সংক্ষিপ্ত
দীর্ঘদিন জলের নিচেই ডুবে ছিল একটি মন্দির
স্থানীয়রা ভুলেই গিয়েছিলেন তার কথা
এবার আবার জেগে উঠল তার মস্তক
আর কী ইতিহাস লুকিয়ে আছে এখানে
দীর্ঘকাল ডুবে থাকার পর মহানদী নদীর বুককে জেগে উঠল প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো মন্দির। ওড়িশার নয়াগড় জেলার এক জায়গায় এই প্রাচীন মন্দিরটিকে সনাক্ত করেছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ (ইনট্যাক)-এর এক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক দল।
গবেষকরা জানিয়েছেন নয়াগড়ের বাইদেশ্বরের কাছে পদ্মাবতী গ্রামের পাশে মাঝ-নদীতে ডুবে রয়েছে ৬০ ফুট উচ্চ এই মন্দিরটি। প্রত্নতাত্ত্বিক দীপক কুমার নায়ক জানিয়েছেন মন্দিরের আরাধ্য দেবতা গোপীনাথ, যিনি ভগবান বিষ্ণুর একটি রূপ। মন্দিরটির 'মস্তক'এর নির্মাণ শৈলী এবং নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত সামগ্রীর বিবেচনা করে মন্দিরটি পনেরশ অথবা ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে। প্রায় ১৫০ বছর আগে এক বন্যার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছিল। মন্দির এবং সংলগ্ন জনপদ পুরোটাই নদীতে তলিয়ে গিয়েছিলয়।
ওই প্রাচীন জনপদের নাম ছিল 'সাতপাটানা', অর্থাৎ সাতটি গ্রামের সমন্বয়। যে পদ্মাবতী গ্রামের কাছে মন্দিরটি পাওয়া গিয়েছে সেই পদ্মাবতী গ্রাম ওই সসাতটি গ্রামেরই একটি ছিল। পদ্মাবতী গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষদের কাছে তাঁরা জেনেছেন, ওই এলাকায় শুধু গোপীনাথ দেবের মন্দিরই নয়, অন্তত ২২টি মন্দির নদীর জলের তলায় রয়েছে। তবে গোপীনাথ দেবের মন্দিরটিই ছিল সবচেয়ে উঁচু। তাই নদীর বুকে মাঝে মাঝে তার 'মাস্তাক' দেখা যেত। শেষবার এই মস্তকের অংশ দৃশ্যমান হয়েছিল ১১ বথর আগে।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ (ইনট্যাক) এর প্রকল্প সহকারী দীপক কুমার নায়ক, রবীন্দ্র রানা নামে স্থানীয় এক ইতিহাস উত্সাহীর সাহায্যে এই মন্দিরটি খুঁজে পেয়েছেন। এই গ্রীষ্মে, নদীর জলের মাত্রা অনেকটাই নেমে যাওয়ায় ফের ৪-৫ দিনের জন্য দৃশ্যমান হয়েছিল গোপীনাথ মন্দিরের মস্তক। তবে শুধু এই একটিই নয়, মহানদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত সমস্ত নিমজ্জিত সৌধগুলিকেই নথিভুক্ত করা হচ্ছে মহানদী প্রকল্পের আওতায়।
এদিকে, নদীতে ডুবে তাকা মন্দির আবিষ্কারের কথা ছড়িয়ে পড়তেই নয়াগড় জেলায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। অননেকেই মন্দিরের মস্তকটি দেখার আশায় নদীর পারে ভিড় জমাচ্ছেন। ওড়িশায় বর্ষা ঢুকে পড়েছে। নদীতেও জল বাড়ছে। এরমধ্যে নদী সংলগ্ন এলাকায় মানুষ বিড় করলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে ভয় পাচ্ছে প্রশাসন। নয়াগড়ের ডেপুটি কালেক্টর লগনজিৎ রাউত বলেছেন, গ্রামবাসীদের মন্দিরটি দেখতে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।