সংক্ষিপ্ত
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সারাবছর হয় ধনদেবীর আরাধনা। ভারতের কিছু মহালক্ষ্মী মন্দিরের অজানা কাহিনি।
ভারতের(India) বিভিন্ন প্রান্তে সারাবছর হয় ধনদেবীর (Laxmi Devi) আরাধনা। জানেন কি কোথায় দেবী লক্ষ্মী (Maa Laxmi) দেবী অম্বানি (Devi Ambani) নামে বেশি জনপ্রিয়? দেবী লক্ষ্মীর শান্ত স্নিগ্ধ রূপের কথাই আমরা জানি। জানেন কি ভারতের এই মন্দিরে দেবী লক্ষ্মীর রুদ্র রূপে পূজিত হয়। দ্বাদশ শতকে হয়সাল সাম্রাজ্যের রাজা বিষ্ণুবর্ধন কোন লক্ষ্মী মন্দির নির্মান করিয়েছিলেন? অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির ছাড়াও ভারতে রয়েছে আরও এক বিরাট স্বর্ণমন্দির। কোথায় রয়েছে দেবী মহালক্ষ্মীর সেই স্বর্ণমন্দির? কোথায় দেবী মহালক্ষ্মী পূজিত হন কৈলা দেবী রূপে? কোথায় সমুদ্রের নীচ থেকে মা লক্ষ্মীকে বার করে এনে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল? ভারতের এমনই কিছু মহালক্ষ্মী মন্দিরের অজানা কাহিনি। লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার।
কোলাপুরের দেবী অম্বানির মন্দির
মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, বিষ্ণু এবং লক্ষ্মী তাঁদের শহরে বাস করেন এবং ভক্তদের আশীর্বাদ করেন। কোলাপুরে দেবী লক্ষ্মী দেবী অম্বানি নামে বেশি জনপ্রিয়। কোলাপুরবাসীর কাছে মহালক্ষ্মী মন্দির খুবই পবিত্র। সারাবছর জুড়ে প্রচুর মানুষ আসেন এই মন্দিরে মাথা ঠেকাতে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় দক্ষিণে যখন চালুক্য বংশের রাজত্ব ছিল তখন তাঁদের রাজত্বকালে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল। দেবী লক্ষ্মীর শান্ত স্নিগ্ধ রূপের কথাই আমরা জানি। এই মন্দিরে কিন্তু দেবী রুদ্র রূপে পূজিত।
কর্নাটকের হাসান জেলার প্রাচীন লক্ষ্মী মন্দির
কর্ণাটকের হাসান জেলার দোদ্দাগদ্দাভল্লি গ্রামে লক্ষ্মী দেবীর একটি মন্দির রয়েছে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, মন্দিরটি দ্বাদশ শতকে হয়সাল সাম্রাজ্যের রাজা বিষ্ণুবর্ধন দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরের ভেতরে রয়েছে চারটি মন্দির। মন্দিরের এর ছাদ বৃত্তাকার। এই মন্দিরের মধ্যে রয়েছে দুটি মূল প্রবেশদ্বার। মন্দিরের উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিমে যে মন্দিরগুলি রয়েছে তাতে রয়েছে কালী, বিষ্ণু এবং ভূতনাথ লিঙ্গ।
মণ্ডপের ছাদে বৃত্তাকার কারুকার্য রয়েছে। যাতে বিরাজমান তাণ্ডবেশ্বর। এছাড়া মন্দিরে রয়েছে গজলক্ষী, তন্দেশ্বর এবং নরসিমার মূর্তি। মন্দিরের ভেতরে রয়েছে তিন ফুট লম্বা লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি। মূর্তিটির ওপরের ডান হাতে রয়েছে শঙখ, ওপরের বাম হাতে রয়েছে চক্র, নিচের ডান হাতে একটি জপমালা এবং নিচের বাম হাতে একটি গদি দেখা যায়।কর্নাটকের হাসান জেলার এই লক্ষ্মী মন্দির অত্যন্ত প্রাচীন।
শ্রীপুরমে লক্ষ্মী নারায়নী স্বর্ণমন্দির
অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির ছাড়াও ভারতে রয়েছে আরও এক বিরাট স্বর্ণমন্দির। যা তামিলনাড়ুর ভেলোরে অবস্থিত। নাম, শ্রীপুরম স্বর্ণমন্দির। মালাইকোডি পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত এই মন্দিরে বছরভর পূজিত হন দেবী লক্ষ্মী।'শ্রীপুরম'-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হ'ল লক্ষ্মী নারায়নী এই মন্দির। যার অপরনাম এবং অর্ধ মণ্ডপম স্বর্ণ মন্দির। এই মন্দিরের দেবতা শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণী।
লক্ষ্মী নারায়ণী অর্থাৎ বিষ্ণু নারায়ণের স্ত্রী। দেবীর আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত মন্দিরটি ১০০ একর জমিতে অবস্থিত। ভেলোরের দাতব্য ট্রাস্ট, শ্রী নারায়ণী পিদম দ্বারা নির্মিত। যার আধ্যাত্মিক গুরু হলেন শ্রী শক্তি আম্মা। যিনি 'নারায়ণী আম্মা' নামেই বেশি জনপ্রিয়। শ্রীপুরমম তিরুপতি থেকে ১২০ কি.মি, চেন্নাই থেকে ১৪৫ কি.মি, পন্ডিচেরি থেকে ১৬০ কি.মি এবং বেঙ্গালুরু থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মহা কুম্ভঅভিষেক করে দেবীকে এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মন্দিরের প্রধান দেবতা লক্ষ্মী নারায়ণী বা দেবী মহা লক্ষ্মীকে ২৪ অগাস্ট ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় শ্রীপুরম স্বর্ণমন্দিরে।
রাজস্থানের কারাউলিতে কৈলা দেবীর মন্দির
রাজস্থানের করৌলি বা কারাউলিতে দেবী মহালক্ষ্মী পূজিত হন কৈলা দেবী রূপে। বেশ কিছু রাজপুত বংশের কুলদেবী তিনি।কৈলা দেবী মন্দিরটি কারাউলি গ্রাম থেকে ২৩ কিমি এবং গঙ্গাপুর থেকে ৩ কিমি দূরে অবস্থিত। এটি কালীসিল নদীর তীরে অবস্থিত। কারাউলি গ্রামের উত্তর-পশ্চিমে ২ কিলোমিটার দূরে ত্রিকুট পাহাড়ে বনাস নদীর একটি শাখা রয়েছে। রাজপুত শাসকদের দেবী কৈলাকে স্থানীয়রা অত্যন্ত ভক্তি করে। মন্দিরটি মার্বেল পাথরে নির্মিত। রয়েছে বিশাল উঠোন। এক জায়গায় ভক্তদের দ্বারা লাগানো বেশ কয়েকটি লাল পতাকা চোখে পড়ে।
মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মী মন্দির
মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মী মন্দির তৈরি হয়েছিল ১৭৮৫ সালে। এই মন্দির নির্মাণের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে একটি কিংবদন্তি। ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে মুম্বইয়ের ৭টি দ্বীপকে একসঙ্গে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন গভর্নর উইলিয়াম হর্নবি। সেই প্রকল্পের নাম লোকের মুখে হয়ে দাঁড়ায় 'হর্নবি ভেলার্ড'। পর্তুগিজ ভাষায় ভেলার্ড বা ভেল্লাডো শব্দের অর্থ ‘বাঁধের দেওয়াল’। হর্নবি কিছুতেই এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছিলেন না। কোনো না কোনোভাবে বাধা পড়ছিল। হর্নবি খুব চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
ঠিক সেইসময় এই কাজের সঙ্গে যুক্ত মুখ্য বাস্তুবিদ এক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। সেখানে তাঁকে বলা হয় সমুদ্রে নীচ থেকে মা লক্ষ্মীকে বার করে এনে মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর তাহলেই সব বাধা কেটে যাবে। মুম্বাইয়ের গবেষকরা বলছেন ওই স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী ওরলির সমুদ্রের নীচ থেকে নাকি উদ্ধার করা হয় দেবী লক্ষ্মীর একটি মূর্তি। আর তারপর নির্মিত হয় মহালক্ষ্মী মন্দির। তারপর হর্নবির ভেলার্ড প্রকল্পে আর কোনও বাধা আসেনি। সাতটি দ্বীপকে যু্ক্ত করার দীর্ঘ কাজ অবশেষে শেষ হয় ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে। মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মী মন্দির আজও জাগ্রত। সিনেমা জগতের তারকা থেকে খেলোয়াড় সবাই এই মন্দিরে মাথা ঠেকিয়ে যান ও প্রার্থনা করেন।