সংক্ষিপ্ত
গোটা এক বছর ধরে একাধিক জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কেন্দ্রকে। বছর শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই সিদ্ধান্তগুলির কয়েকটির দিকে নজর দেওয়া যাক।
২০২১ সালে (year 2021) করোনা মোকাবিলা (deadly COVID-19) থেকে কৃষক বিক্ষোভ (farmers' protest) রোখা-একের পর এক চ্যালেঞ্জ সামনে ছিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের(Prime Minister Narendra Modi and his government)। লাদাখ সীমান্তে চিনা সেনার (border standoff with China) আগ্রাসনের মতো বিষয়ও ছিল মোদী সরকারের মাথাব্যথার কারণ। গোটা এক বছর ধরে একাধিক জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কেন্দ্রকে। বছর শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই সিদ্ধান্তগুলির কয়েকটির দিকে নজর দেওয়া যাক। এর মধ্য গুরুত্বপূর্ণ ছটি সিদ্ধান্ত, যা প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছে জনজীবনে, রইল তার তালিকা।
কৃষি আইন বাতিল :
গত বছরের নভেম্বর থেকে, প্রধানত পঞ্জাব এবং হরিয়ানার হাজার হাজার কৃষক, তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লি সীমান্তে বিক্ষোভ করছিল। মোদী সরকার কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা লাভ হয়নি। একাধিক দফার বৈঠকের পরেও কৃষকদের বোঝাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯শে নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেন যে তার সরকার বছরব্যাপী বিক্ষোভের অবসান ঘটিয়ে এই আইনগুলি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিরোধী সাংসদদের হইহট্টগোলের মধ্যে প্রথমদিনই অর্থাৎ ২৯শে নভেম্বর লোকসভা, কৃষি আইন বাতিল বিল, ২০২১ (Farm Laws Repeal Bill, 2021) পাস করে। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর (Narendra Singh Tomar) বিরোধীদের তীব্র শোরগোলের মধ্যেই লোকসভায় এই বিলটি পেশ করেন। বিরোধী সাংসদরা এই বিষয়ে সভায় আলোচনার দাবি জানাতেই, সরকারের পক্ষ থেকে এই বিলটি পেশ করা হয়।
বিনামূল্যে COVID-19 টিকা :
দ্বিতীয় কোভিড-১৯ ওয়েভে কার্যত বিধ্বস্ত হয় ভারত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকলের জন্য টিকাকরণ অভিযান শুরু করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (UTs) ভ্যাকসিনের ঘাটতির কারণে টিকাদান অভিযান বন্ধ করে দেয়। ফলে বিতর্ক শুরু হয়।
রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি এরপর ভ্যাকসিন ঘাটতির জন্য কেন্দ্র সরকারকে দায়ি করতে থাকে। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে কেন্দ্রের মোদী সরকার। এরপরেই আসে সেই সিদ্ধান্ত। ৭ই জুন প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেন যে কেন্দ্র ২১শে জুন থেকে সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে কেন্দ্র ৭৫ শতাংশ ভ্যাকসিন নির্মাতাদের কাছ থেকে কিনবে এবং রাজ্য সরকারগুলিকে বিনামূল্যে দেবে।
৭টি নতুন প্রতিরক্ষা সংস্থা :
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে ৪১টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (OFB) সংস্থাগুলিকে সাতটি সরকার পরিচালিত কর্পোরেট সংস্থায় রূপান্তরিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এই পদক্ষেপটি ভারতের প্রতিরক্ষা খাতকে 'আত্মনির্ভর' করার লক্ষ্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোদী আরও বলেন এই পদক্ষেপ ভারতে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
মোদী নিজের বক্তব্যে বলেন "আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের আওতায় দেশের লক্ষ্য হল ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক শক্তিতে পরিণত করা এবং ভারতে আধুনিক সামরিক শিল্পের বিকাশ করা। সেই লক্ষ্যেই গত সাত বছরে, দেশ 'মেক ইন ইন্ডিয়া' মন্ত্র নিয়ে এই সংকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল:
জুলাই মাসে, মোদী সরকার দ্বিতীয় কোভিড-১৯ ওয়েভ, আইটি রুলস ২০২১ ও কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য, মোদী সরকার নিজের ক্যাবিনেটে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে আসে। সরিয়ে দেওয়া হয় হর্ষ বর্ধন, রবিশঙ্কর প্রসাদ, রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক এবং প্রকাশ জাভড়েকর সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীকে। তারপরে সাতই জুলাই, মন্ত্রিসভায় রদবদল করা হয়, যেখানে বেশ চমক দিয়ে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, মনসুখ মান্ডাভিয়া এবং সর্বানন্দ সোনোয়ালের মতো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যান:
২০২১ সালে স্বাধীনতা দিবসে, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজের ভাষণে ১০০ লক্ষ কোটি টাকার গতি শক্তি মাস্টার প্ল্যানের ঘোষণা করেন যা দেশে পরিকাঠামোর ভিত্তি তৈরি করবে এবং দেশের অর্থনীতিকে একটি নির্দিষ্ট পথ দেখা পথ দেবে"। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময়, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে এই পরিকল্পনাটি স্থানীয় নির্মাতাদের বিশ্বব্যাপী প্রোফাইল বাড়াতে সহায়তা করবে।
মোদী বলেন আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য একটি সামগ্রিক প্ল্যানিং প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে কেন্দ্র। অদূর ভবিষ্যতে, ভারত প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি জাতীয় পরিকল্পনা নিয়ে বেরিয়ে আসতে চলেছে এবং এটি চালু করতে চলেছে," প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন।
আইটি নিয়ম ২০২১ :
২৫ ফেব্রুয়ারী, কেন্দ্র নতুন আই-টি রুলস, ২০২১ নিয়ে আসে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং ডিজিটাল পোর্টালগুলির জন্য অভিযোগ সমাধান বাধ্যতামূলক করেছে। এই নিয়মগুলি বড় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। বলা হয় ৫ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে এমন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রতি মাসে একটি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। সেগুলির ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে এই নিয়ম কেন্দ্র এবং কিছু ডিজিটাল পোর্টালের মধ্যে একটি সমস্যা তৈরি করে, ডিজিটাল পোর্টালগুলির তরফে দাবি করা হয় নতুন নিয়মগুলি বেআইনি এবং অসাংবিধানিক। যদিও সেই দাবিতে আমল দিতে নারাজ কেন্দ্র নতুন আইনে অটল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিকে তাদের নিয়মগুলিকে মেনে চলতে বলেছে।
ভোটার কার্ড আধার লিংক
বিরোধীদের আপত্তিকে আমল না দিয়ে লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে নির্বাচনী সংশোধনী বিল ২০২১ (Election Laws Amendment Bill 2021)। এই বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, পরিচয় প্রমাণের ক্ষেত্রে ভোটার (Voter) হিসেবে নাম নথিভুক্ত করার জন্য রেজিস্ট্রেশন অফিসার (Registration Officer) আধার কার্ডের (Aadhar Card) নম্বর চাইতে পারেন। এই বিল ভুয়ো ভোটে রাশ টানতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ্বতা নিয়ে আসবে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এই বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ করাতে পারলে তখন শুধুমাত্র আধার কার্ড নিয়ে গিয়ে ভোট দেওয়া যাবে। আর ভোটার কার্ড নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক থাকবে না। সেই সঙ্গে ভোটার কার্ডের (Voter Card) সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণ হলে নাগরিকত্ব বা পরিচয়ের প্রমান পত্র হিসেবে আধারও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তের সময় যদি কেউ আধারের নম্বর দিতে না পারেন তাহলেও তাঁর আবেদন বাতিল করা হবে না। মূলত নতুন করে যাঁরা ভোটার কার্ডের জন্য আবেদন করবেন তাঁদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন অফিসার আধার নম্বর চাইতে পারেন।