সংক্ষিপ্ত
- কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদের অবসান ঘটাবে দাবি মোদী সরকারের
- সরকারি পরিসংখ্যান বলছে আগের তুলনায় অনেকটাই লাগাম লেগেছে এই ধরণের ঘটনায়
- বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে শ্রীনগরে
- বাকি জেলাগুলিতে পাথর ছোড়ার ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে জম্মু -কাশ্মীরের রাজ্যপাল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রত্যেকেই বারে বারে দাবি করেছেন, ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে জম্মু-কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদের প্রবণতা কমবে। সত্যিই কি তাই? সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা বলে, কাশ্মীরি যুবকদের সন্ত্রাসবাদীদের দলে নাম লেখানোর শুরুটা হয় সেনা সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার মধ্য দিয়ে। সেই ঘটনা কি আদৌ কমল? কী বলছে সরকারি পরিসংখ্যান?
সরকারের তরফে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ৬ অগাস্টের পর থেকে লক্ষ্যনীয়ভাবে কমেছে। তবে ছবিটা অন্যরকম ছিল মাত্র কয়েকটা দিন - ৬ অগাস্ট, বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঠিক পরের দিন। ৯ অগাস্ট, ইদের আগের শুক্রবার। আর, স্বাধীনতা দিবসের আশপাশের দিনগুলিতে। তা বাদ দিলে বাকি দিনগুলিতে উপত্যকায় পাথর ছোড়ার ঘটনা দিন প্রতি এক অঙ্কের সংখ্যায় নেমে এসেছে।
একদিনে সবচেয়ে বেশি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল ৬ অগাস্ট। ওই দিন জম্মু কাশ্মীরের সব জেলা মিলিয়ে মোট পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে ৪৪টি। সেই দিনের পর থেকে ২২ অগাস্ট পর্যন্ত সরকারি হিসেবে পাথর ছোড়ার ঘচটনা ঘটেছে মোট ২৫০টির মতো। এতে মোট ৫৬ জন সিআইরপিএফ জওয়ান আহত হয়েছেন, এবং ২৫টি সেনার গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ তকমা বাতিলের পর পাথর ছোড়ার ঘটনায় লাগাম লাগানো গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। যে সব ঘচটনা ঘটছে, তার বেশিরভাগই অল্প সংখ্যক লোকের জমায়েত থেকে হচ্ছে। আগের মতো বিশষাল জমাযেত দেখা যাচ্ছে না। ফলে তাদের বাগে আনতেও খুব একটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না বাহিনীকে। তারা জানাচ্ছে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে আচমকা সেনাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েই ফের লুকিয়ে পড়ছে কাশ্মীরি যুবরা।
তবে সবচেয়ে বেশি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে রাজধানী শ্রীনগরেই। এর বাইরে মোট পাথর ছোড়ার ঘটনার মাত্র ১২ শতাংশ ঘটেছে পুলওয়ামা, বারামুলা, বন্দিপুর, বুদগাম, গন্দেরবাল জেলায়। এক নিরাপত্তা অধিকারিক জানিয়েছেন, রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ ও সংবাদমাধ্যমের ফোকাসে থাকার কারণেই শ্রীনগরে পাথর ছোড়ার ঘটনা বেশি ঘটছে।
তবে ৬ অগাস্টের আগের সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যাবে, জম্মু-কাশ্মীরে ঠিক কতটা কমেছে পাথর ছোড়ার ঘটনা। ২০১৬ সালে হিজুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্য়ুর পর ৮ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই তারিখের মধ্যে উপত্যকায় ৩৩৮টি পাথর ছোড়ার ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছিল। ১৪৬০জবেরও বেশি সিআর পিএফ জওয়ান আহত হয়েছিলেন, ২০০টির বেশি সেনার গাড়ির ক্ষতি হয়েছিল। শুধু শ্রীনগরেই পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল ৯৯টি। এছাড়া পুলওয়ামায় ৫৫টি, অনন্তনাগে ৪৭টি, বারামুলায় ৪৪টি ও বুদগামে ৩১টি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল।
অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীরে পাথর ছোডা়র ঘটনা যে লক্ষ্যনীয়ভাবে কমেছে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে এটা সরকারি হিসেব। এর আগে বিদেশী সংবাদমাধ্যমে জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রতিবেন বের হলে তাকে প্রথমে সর্বৈব মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পরে অবশ্য ছোটখাট বিক্ষোভের কথা মেনে নেওয়া হয়। শ্রীনগরের সৌরা এলাকা বরাবরই অশান্তির জন্য সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে, নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে ৩৭০ ধারা বাতিলের পরও এই ছবিটার কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। তবে সেইসব বিক্ষোভ সহজেই সামলে নিচ্ছে বাহিনী।