সংক্ষিপ্ত
১১ মাস পর কোলের শিশুকে ফিরে পেলেন কেরলের (Kerala) তিরুঅনন্তপুরমের (Thiruvananthapuram) এক দম্পতি। বাবা-মাকে না জানিয়েই শিশুটিকে দত্তক দিয়ে দিয়েছিল তাঁর দাদু, যিনি স্থানীয় সিপিআইএম নেতা (CPIM)।
জন্মের প্রায় এক বছর পর অবশেষে তার বাবা-মায়ের কোলে যেতে পারল আইদান অনু অজিত। কেরলের (Kerala) এই শিশুটিকে অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) এক দম্পতির কাছে দত্তক দিয়েছিল তার দাদু। শিশুটির অপরাধ ছিল, তাঁর জন্মের সময় তাঁর বাবা-মা বিবাহিত ছিল না। এরপর, সন্তানের দীর্ঘ ১১ মাস ধরে আইনি ও সামাজিক লড়াইয়ের পর, ২৪ নভেম্বর, অবশেষে তিরুঅনন্তপুরমের (Thiruvananthapuram) ভাঞ্চিয়ুর আদালতের (Vanchiyoor Family Court) রায়ে, এক বছরের ছেলে আইদানকে ফিরে পেয়েছেন তাঁর বাবা-মা, অজিত ও অনুপমা। আর, তাঁরা যখন, পরিবার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল - কোনও জায়গা থেকে সাহায্য পাননি, তখন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এশিয়ানেট নিউজ নেটওয়ার্ক। কাজেই এই জয় এশিয়ানেট নিউজ নেটওয়ার্কের সাংবাদিকতার জয়ও বটে।
ঘটনাটি কেরলের তিরুঅনন্তপুরম জেলার। অজিত ও অনুপমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০২০ সালে অবিবাহিত অবস্থাতেই অনুপমার গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল। কিন্তু, অনুপমার বাবা-মা তাঁদের এই সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেননি। কারণ, অজিতের আগে আরেকজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল এবং তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া তখনও চলছিল। তবে অনুপমাকে তাঁর বাবা-মা বলেছিলেন, অনুপমার দিদির বিয়ের হয়ে গেলে তাঁরা সম্পর্কটি মেনে নেবেন। কিন্তু, কথা রাখেননি তাঁরা। বিষয়টিকে আরও ঘোলাটে করে তোলেন অনুপমার বাবা, স্থানীয় সিপিআইএম (CPIM) নেতা জয়চন্দ্রন। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন অনুপমা। জয়চন্দ্রন অনুপমাকে কিছু না জানিয়েই শিশুটিকে আলাদা করে দিয়েছিলেন। অনুপমাকে তাঁর মা বলেছিলেন তাঁর সন্তান ভাল আছে, দিদির বিয়ে হয়ে গেলেই তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হবে।
১১ মাস ধরে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করেছেন অজিত ও অনুপমা
দিদির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর, অবশ্য অনুপমার ভুল ভেঙেছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর পরিবারই তাঁকে ধোকা দিয়েছে। অজিতের সঙ্গে সম্পর্ক তখনও তাঁরা মেনে নেননি, আর সন্তানেরও দেখা পাননি অনুপমা। এরপর সন্তানের জন্য খোঁজ খবর করা শুরু করেছিলেন তিনি ও অজিত। জানতে পারেন, জয়চন্দ্রনই শিশুটিকে কেরালা স্টেট কাউন্সিল ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার (KSCCW) এর মাধ্যমে দত্তক নেওয়ার জন্য দিয়ে দিয়েছিলেন। বাবা-মায়ের সম্মতি না থাকা সত্ত্বেও শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার তালিকায় নথিভুক্ত করার জন্য তিনি শাসক দলের প্রভাবও খাটিয়েছিলেন। শিশুটিকে যাতে অজিত-অনুপমা খুঁজে না পান, তার জন্য তাকে শিশুকন্যা হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের এক নিঃসন্তান দম্পতি তাঁকে লালন-পালন করার ভার নিয়েছিলেন।
এরপরই, প্রায় এগারো মাস আগে, তাঁর নিজের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অনুপমা। আদালতে তিনি বলেছিলেন, তাঁর সন্তানের জন্মের পরই তাঁর বাবা-মা শিশুটিকে অপহরণ করেছিল। অনুপমা আরও জানান, বিভিন্ন শিশু কল্যাণ সংস্থাও, তাঁর প্রভাবশালী বাবাকে এই বিষয়ে সহায়তা করেছিল। তিরুঅনন্তপূরমের এক পারিবারিক আদালত, অনুপমার সেই আবেদনের ভিত্তিতে ওই শিশুটির দত্তক নেওয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। এরপর, শিশুটিকে অন্ধ্র থেকে কেরলে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিল চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (CWC)। অজিত-অনুপমার যুদ্ধটা ছিল দারুণ কঠিন। কেরল পুলিশ (Kerala Police), শিশু কল্যাণ কর্তৃপক্ষ, শাসক দল সিপিআই(এম)'এর রাজনীতিবিদদের বা সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্যই পাননি তিনি। সেই সময় তাঁদের ন্যায়বিচার দেওয়ার দাবি তুলেছিল, এশিয়ানেট নিউজ নেটওয়ার্ক। তারপর একে একে আরও অনেক সংবাদমাধ্য়মই তাঁর পাশে দাঁড়ায়।
বাবা, তথা সিপিআইএম নেতা জয়চন্দ্রনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন অনুপমা
মিডিয়ার চাপে কাজ হয়েছিল। শিশু কল্যাণ কমিটি অনুপমা এবং অজিতের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল। গত সোমবার, ২২ নভেম্বর তাঁরা তিরুঅনন্তপুরমের রাজীব গান্ধী সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজিতে তাঁদের নমুনা জমা দেন। ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় তাঁরাই শিশুটির প্রকৃত বাবা-মা। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আসার একদিন পরই, বুধবার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি আদালতকে জানায়, তারা ওই শিশুটিকে অজিত ও অনুপমার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিন শিশুটিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁর বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাবা-মা তার নাম রেখেছে আইদান। এদিন আইদানকে একটি লাল কম্বলে মুড়িয়ে কোলে নিয়ে, বিজয়ীর হাসি মুখে, ভাঞ্চিয়ুর আদালত থেকে বের হন অনুপমা আর অজিত। শেষ হল তাদের ১১ মাসের দীর্ঘ লড়াই।