সংক্ষিপ্ত

ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Indian Army) এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেলের প্রাণ রক্ষা করলেন মুম্বইয়ের (Mumbai) এক সুইগি ডেলিভারি ম্যান (Swiggy Delivery Man)। এই ঘটনার কাহিনী নেট দুনিয়ায় ভাইরাল (Viral News) হয়েছে। 
 

ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Indian Army) সদস্যরা আছেন বলেই আমাদের মতো সাধারণ মানুষ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি। আর দেশের এই রক্ষীদের যখন কেউ রক্ষা করে, তাঁকে কী বলা যায়? মুম্বইয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মনমোহন মালিক বলছেন, 'সেভিয়ার' অর্থাৎ পরিত্রাতা। তাদের ডেলিভারি ম্যানদের এই 'সেভিয়ার' বলেই দাবি করে থাকে খাদ্য সরবরাহকারী মোবাইল অ্যাপ সংস্থা সুইগি (Swiggy)। এবার, তাদের এক ডেলিভারি পার্টনার সত্যি সত্যিই পরিত্রাতার ভূমিকা নিলেন। তাঁর মানবিক গুণেই প্রাণ বাঁচল ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্নেলের। ধন্য ধন্য করছে সোশ্যাল মিডিয়া। কী ঘটেছিল, আসুন জেনে নেওয়া যাক - 

এই ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। আচমকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কর্নেল মনমোহন মালিক। অবস্থার ক্রমাবনতি হতে থাকায়, তাঁর ছেলে মনীশ মালিক ঠিক করেন গাড়িতে করে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। সেই মতো তাঁরা রওনাও দিয়েছিলেন। কিন্তু, বড়দিনের (Christmas 2021) উৎসবের দিনে সড়কপথে তীব্র যানজটের কারণে মাঝপথে আটকে পড়ে তাঁদের গাড়ি। কর্নেল মালিকের তখন শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ। অপেক্ষা করার এক মুহূর্তও সময় নেই। মনীশ মালিক বুঝতে পারেন, এই যানজটের মধ্যে বাবাকে হাসপাতালে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হল টু-হুইলার। তিনি অনেক বাইক-স্কুটার যাত্রীদেরই থামিয়ে থামিয়ে, তাঁকে এবং তাঁর অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু, বেশিরভাগই তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেন। আর সেই সময়ই বাইক নিয়ে দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিলন, পেশায় সুইগি ডেলিভারি ম্যান (Swiggy Delivery Man), মৃণাল ক্রিদাত।

কর্নেল মালিক জানিয়েছেন, ওই সুইগি ডেলিভারি ম্যান, মুম্বইয়ের রিক্লেমেশন থেকে লীলাবতী হাসপাতালের (Lilavati Hospital) দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁকে দেখেই, তিনি তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন সাহায্যের জন্য অনুরোধ করতে। মৃণাল ক্রিদাতকে, তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা বলতেই তিনি অবিলম্বে বাবা-ছেলে'কে সাহায্য করতে রাজি হয়ে যান। দ্রুত তাঁদের নিজের বাইকে চাপিয়ে লীলাবতী হাসপাতালে পৌঁছে দেন সুইগি ডেলিভারি ম্যান, মৃণাল ক্রিদাত। তবে কর্নেলকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েই সেখান থেকে চলে যাননি মৃণাল। যাতে ওই অসুস্থ প্রাক্তন সেনা আধিকারিক দ্রুত চিকিৎসা পান, তাও নিশ্চিত করেছিলেন।  

কর্নেল মালিক জানিয়েছেন, বাইকে করে তাঁরা তিনজন লীলাবতী হাসপাতালে পৌঁছে দেখেছিলেন হাসপাতালের গেট বন্ধ। একটু দূরে ছিলেন সিকিউরিটি গার্ড। মৃণাল ছুটে গিয়ে তাঁকে গেট খুলতে অনুরোধ করেন। বলেন, কর্নেল গুরুতর অসুস্থ, তাঁকে অবিলম্বে জরুরি বিভাগে ভর্তি করতে হবে। তারপর তিনি জরুরি বিভাগেও ছুটে গিয়ে সেখানকার কর্মীদের দ্রুত কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এরপরই হাসপাতালের এক মেডিক্যাল টিম হাসপাতালের গেটে ছুটে এসেছিল। কর্নেল জানিয়েছেন, তাঁর শেষ স্মৃতি ছিল, তাঁকে হুইল চেয়ারে করে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই সময়ও, মৃণাল হাসপাতালেই ছিলেন। 

View post on Instagram
 

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন কর্নেল মনমোহন মালিক। সুইগি ডেলিভারি ম্যান মৃণাল ক্রিদাতের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তিনি জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে কাটিয়ে তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। আর সুস্থ হওয়ার পর থেকে তাঁর বারবার শুধু মনে পড়ছে সুইগি ডেলিভারি ম্যান 'সেই অল্পবয়সী ছেলেটি'র কথা। মৃণালই তাঁকে নতুন জীবন দিয়েছে বলে জানয়েছেন কর্নেল। তাঁর জন্য, মৃণাল সত্যিই একজন 'পরিত্রাতা'। কারণ, তিনি না থাকলে হয়তো কর্নেল কখনোই প্রিয়জনের কাছে ফিরতে পারতেন না বলেই মনে করেন। তাঁকে এবং তাঁর মতো আরও এরকম অজ্ঞাত 'ডেলিভারি হিরো'দের ধন্যবাদ দিয়েছেন কর্নেল। 

সুইগির অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও মৃণাল ক্রিদাতের এই ঘটনার বিষয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, সুইগি ডেলিভারি ম্যান কীভাবে ওই কর্নেলের জীবন রক্ষা করেছে। এই পোস্টটি সোশ্য়াল মিডিয়া ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা সকলেই মৃমাল ক্রিদাতকে তাঁর মানবিকতার জন্য 'নায়ক'এর মর্যাদা দিচ্ছে।