সংক্ষিপ্ত

নিজেরই মৃত্যুর 'সহানুভূতির হাওয়ায়' পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হলেন এক মৃত ব্যক্তি। বিহারের জামুই জেলার এক গ্রামের ঘটনা। 
 

এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটল বিহারের সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Bihar Panchayat Elections 2021)। গত, বুধবার, বিহারে বেশ কয়েকটি এলাকায় পঞ্চায়েত স্তরে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এদিন তার ফল বের হতেই, সরকারি আধিকারিকরা তাজ্জব বনে গেলেন। দেখা গেল, ভোটে জয়ী হয়েছেন এক মৃত ব্যক্তি। তাও আবার, তাঁর নিজেরই মৃত্যুর 'সহানুভূতির ঢেউয়ে' সওয়ার হয়ে। শুনতে যতই অবিশ্বাস্য লাগুক, এই ঘটনা এতটুকু বাড়িয়ে বলা নয় বা এর মধ্যে কোনও চটকের মোড়ক নেই। এতটাই বাস্তব এবং অত্যদ্ভূত এই ঘটনা, যে একে ট্র্যাজেডি বলা হবে, না কমেডি বলা উচিত হবে - তা ভেবে পাচ্ছেন না রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা।  

ভারত এর আগে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর সহানুভূতির হাওয়ায়, রাজীব গান্ধীর রেকর্ড জয় দেখেছে। কিন্তু, নিজের মৃত্যুর সহানুভূতির হাওয়ায়, মৃত ব্যক্তি নিজেই নির্বাচিত হয়েছেন এমন ঘটনা ভারতে কেন, গোটা বিশ্বেই সম্ভবত কখনও ঘটেনি। এমনি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল, বিহারের রাজধানী পাটনা (Patna) থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জামুই (Jamui) জেলায়। ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) সীমান্তবর্তী এই জেলার খয়রা ব্লকের (Khaira block) অন্তর্গত দীপকরহর (Deepakarhar Village) গ্রামে, গত ২৪ নভেম্বর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। এদিন গণনার পর বিজয়ী প্রার্থীদের জয়ের শংসাপত্র হস্তান্তর করতে গিয়েই বিপাকে পড়েন জেলার প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। দেখা যায় বাকি সকল জয়ী উপস্থিত হলেও, ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী প্রার্থী সোহন মুর্মু কোথাও নেই। বারবার ডেকেও তার সাড়া না পাওয়ায়, খোঁজ খবর করেন তাঁরা। জানা যায়, জয়ের শংসাপত্র নিতে সোহনের পক্ষে আসা সম্ভবই নয়। কারণ গত ৬ নভেম্বরই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। 

খয়রা ব্লকের বিডিও রাঘবেন্দ্র ত্রিপাঠী (Raghavendra Tripathi) জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণের একপক্ষকালেরও আগে, সোহনের মৃত্যু হওয়া সত্ত্বেও, তাঁকেই ঝেঁপে ভোট দিয়েছে দীপকরহর গ্রামের মানুষ। ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া একেবারেই প্রত্যন্ত এই গ্রাম দীপহরকর। প্রধানত উপজাতী সম্প্রদায়ের মানুষই এই গ্রামে থাকেন। ১৯৯০-এর দশকে, এই গ্রামেই প্রথম শুরু হয়েছিল নকশালদের (Naxal) কর্মকাণ্ড। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের (Union Home Ministry) প্রকাশিত একটি তালিকা বলছে, তারপর বহু বছর ধরে অতি-বাম আন্দোলনে এই গ্রামের উন্নয়ন থমকে ছিল। তবে, গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে যে এখনও এক আশ্চর্য রকমের সারল্য রয়েছে, এবং, অন্যরকমের মানবিক আবেগের টান রয়েছে, তা এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত। 

কীভাবে ঘটল এই অত্যাশ্চর্য ঘটনা? মৃত্যুর পরও কীকরে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২৮ ভোটে পরাজিত করলেন সোহন মুর্মু? তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনেক আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন সোহন। অনেক আগে থেকেই তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর শেষ ইচ্ছা হল, পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হওয়া। গ্রামবাসীরা, সকলে, তাঁর শেষ ইচ্ছাকেই সম্মান জানিয়েছেন। তবে, কেউ কিন্তু আগে থেকে আলোচনা করে কিছু ঠিক করেননি। ভোটের আগে সবাই মনে মনে সোহন মুর্মুকে ভোট দেওয়ার কথা ঠিক করলেও, এই বিষয়ে মুখে একেবারে কুলুপ এঁটে ছিলেন। সোহনের পরিবার বর্গকেও কেউ জানাননি, যে তাঁরা মৃত সোহনকেই ভোট দিতে যাচ্ছেন। 

বিডিও রাঘবেন্দ্র ত্রিপাঠীও বলেছেন, 'মনে হচ্ছে তাঁর শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানাতেই সবাই তাঁর পক্ষে ভোট দিয়েছেন'। কিন্তু, সোহন মুর্মুর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের এবং তাঁর সহ-গ্রামবাসীদের এই গভার মানবিক আবেগ, জেলা কর্মকর্তাদের কাজ অনেকটই বাড়িয়ে দিয়েছে। মৃত ব্যক্তি ভোটে জিতে গেলেও, তিনি তো আর পঞ্চায়েতের কাজ করতে পারবেন না। তাই খয়রা ব্লকের বিডিও জানিয়েছেন, কাউকেই ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ীর সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না। রাজ্য নির্বাচন কমিশনে তাঁরা চিঠি দেবেন। অনুরোধ করবেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নির্বাচন বাতিল করে নতুন করে ভোটগ্রহণ করার জন্য।