ভালোবাসা মানে এক অনুপ্রেরণা যা পরম অনুভূতি এই ভালোবাসার বাহুডোরে বেঁচে থাকে সম্পর্ক ও সংসার এই ভালোবাসার হাত ধরে কাছাকাছি হয় দুটো অপরিচিত জন এভাবেই ৫০ বছর আগে দাম্পত্যের সম্পর্কে যাত্রা শুরু তুষার-কৃষ্ণার

চানঘরের গুণগুণ। যৌবনের উদ্দিপনায় স্বপ্ন আবেশে জড়ানো মন-হৃদয়। কৃষ্ণার তখন কৈশোরকাল। সাঁনাইয়ের শব্দে রেলগাড়ি-র কু-ঝিকঝিক তুলে ছুটে এসেছিলেন তুষার। আসানসোল থেকে শ্রীরামপুরের দূরত্বটা তখন যেন অধৈর্য করে তুলেছিল তুষার-কে। বাংলায় তুষার-এর নানা অর্থ- বরফ, হিমানী, নীহার- আরও কত কী! আর কৃষ্ণা! সে তো রাধা। কারণ কৃষ্ণের সঙ্গিনী হওয়ায় রাধাকে-ই তো কৃষ্ণা বলে। শ্রীরামপুরের কৃষ্ণার জীবনে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তুষারই হয়ে উঠেছেন কৃষ্ণ। ৫০ বছর বিবাহ বার্ষিকী-তে পা রেখে তাই এক আলাদা উন্মাদনা। আর সেই ভালোবাসার বাহুডোরকে যখন তুষার-কৃষ্ণা উৎসর্গ করেন ভ্যালেন্টাইনের নামে তখন সে-ই ভালোবাসায় তো পাগলামোর মেজাজ লেগে যেতেই বাধ্য। 

Scroll to load tweet…

৫০-এও যে ভালোবাসা নটআউট হয়ে থাকতে পারে তা আর এক উদাহরণ তুষার ও কৃষ্ণা। বিবাহবার্ষিকী-র ৫০ পূর্তি-র উদযাপন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। রাতজাগা পাখির মতো ভালোবাসার খেলা ঘরের সেলিব্রেশনে মেতেছিলেন তুষার-কৃষ্ণা। সকাল হতেই ছিল ভ্যালেন্টাইন ডে- ভালোবাসার দিন বা প্রেম দিবস। ৫০-র জীবন জোড়া যাপনেও তুষার ও কৃষ্ণার মুখে তাই বেরিয়ে এল- একে অপরের এই সান্নিধ্য আজ যেন এক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা। একে অপরকে ছাড়া অপূর্ণ। তাই দুজনেই বলেছেন- 'যা ছিল সব তোমায় দিলাম এই প্রেম দিবসে। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে।'

Scroll to load tweet…

তুষার আজ ৭৫। আর কৃষ্ণা পার করে ফেলেছেন ৬৮-র গণ্ডি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বার্দ্ধক্যের জীর্ণতা গ্রাস করেছে দুজনকেই। কৃষ্ণা এখন ঠিক করে হাঁটতেও পারেন না। কারোর সাহায্য নিয়েই তাঁকে চলতে হয়। তুষার বয়সের ভারে একটু নূজ্য, কিন্তু হাঁটা-চলাতে যথেষ্টই সপ্রতিভ। ৫০-এর সেলিব্রেশনের জন্য রাখা কেকের টেবিলে সামনে সামান্য যেন স্মিত হাস্য বদনা কৃষ্ণা। আর তুষার এক অপার সুখের মাদকতা মাখানো চোখ নিয়ে দেখে চলেছেন জীবন সঙ্গিনীকে। সকলের সামনে আবার সাড়ম্বরে কৃষ্ণার সিঁথিতে এঁকে দিলেন সিঁদূরের রেখা। কৃষ্ণা তখন পরম আহ্লাদে আরও একবার সিঁথিতে হাত বুলিয়ে মনে করার চেষ্টায় ৫০-এর পথের শুরু দিনটায়। সন্তান এবং আত্মীয়-স্বজনদের আবদার মেনেই মালা বদলও করেছেন তুষার-কৃষ্ণা। সেখানেও যেন এক পরম ঘোরের আবহ দুজনের। প্রথম মালাবাদল-প্রথম মুখ দেখা- চার-চোখের মিলনে এক নতুন পথ চলার অঙ্গিকার। সবই যেন বারবার ফিরে আসছিল তাঁদের কাছে। 

Scroll to load tweet…

তুষার কাজ করতেন আসানসোলের একটি সাইকেল তৈরির কারখানায়। পরে সেই কারখানা রুগ্ন হতে হতে খারাপ অবস্থায়। হার না মানা মনোভাব নিয়ে ভালোবাসা-কেই আঁকড়ে ধরেছিলেন তুষার ও কৃষ্ণা। দুই পুত্র-কে মানুষ করানো থেকে তাঁদের জীবনযুদ্ধে স্বনির্ভরতার পথ দেখানো- কোনও কিছুই আটকে যায়নি কখনও। অবদান-স্রেফ সেই ভালোবাসার। যে ভালোবাসার আধার মানুষকে শেখায় একে অপরকে বেঁধে রাখতে, যে ভালোবাসায় দেখায় এক নতুন সকালের অঙ্গিকার- সেখানে ভালোবাসার হাত না ধরে কীভাবেই থাকতে পারতেন তুষার-কৃষ্ণা। তাই তো কবি লিখে গিয়েছেন- 'সুন্দর হৃদিরঞ্জন তুমি নন্দন ফুলহার, তুমি অনন্ত নববসন্ত অন্তরে আমার।'