সংক্ষিপ্ত
১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ালে রাজেন্দ্রপ্রসাদ ওই পদে নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট। ১৯৫০ সালে সংবিধান কার্যকরী হয়। আর ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ। ১৯৫৭ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুন নির্বাচিত হন। তিনিই প্রথম ভারতীয় রাষ্ট্রপতি যিনি দু-দুবার রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার।
রাজেন্দ্র প্রসাদ (Rajendra Prasad) বিহারের সিওয়ানে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছিল মহাদেব সহায়, তিনি সংস্কৃত ও পার্শী ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। পাঁচ বছর বয়েসে রাজেন্দ্রপ্রসাদকে (Rajendra Prasad) মৌলভির কাছে পার্শী ভাষা শিক্ষার জন্যে পাঠানো হয়। এছাড়া তিনি হিন্দী সংস্কৃত সহ বেশ কিছু ভাষা রপ্ত করেন। ১৮৯৬ সালে ছাপড়ার একটি স্কুলে ভর্তি হন রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad)। পরে রাজেন্দ্র পাটনা (Patna) চলে যান। সেখানকার স্কুলে ভর্তি হন। পাটনায় (Patna) শিক্ষা শেষে তিনি কলকাতা আসেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন ও বৃত্তি পান। ১৯০২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad) ভর্তি হন। ১৯০৫ সালে প্রথম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯০৭ সালে তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করেন। রাজেন্দ্র প্রসাদ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতার কাজ করেছেন। বিহারের মুজফরপুরের একটি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে প্রথমে নিযুক্ত হন এবং পরে সেই কলেজের প্রিন্সিপালও হন। আইন পড়ার জন্য তিনি চাকরি ছাড়েন। কলকাতার সিটি কলেজেও তিনি কিছুকাল অধ্যাপনা করেছিলেন।
রাজেন্দ্র প্রসাদ (Rajendra Prasad) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় স্বর্ণপদক সহ পাশ করেছিলেন। ১৯৩৭ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ। ১৯১৬ সালে আইনজীবী হিসেবে ওড়িশা ও বিহার হাইকোর্টে কাজ শুরু করেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad)। তিনি কিছুকাল ভাগলপুর আদালত ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেছেন। রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad) তখন ছাত্র। সেসময় কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক সভা চলছিল।সেখানে তিনি কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯১১ সালে রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad) জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন। ১৯১৬ সালে লক্ষ্মৌর একটি সভায় মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) সাথে আলাপ হয় তাঁর। গান্ধীজী তাঁকে চম্পারনে পাঠান কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে। কাজটি সুসম্পন্ন করে ফেরার পর গান্ধীজীর নেকনজরে পড়েন রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad)।
দেশজুড়ে যখন অসহযোগ আন্দোলন চলছে তখন আইনজীবীর পেশা ছেড়ে ফুলটাইম রাজনীতিতে যোগ দেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad)। ১৯৪২ এর অগাস্ট আন্দোলনের সময় তিনি গ্রেফতার হন। জেলে বসে লেখেন আত্মজীবনী। অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পর রাজেন্দ্রপ্রসাদের (Rajendra Prasad) সাথে আলাপ হয় দার্শনিক রাহুল সাংকৃত্যায়নের। রাহুল সাংকৃত্যায়ন রাজেন্দ্রপ্রসাদের (Rajendra Prasad) পান্ডিত্য ও ব্যক্তিত্বের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি তার রচনায় একাধিকবার রাজেন্দ্র প্রসাদের কথা উল্লেখ করেছেন।শেষজীবনে সোমনাথ মন্দির নবনির্মাণকে কেন্দ্র করে নেহেরুর সঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad) পছন্দ করতেন সুর সম্রাট বিসমিল্লা খাঁর সানাই শুনতে।
ভারতবর্ষের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad) গোষ্ঠ পাল (Goshtho Pal) এর খেলা দেখতে কলকাতার মাঠে আসতেন। সেই খেলা দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাই তিনি নিজে “পদ্মশ্রী” (Padmashree) পুরস্কারের জন্যে গোষ্ঠপালের নাম মনোনীত করেন। ১৯৬২ সালে গোষ্ঠপাল ভারত সরকার দ্বারা পদ্মশ্রী (Padmashree) উপাধিতে ভূষিত হন । শেষ জীবনে প্রচুর অবহেলার শিকার হন রাজেন্দ্রপ্রসাদ (Rajendra Prasad)। বিহারের সাদাকত আশ্রম ছিল তাঁর ঠিকানা। সেখানকার একটি ছোট্ট ঘরে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ সালে মারা যান ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ Dr. (Rajendra Prasad)।
আরও পড়ুন- Sekaler Golpo: বঙ্গ পুত্র অধ্যাপক জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবনের এক অজানা অধ্যায়ের সন্ধান