সংক্ষিপ্ত

পুরুষাঙ্গের ছোট-বড় হওয়া নিয়ে অনেকধরনের তথ্যই সামনে আসে। এর জন্য অনেকে অনেক ধরনের ওষুধও খেয়ে নেন। কিন্তু বাজার চলতি সত্যি সত্যি এমন কোনও ওষুধ রয়েছে কি যা পুরুষাঙ্গের আকারকে বাড়িয়ে দিতে পারে?
 

সামাজিক মাধ্যম এসে যাওয়ায় জীবনের গোপনীয়তা অনেকটাই এখন সামনে চলে এসেছে। যার ফলে বহু ক্ষেত্রে এমনও দেখা যাচ্ছে যাকে আমরা জীবনের গোপন সমস্যা বলে জানতাম তা নিয়েও চর্চা চলছে প্রকাশ্যে। সন্দেহ নেই ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের জীবনের ক্ষেত্রে একটা সদর্থক বার্তাও নিয়ে এসেছে। যার ফলে মানুষ এখন এই সব গোপন সমস্যা নিয়ে প্রাকাশ্য আলোচনায় লজ্জা বা অস্বস্তি পাচ্ছে না। কারণ, এই গোপন সমস্যাগুলো প্রাকাশ্যে আলোচনা হওয়ায় এই তথ্যও সামনে আসছে এই ধরনের বিষয়গুলো শুধুমাত্র গুটিকয়েক মানুষের সমস্যা নয়, এর সঙ্গে অসংখ্য মানুষ জড়িয়ে রয়েছে। মানুষকে আশ্বস্ত করতে তো আবার এই সব সমস্যা নিয়ে সিনেমাও তৈরি হচ্ছে। যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ- ভিকি ডোনার, শুভ মঙ্গল সাবধান থেকে শুরু করে বালা, দম লাগা কে হাইসা। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমেও এমন একটি তেলেগু ছবি তৈরি হয়েছে যেখানে পুরুষাঙ্গ ছোট হওয়া নিয়ে নায়কের মানসিক পরিস্থিতি-কে তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষাঙ্গের ছোট-বড় হওয়া নিয়ে অনেকধরনের তথ্যই সামনে আসে। এর জন্য অনেকে অনেক ধরনের ওষুধও খেয়ে নেন। কিন্তু বাজার চলতি সত্যি সত্যি এমন কোনও ওষুধ রয়েছে কি যা পুরুষাঙ্গের আকারকে বাড়িয়ে দিতে পারে? মেডিক্যাল নিউজ টুডে এই নিয়ে একটি সুন্দর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আপনাদের জন্য রইল সেই প্রতিবেদন। 

পুরুষাঙ্গ বড় করতে এনলার্জমেন্ট পিলস বলে যেগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো আসলে কী? 
এনলার্জমেন্ট পিলস(Enlargement Pills) এমন একটি স্টিমুলেটিং বলে বাজারে বিক্রি করা হয় যাতে ওষুধ কোম্পানিগুলো দাবি করে যে এই পিল খেলে পরুষাঙ্গের (Penis) আকার বৃদ্ধি পায় এবং সম্ভোগের ক্ষমতাতেও বিশাল স্বস্তর্সফূততা আসেয এর ফলে সঙ্গম উপভোগ করার ক্ষমতা বহুলাংশে বেড়ে যায়। কিন্তু ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (National Health Service) বা এনএইচএস-এর (NHS) মতে এই সব দাবির কোনও ভিত্তি নেই। কারণ এই সব ওষুধের কোনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রেকর্ড নেই। অনেক পুরুষের মনে এমন ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে যে সঙ্গমের সময় পুরুষাঙ্গের আকার বৃদ্ধি পেয়ে ৬ ইঞ্চি হওয়া উচিত। কিন্তু, ২০২১ সালের এক সমীক্ষায় (Survey) উঠে এসেছে এক মূল্যবান তথ্য। তাতে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ পুরুষই মনে করেন পুরুষাঙ্গ তার দৃঢ়তা পেলে আকারের বৃদ্ধিতে ৬ ইঞ্চি হয়। অথচ গবেষণা দেখা গিয়েছে পুরুষাঙ্গের গড়পতা আকার বৃদ্ধি ৫.১ থেকে সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। আরও এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে পরুষাঙ্গের আকৃতি নিয়ে অনেক মানুষই উৎকন্ঠায় ভোগেন এবং সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ তৈরি হয়। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে পেনাইল ডিসমোরফোবিক ডিসঅর্ডার (Penile Dismorphophobic Disorder)বলে। অধিকাংশ পুরুষের লিঙ্গের আকারের একইরকম। এর বাইরে কিছু জনের পুরুষাঙ্গের আকার গড়-পড়তা নয়। এগুলো হয় শরীরের কোনও রোগ বা হরমোন ডিসঅর্ডারের জন্য। একে মাইক্রোপেনিস (Micropenis) বা পেইরোনিস ডিসিস (Peyronie's Disease) বলে। 

মাইক্রোপেনিস (Micropenis)-হল পুরুষাঙ্গের গড়পড়তার আকার থেকেও ছোট। এর কারণ মূলত হরমোনের তারতম্যের সমস্যা। পেইরোনিস ডিসিস (Peyronie's Disease)-এ পুরুষাঙ্গ যখন আকার বৃদ্ধি ঘটায় তখন সেখানে এক বিশেষ ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, যার মধ্যে পুরুষাঙ্গের মাত্রাতিরিক্ত কাত হয়ে থাকাটা একটা বিষয়। এর ফলেও অনেক সময় পুরুষাঙ্গকে গড় আকারের থেকে অনেকটাই ছোট বলে মনে হয়। 


এনলার্জমেন্ট পিলস(Enlargement Pills) সত্যি কি কাজ করে? 
ব্রিটেনের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Food And Drug Administration)বা এফডিএ(FDA)জানিয়েছে যে,সম্ভোগের আনন্দ বৃদ্ধির জন্য অসংখ্য ব্র্যান্ডেড ওষুধ রয়েছে কিন্তু এগুলো সেবন করলে স্বাস্থ্যের বিপুল ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বহুক্ষেত্রে এরমধ্যে টাডালফিল (Tadalafil)এবং সাইডেনাফিল(Sidenafil)ব্যবহার করা হয়। এগুলো আসলে ভায়াগ্রা (Viagra) ও সিয়ালিস (Cialis) থেকে বের করে নেওয়া দুটো উপকরণ। এই ধরনের ওষুধ ইরেকটাইল ডিসফাংকশন (Erectile Dysfunction) বা এনলার্জড প্রস্টেটের (Enlarged Prostate)চিকিৎসায় কাজে লাগে।

একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে সাইডেনাফিল ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যক। কারণ এতে নাইট্রোগ্লিসারিন থাকে। সাধারণত চিকিৎসকরা রক্তচাপ কমাতে নাইট্রেট জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকেন।   এমনকী হৃদরোগের সমস্যার সাময়িক উপশমেও নাইট্রেট দেওয়া হয়। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধের সেবন জীবনের পক্ষে ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এই ওষুধের ব্যবহার রক্তচাপকে কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।  

এনলার্জমেন্ট পিলস(Enlargement Pills)- সেবনে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়? 
২০১৪ সালের এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে পুরুষাঙ্গের আকার বৃদ্ধিতে যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে মাত্রারিক্ত ইয়োহিম্বে, মাকা, হর্নি গট উইড এবং গিঙ্কগো বিলোবা-র অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। এই উপাদানগুলি প্রকৃতির বিভিন্ন গাছ-গাছালি থেকে সংগ্রহ করা। বহু দেশেই এগুলোকে সম্ভোগের ইচ্ছাবৃত্তিকে বাড়িয়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো মূলত আয়ুর্বেদ উপাদান হিসাবেই ব্যবহার হয়। কিন্তু এই সব উপাদান আহরণে শরীরে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়। এমনকী, এই সব উপাদান নিয়ে অসংখ্য গবেষণা হলেও মানুষের কামবৃত্তির মাত্রাকে বাড়াতে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলি আদৌ নির্ভরযোগ্য কি না তা প্রমাণ করা যায়নি। ফলে বহু দেশেই এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গবেষণার দাবি করা হয়েছে এই উপাদানগুলি অবৈঞ্জানিক পদ্ধতিতে শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পুরুষাঙ্গের আকার বৃদ্ধি একটি শারীরিক সমস্যা। অনেকটা হার্ডওয়্যার প্রবলেমের মতো। সেখানে মানসিক কামেচ্ছাকে বাড়ানোর ঔষধে আদৌ কাজ করবে কি না তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহ রয়েছে। 
২০১৮ সালের গবেষণাতে আরও দেখা গিয়েছে যে এই প্রাকৃতিক উপাদানের জন্য বহু মানুষ নিম্ন রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার মতো সমস্যায় ভুগছেন। ব্রিটেনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ হেলথ (National Complementary And Integrative Health or NIH) বা এনএএইচ জানিয়েছে, পুরুষাঙ্গের আকারর বৃদ্ধির ওষুধ বলে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো যে ওষুধ বাজারে বিক্রি করে তাতে ঠিক কতটা পরিমাণ ইয়োহিম্বে রয়েছে তা উল্লেখ করা হয় না। এমনকী অন্যান্য উপাদানের মাত্রার উল্লেখও থাকে না। এর ফলে উৎকন্ঠা, হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পাওয়া-সহ নানা ধরেনর শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। আর এসবের কারণে স্লো-পয়জনিং-এর মতো মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলে। এমনকী, এনএএইচ জানিয়েছে যে গিঙ্কগো বিলেবা গ্রহণ করার ফলে রক্তক্ষরণ, রক্ত পাতলা হয়ে যাওয়া এবং মাথা ধরা ও কনস্টিপেশন, অ্যালার্জির মতো সমস্যা তৈরি হয়।  

উপসংহার- 
গবেষণা থেকে এটা অন্তত প্রতিষ্ঠিত যে বাজারে পরুষাঙ্গের আকার বৃদ্ধি নিয়ে যে সব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে তার দাবির পিছনে কোনও সত্যের ভিত্তি নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে এই সব ওষুধে ব্যবহৃত উপাদানগুলি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। এমনকী, এখন পর্যন্ত কোনও গবেষণা হয়নি যে দাবি করতে পারে এই ওষুধগুলো খেলে সত্যি সত্যি পুরুষাঙ্গের আকার বৃদ্ধি হবে। যদি কারও মনে হয় যে তার পরুষাঙ্গের আকার ছোট তাহলে তিনি এটা মনে করুন যে তার পুরুষাঙ্গ আসলে স্বাভাবিক আকারের, যেটা অধিকাংশ পুরুষের হয়ে থাকে। এতেও যদি ওই ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। কিন্তু, কখনই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাজার চলতি ওষুধ খেয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করবেন না বা শারীরি সক্ষমতায় পঙ্গুত্ব গ্রাস করে- এমন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার সুযোগ দেবেন না।