- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- 'ভাইপো'র জন্যই কি ডুবছে তৃণমূল, নাকি আসন্ন নির্বাচনে তিনিই 'দিদি'র অক্সিজেন
'ভাইপো'র জন্যই কি ডুবছে তৃণমূল, নাকি আসন্ন নির্বাচনে তিনিই 'দিদি'র অক্সিজেন
কখনও জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলছেন, কেন্দ্রীয় সব প্রকল্প আটকে যাচ্ছে 'ভাইপো উইন্ডো'তে। কখনও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, দিদি ব্যস্ত ভাইপোকে মুখ্যমন্ত্রী করতে। কখনও তৃণমূল ত্যাগী বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন তৃণমূল এখন পিসি-ভাইপো লিমিটেড সংস্থা। সব মিলিয়ে বাংলার রাজনীতিতে 'দিদি'কে ছাপিয়ে এখন বেশি শোনা যাচ্ছে 'ভাইপো'র নাম। তৃণমূলের দাবি, এর থেকে বোঝা যাচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বড় মাপের নেতা হয়ে উঠেছেন। কিন্তু, সত্য়িই কি তাই? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা ভাইপোর দৌলতে আসন্ন নির্বাচনে কি সুবিধা পাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস? নাকি ভাইপোর জন্যই পতন হচ্ছে পিসি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?
| Published : Mar 24 2021, 09:15 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
চলার শুরু
তৃণমূলের যুব সংগঠন যুব তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালে এর পাশাপাশিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'তৃণমূল যুবা' নামে আরও একটি নতুন যুব শাখা চালু করেছিলেন, যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মমতা অবশ্য বলেছিলেন শুভেন্দুর জায়গা অক্ষতই থাকবে। মাস কয়েক পরই 'যুবা'কে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে। আর একচ্ছত্র দায়িত্ব পান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে, মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই তিনি তৃণমূলের টিকিটে দুইবার সাংসদ হয়ে গিয়েছেন।
দলের দুই নম্বর
তৃণমূলের অন্দরের খবর ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের ব্যাপক জয়ের পিছনে মূল ভূমিকা ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরই। সেই নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল। বহু জায়গায় প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। তবে, দলের সামনের সারিতে তিনি আসেন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে। আর সেই ভোটে রাজ্যের বিজেপির উত্থানের পর থেকে তিনিই বকলমে এখন দলের দুই নম্বর নেতা। ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে এনেছিলেন তিনিই। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে মিলে দলের অন্যতম প্রধান কৌশলবিদের ভূমিকা পালন করছেন অভিষেক।
পাকা নেতা
প্রশান্ত কিশোরের হাতে পড়ে অনেক বদল এসেছে অভিষেকের মধ্যে, এমনটাই মনে করছেন তৃণমূলের বর্ষিয়ান নেতারা। আগের থেকে অনেক পরিপক্ক নেতা হিসাবে আসন্ন নির্বাচনের প্রচারে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। শুভেন্দুদের মতো নেতাদের বিদায়ের পর অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোলও এখন থিতু হয়েছে। আর এখন অভিষেক দলকে প্রচার ও আগামীর পথ নিয়ে অনেক নতুন ধারণা দিচ্ছেন, যা এর আগে কোনও নেতা দিতে পারেননি। এমনটাই তাঁদের দাবি।
পিসির গুণ
এছাড়া পিসির অনেক গুণ রয়েছে ভাইপোর মধ্যে। এমনটাও বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রথমত, তৃণমূল কংগ্রেসে বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর এখন অভিষেকের জনমোহিনী ক্ষমতাই সবথেকে বেশি। মমতার পর তাঁর সভাতেই সবথেকে বেশি ভিড় হয়। মমতার মতোই মাইক হাতে মঞ্চের এপ্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত হেঁটে বেড়ান তিনি। জনতার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়া চান। এর মধ্য দিয়ে জনতাকেও সভার অংশ করে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর।
হাতছাড়া
এর পাশাপাশি অবশ্য ভাইপোর জন্য মমতাকে কম ক্ষতিও স্বীকার করতে হয়নি। তৃণমূল নেতারা সামনাসামনি না মানলেও, পিছনে অনেকেই মেনে নেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায়, শুভেন্দু অধিকারী, সৌমিত্র খান, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো দক্ষ সংগঠক ও যুবনেতাদের হাকরাতে হয়েছে তৃণমূলকে। অভিষেকের উত্থান, এবং তার পিছনে দিদির প্রচ্ছন্ন হাত দেখে তাঁরা মনে করেছিলেন, তৃণমূলে তাঁদের আর কোনও ভবিষ্যত নেই।
ভাবমূর্তি
তৃণমূলের অনেক নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধেই নারদা, সারদা বা অন্যান্য আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠলেও, সরাসরি এর কোনওটির সঙ্গেই যুক্ত নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। এই ভাবমূর্তিতে কাদা লাগাতেই বিজেপির হাতিয়ার হয়ে উঠেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুই প্রমাণিত না হলেও অভিষেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর যেহেতু রাজনীতিতে তিনিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের একমাত্র সদস্য, তাই তাঁকে নিশানা করে মমতাকে ছুঁতে পারার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে বিজেপি। অভিষেকের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে মমতার টালির চাল-হাওয়াই চটির ভাবমূর্তি।
কেলেঙ্কারি
হিসাব বহির্ভুত সোনা-সহ কলকাতা বিমান বন্দরে আটক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা-র বিরুদ্ধে। এখন কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআই-এর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে অভিষেক, তাঁর স্ত্রী, রুজিরা এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের। এরসঙ্গে তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, কাট মানি, জালিয়াতি, পঞ্চায়েতে হিংসা - সবকটি অভিযোগের বাণই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে ছাড়ছেন বিজেপি নেতারা।
পরিবারতন্ত্র
বিভিন্ন রাজ্যেই বিজেপির ভোট জয়ের অন্যতম কৌশল পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ। জাতীয় ক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব, মহারাষ্ট্রে আদিত্য ঠাকরে, বিহারে তেজস্বী যাদব - এর স্বাদ পেয়েছেন। বঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এই একই কৌশল কাজে লাগানোর সুয়োগ গেরুয়া দল পেয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোাধ্য়ায় থাকায়। আর তাই, এখন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের পরের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ভাইপোর নামই করছেন অমিত শাহ, 'ভাইপো-কল্যাণ'এর কথা বলছেন। তৃণমূল কংগ্রেস দল ও মমতা সরকারকে বিজেপি পিসি-ভাইপো লিমিটেড কোম্পানি বলে প্রচার করছে। আরও সুবিধা হয়েছে শুভেন্দু, রাজীব, সোনালী গুহদের মতো দলত্যাগীদের সঙ্গে পেয়ে।