সংক্ষিপ্ত
বিপ্লবী বিনয় বাদল ও দীনেশ প্রথমে ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করে ও তারপর রাইটার্স বিল্ডিংভবনে অভিযান চালায়। বিপ্লবীদের সাথে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। বাদল গুপ্ত সঙ্গে নিয়ে আসা পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অন্যদিকে বিনয় এবং দিনেশ নিজেদের রিভলবার দিয়ে নিজেদেরকেই গুলি করে। বিনয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই সে মারা যায়। বেঁচে যায় দীনেশ। সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড ও পুলিশ অফিসারকে খুনের জন্য দীনেশের ফাঁসি হয়। কে এই দীনেশ গুপ্ত? লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার
১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিপ্লবী বিনয় বসুর নেতৃত্বে দীনেশচন্দ্র গুপ্ত (Dinesh Gupta) ও বাদল গুপ্ত (Badal Gupta) রাইটার্স বিল্ডিংভবনে অভিযান চালায়। তারপর তারা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। বিনয় বসু ও বাদল গুপ্ত গুরুতর আহত হয়ে মারা যায়। অন্যদিকে মৃতপ্রায় দীনেশকে (Dinesh Gupta) পুলিশ বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। পরে বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়। দীনেশ গুপ্তের জন্ম ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর, ঢাকায়। তার পিতার নাম ছিল সতীশচন্দ্র গুপ্ত ও মায়ের নাম বিনোদিনী দেবী। দীনেশ গুপ্তের (Dinesh Gupta) ডাকনাম ছিল "নসু"। কৈশোরেই গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন দীনেশ গুপ্ত। ১৯২৬ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি মেদিনীপুরে কর্মরত তার বড়োদাদা যতীশচন্দ্র গুপ্তের (Jatish Chandra Gupta) কাছে বেড়াতে আসেন। এই সময় থেকেই মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার সুপ্ত বাসনা তার মনে জাগে।
১৯২৮ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষা (ISC Exam) দেন। কিন্তু এই পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতে পারেননি। এরপর তিনি মেদিনীপুরে গিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। দীনেশ (Dinesh Gupta) প্রথমে ঢাকা অঞ্চলে বিপ্লবী সংগঠনের কাজ করতেন। পরে তাকে মেদিনীপুরে সংগঠনের কাজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দীনেশ (Dinesh Gupta) গিয়ে মেদিনীপুররের সংগঠনটির হাল ধরেন ও সংগঠনটিকে মজবুত করে তোলেন। দীনেশের (Dinesh Gupta) চেষ্টায় মেদিনীপুরের সংগঠনটি এমন দৃঢ় হয়ে ওঠে যে, সেখানকার বিপ্লবীরা পরপর তিনবার তিন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করতে সমর্থ হয়। এই তিন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন- জেনারেল ডগলাস, বার্জ, এবং পেডি।
১৯২৮ সালে দীনেশ 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'-এর কলকাতা সেশনের প্রাক্কালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু (Netaji Subhash Chandra Bose) সংগঠিত "বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে"যোগদান করেন। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দেখতে দেখতে একটি সক্রিয় বিপ্লবী সংগঠনে পরিবর্তিত হয় এবং কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদেরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। দীনেশ গুপ্তের মধ্যে সবসময় এক ধরনের দর্শন চিন্তা কাজ করত। লিখতে ভালোবাসতেন। প্রচুর চিঠি লিখতেন দীনেশ(Dinesh Gupta)। দীনেশের (Dinesh Gupta) সংগঠন সিদ্ধান্ত নেয় জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসনকে হত্যা করা হবে কারণ সে জেলখানার বন্দীদের উপর পাশবিক নির্যাতন করে। এর পাশাপাশি কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করবে।
১৯৩০ এর ৮ ডিসেম্বর দীনেশ (Dinesh Gupta) তার দুই সঙ্গী বিনয় বসু এবং বাদল গুপ্ত (Badal Gupta) সহ ইউরোপীয় পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। ব্রিটিশ পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। তিন তরুণ বিপ্লবীর সাথে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। বিনয়-বাদল-দীনেশ (Binay- Badal- Dinesh) কারোরই গ্রেফতার হওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল না। তাই বাদল গুপ্ত (Badal Gupta) সঙ্গে নিয়ে আসা পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নেয় ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অন্যদিকে বিনয় এবং দিনেশ নিজেদের রিভলবার দিয়ে নিজেদেরকেই গুলি করে। বিনয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই সে মারা যায়। পড়ে রইল দীনেশ (Dinesh Gupta)। দীনেশ (Dinesh Gupta) কপালজোরে বেঁচে যায়। শুরু হয় দীনেশের বিচার। সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড ও পুলিশ অফিসারকে খুনের জন্য দীনেশকে (Dinesh Gupta) ফাঁসি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই আলিপুর জেলে ভোর রাতে ফাঁসি হয় দীনেশের(Dinesh Gupta)।