সংক্ষিপ্ত
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে আলোচনার দাবিতে স্পিকারকে চিঠি কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর। বিজেপির সাংসদের উদাহরণ দিলেন চিঠিতে।
রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ খারিজ একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ শাস্তি - কিনা তা নিয়ে বিতর্কের দাবিতে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী চিঠি লিখেছেন স্পিকার ওম বিড়লাকে। তিনি আরও বলেছেন ২০১৬ সালে বিজেপির এক সাংসদ আরও কঠিন সাজা পিয়েছিলেন। কিন্তু তার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ করা হয়নি। অধীর তাঁর চিঠিতে লিখেছেন গুজরাটের আমরোলির বিজেপি সাংসদ নারানভাই কাছাদিয়াকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৩২ ধারায় তিন বছরের জন্য কারদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে লোকসভা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করা হয়নি। কিন্তু রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
বিজেপি বিধায়ক নারানভাই কাছাদিয়া স্বেচ্ছায় সরকারি কর্মীকে তাঁর দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ৩৩২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি ১৪৩ ধারায় বেআইনি সমাবেশ করার অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আদালত তিন বছরের কারাদণ্ডেরও নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় লোকসভার স্পিকার বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। কিন্তু রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রে সামান্য মানহানির মামলায় ২ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ কার্যকর হওয়ার পরেই তড়িঘড়ি তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করে দেওযা হয়। আদালত তাঁকে এক মাসে সময়ও দিয়েছিল উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য। যেখানে তিনি জামিন পেতে পারেন। কিন্তু এক মাসও বিজেপি সরকার অপেক্ষা করেনি। তাই রাহুল গান্ধীর ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আধীর চৌধুরী তাঁর চিঠিতে আরও বলেছেন, সুরাটের দায়রা আদালত মানহানি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাহুল গান্ধীর দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজা স্থগিত করেছে। তাই কংগ্রেস নেতারে লোকসভা অসম শাস্তি দিয়েছে। সেই কারণেই এই বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন জনপ্রতিনিধিত্বের আইনের ৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে কোনও জনপ্রতিনিধির সাংসদ পদ খারিজের জন্য দুটি শর্ত পুরণ করতে হবে। একটি হল সদস্যকে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। দ্বিতীয় তাঁকে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। তারপরই তিনি বলেন, শর্তগুলিকে যদি পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাহলে তাঁর দৃষ্টিতে দ্বিতীয় শর্তটি জনপ্রতিনিধিত্বের আইনের নির্ধারিত বিধানের পরীক্ষায় দাঁড়ায় না। কারণ রাহুল গান্ধীর সাজা ইতিমধ্যেই স্থগিত করা হয়েছে।
চার বছরের পুরনো মানহানি মামলায় গতকাল অর্থাৎ সোমবার সুরাটের দায়রা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাহুল। আদালত জামিন মঞ্জুর করেছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর। এদিন তিনি সুরাটের আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন। আদালত থেকে বেরিয়েই রাহুল গান্ধী তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। তিনি মোদীর নাম না করেই বলেন, 'গণতন্ত্র বাঁচাতে মিত্রকালের বিরুদ্ধে এই লড়াই।' এখানেই থেমে থাকেননি রাহুল গান্ধী তিনি বলেনস গণতন্ত্র বাঁচাতে তাঁর হাতিয়ার হল সত্য। সোমবার আদালত থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাহুল গান্ধী একটি টুইট করেন। সেখানেই তিনি নাম না করে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কেন্দ্রীয় সরকার স্বাধীনতার 'অমৃতকাল' পালন করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য এনডিএ জমানায় দেশের অগ্রগতি হয়েছে। যা মানতে নারাজ কংগ্রেস। তাই রাহুলের এই 'মিত্রকাল' মন্তব্য বলেও মনে করছেন অনেকে। সুরাট আদালতের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাহুল গান্ধী তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেছিলেন। যেখানেই তাঁর আবেদনের শুনানি হচ্ছিল। আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। এই মমলার পরবর্তী শুনানিও ১৩ এপ্রিল।