃষকদের কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
মমতা সরকারকে নিশানা করে বেনজির ভাষায় আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন,'এটাই আফসোস যে পুরো ভারতের কৃষকরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। সব মতাদর্শের সরকার এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন। কিন্তু একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা চালু করেনি।'
মোদী আরও বলেন,'৭০ লক্ষ কৃষক, আমার কৃষক ভাইবোনেরা এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পাচ্ছেন না। তাঁদের ওই টাকা মিলছে না। বাংলার সরকার রাজনৈতিক কারণে নিজেদের রাজ্যের কৃষকদের বঞ্চিত করে রেখেছেন।'
শুধু তাই নয় কেন্দ্র টাকা দিলেও কেনও মমতা সরকার সেই প্রকল্প চালু করছেন না সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন,'ভারত সরকারের থেকে পয়সা যাবে। রাজ্য সরকারকেও এক পয়সাও দিতে হবে না। তারপরও কৃষকরা টাকা পাচ্ছে না।'
মোদী দাবি করেছিলেন,'প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য লাখ লাখ কৃষক অনলাইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাতে ছাড়পত্র দিচ্ছে না বাংলা। তাতে তিনি রীতিমতো ‘হতবাক’ এবং ‘দুঃখিত’ বলেও জানান।'
রাজ্যে কৃষকদের কিষাণ সম্মান নিধির প্রাপ্য টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করছে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এদিকে দিল্লিতে কৃষক আন্দলোনকে সমর্থন করা ও প্রতিনিধি দল পাঠানো নিয়েও তোপ দেগেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদীর অভিযোগ,'মমতার বিপথগামী রাজনৈতিক আদর্শ পশ্চিমবঙ্গকে ধংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মোদী। বলেন, মমতাজির ১৫ বছরের পুরনো ভাষণ শুনলে বুঝতে পারবেন, এই রাজনৈতিক ধারা বাংলার কতটা সর্বনাশ করে দিয়েছে।'
পাল্টা চুপ থাকেননি বাংলার মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মাননীয়া বলেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী তাঁর কৃষক যোজনা রূপায়ণ এবং পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের সহায়তা না করার জন্য প্রকাশ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু সত্যিটা হল, অর্ধসত্য এবং বিকৃত তথ্যের সাহায্যে তিনি মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। কৃষকদের সহায়তা করতে আমরা সব সময়ই প্রস্তুত'।
মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মমতা আরও বলেছিলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে দু’টি চিঠি লিখেছি। এমনকি,সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু ওঁরা সহযোগিতায় রাজি নন। বরং রাজনৈতিক লাভের জন্য কদর্য প্রচার চালিয়ে যেতে চান। রাজ্য সরকার তো কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। একটিমাত্র প্রকল্পে অসহযোগিতার কি কোনও কারণ থাকতে পারে?'
বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় বিধি এবং নীতি লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বিবৃতি, ‘নরেন্দ্র মোদীর সরকার রাজ্যকে কিছুই দেয়নি। এখনও বকেয়া ৮৫ হাজার কোটি টাকার একাংশও দেওয়া হয়নি। এক মধ্যে জিএসটি খাতে পাওনা ৮ হাজার কোটি টাকাও রয়েছে’।
দিল্লির কৃষক আন্দোলনকে তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তোপের জবাবে মমতা বলেছিলেন,'নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি আজ লক্ষ লক্ষ কৃষক রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। কৃষক বিরোধী এই আইনে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এবং সরকারি ক্রয়ের বন্দোবস্তের বিষয়টি লঘু করা হয়েছে। কৃষকদের রক্ষাকবচ কেড়ে নিয়ে তাঁদের বড় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির করুণার পাত্র করে তোলার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ করার বদলে প্রধানমন্ত্রী আজ টিভি-র সামনে আপাত উদ্বেগ প্রকাশ করেই দায় সেরেছেন'।
মমতার বিপথগমী রাজনীতি বাংলাকে ধ্বংস করছে, মোদীর এই আক্রমণের হিসেবও মিটিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বলেন,'আপনি আমার আদর্শ এবং বাংলার মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আমাদের দেশের স্থপতিদের আদর্শের পথ ধরেই চলেছি। আন্তরিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য কাজ করে চলেছি।'
সামনেই নির্বাচন। রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে একাধিক সভা করার কথা রয়েছে মোদীর। ব্রিগেডেও সভা করার কথা চলছে বিজেপির। সেখানেও প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অপরদিকে রাজ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের আবহে দুই মহারথীর বাকযুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন সকলেই।