সংক্ষিপ্ত

দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) সিঞ্চল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি (Senchal Wildlife Sanctuary)তে দেখা মিলল  বিরল 'সেটর ট্রাগোপান' (Satyr Tragopan) পাখির। শেষবার এই পাখি (Bird) দেখা গিয়েছিল প্রায় ২০০ বছর আগে। 
 

ভারতের অন্যতম পুরোনো অভয়ারণ্য হল দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) সিঞ্চল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি (Senchal Wildlife Sanctuary)। ভালুক, লেপার্ড সহ বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তুর পাশাপাশি, এই অভয়ারন্যে দেখা মেলে বিভিন্ন ধরনের পাখিরও। এবার এখানেই খোঁজ মিলল এক বিরল প্রজাতির  পাখির -  'সেটর ট্রাগোপান' (Satyr Tragopan)। এতদিন শোনা যেত একসময় নাকি দার্জিলিং এলাকায় এই পাখি দেখা যেত। তবে তার কোনও প্রমাণ ছিল না। অনেকে মনে করতেন এটা বোধহয় গল্পকথাই। কিন্তু, এবার সরাসরি সেই শোনা কথার প্রমাণ মিলল। আর এটা দার্জিলিং তথা বাংলার জীববৈচিত্রের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। 

সিঞ্চল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির ডিএফও, এসএস শেরপা জানিয়েছেন, আজ থেকে প্রায় ১৭৮ বছর আগে, ব্রিটিশ আমলে সিঞ্চন ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে শেষবার এই সেটর ট্রাগোপান পাখি দেখা গিয়েছিল বলে একটি লিখিত রেকর্ড রয়েছে। তারপর থেকে আর এই অভয়ারণ্যে এই পক্ষী প্রজাতিটিকে কারোর চোখে পড়েনি। তবে, চলতি বছরের অগাস্ট মাসে বন বিভাগের কর্মীদের নজরে আসে তিনটি পুরুষ  এবং তিনটি মহিলা সেটর ট্রাগোপান প্রজাতির পাখি। এসএস শেরপা আরও জানিয়েছেন, এর আগে এই  অঞ্চলে পাখিটি দেখা যেত বলে শোনা গেলেও, প্রমাণ হিসাবে তার কোনও ছবি ছিল না। এবার তাঁরা সেটর ট্রাগোপানের ছবি ও ভিডিও - দুইই তুলেছেন। 

এই পাখিকে নেপালী ভাষায় বলা হয় মুনাল পাখি। ভারত, তিব্বত, নেপাল এবং ভুটানের হিমালয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। আর্দ্র ওক এবং রডোডেনড্রন বনে এবং বাঁশঝাড়ে বাসা বাধে। গ্রীষ্মকালে সাধারণত ২৪০০ থেকে ৪২০০ মিটার উচ্চতায় এবং শীতকালে ১৮০০ মিটার উচ্চতায় থাকে এই পাখি। মহিলা পাখিদের রঙ হয় বাদামী। আর পুরুষ পাখিগুলির রঙ হয় লালের উপর নীল, কালো এবং সাদা রঙের ছোপছোপ। সঙ্গমের মরসুমে পুরুষ সেটর ট্রাগোপান পাখিদের মাাথায় একটি নীল রঙের ঝুঁটি এবং গলার নিচে একটি মাংসল পিণ্ড তৈরি হয়। সেগুলি বেশ দেখানোর মতো বড়সড় হয়ে গেলে পুরুষ পাখিটি একটি পাথরের আড়ালে লুকিয়ে তাদের ঝুঁটি ফুলিয়ে বসে বসে কোনও মহিলা পাখি আসার জন্য অপেক্ষা করে। যখন কোন মহিলা পাখি সেই ঝুঁটি দেখে তার কাছে আসে, তখন সেই পাখিকে মুগ্ধ করতে সে ঝুঁটি ফুলিয়ে, গলার নিচের মাংসল পিণ্ডটি নাচিয়ে মহিলা পাখিটিকে দেখায়। দুই পায়ের উপর দাঁড়িয়ে পূর্ণ উচ্চতা অর্জন করে নিজের পৌরুষ প্রদর্শন করে। তাতে মহিলা পাখিটি ইমপ্রেসড হলে, তবেই হয় সঙ্গম। 

সেটর ট্র্যাগোপান পাখি এখন অবশ্য খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়, বলা যেতে পারে বিলুপ্তপ্রায়। এই অবস্থায় সিঞ্চন ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে দীর্ঘ দিন বাদে এই পাখি দেখতে পাওয়ার পর, এখন কীভাবে তাদের সংখ্যা বাড়ানো যায়, সেই নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে দার্জিলিং বন দফতর। এই পাখিটি পক্ষী-উৎসাহীদের সিঞ্চলে টেনে আনবে বলে আশা করছেন তাঁরা।