সংক্ষিপ্ত
গ্যাস দুর্ঘটনাই বাড়াচ্ছে কোভিড মৃত্যির ঝুঁকি
২০ জন কোভিড মৃতের মধ্যে ১৭ জনই গ্য়াস ক্ষতিগ্রস্ত
আগেই সতর্ক করেছিল স্বেচ্ছাসেবীরা
এতদিনে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার
গ্যাস দুর্ঘটনা কি বাড়িয়ে দিচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও এই রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা? তথ্য বিশ্লেষণ অন্তত সেই উদ্বেগই তৈরি করছে। বৃহস্পতিবার সকালেই বিশাখাপত্তনমে গ্যাস দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্য়ু হয়েছে। এর তিন দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৮৪ সালে মধ্যপ্রদেশের ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড প্ল্যান্ট থেকে মারাত্মক মিথাইল আইসোকায়ান্ট (এমআইসি) গ্যাস লিক করেছিল, যা এখনও অবধি ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর গ্যাস দুর্ঘটনা। সেই সময় যাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদের এখন নিশানা করেছে করোনা, গবেষকরা তাই বলছেন।
ভোপালে এখনও পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের, তারমধ্য়ে ১৭ জনই ১৯৮৪ সালে গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত। এর থেকে একটি স্পষ্ট নকশা পাওয়া গিয়েছে, যে গ্যাস দুর্ঘটনার সম্মুখিন যাঁরা হয়েছিলেন, করোনার হাতে তাদের প্রাণের ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে এই বিষয়ে অনেক আগেই বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উদ্বেগ পপ্রকাশ করেছিল। সেই সময় তাদের কতায় কান না দিলেও ১৭টি মৃত্যুর পর রাজ্য সরকার অবশেষে গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কোভিড সংকটে 'বিশেষ দুর্বল শ্রেণি' হিসাবে বিবেচনা করার সিদদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভোপাল গ্রুপ ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড অ্যাকশন বা বিজিআইএ এই ১৭ জন গ্যাস দুর্ঘটনার সম্মুখিন হওয়া কোভিড-১৯'এ মৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য প্রকাশ করেছে। দেখা যাচ্ছে এই ১৭ জনেরই বাড়ি ইউনিয়ন কার্বাইড প্ল্যান্টের চার কিলোমিটারের মধ্যে। চারজনের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পজিটিভ জানার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও সময় পাওয়া যায়নি, আটজন ভর্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, আর পাঁচজন টিকতে পেরেছেন মাত্র ৪৮ ঘন্টা। নিহতদের মধ্যে দশজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, চারজন ছিলেন ৫০-ঊর্ধ্ব এবং তিনজনের বয়সী ৪৫ বছরের কম। একজন মহিলা ছাড়া বাকি সবাই পুরুষ।
বিজিআইএ-র পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে দেওয়া একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে স্বীকৃত ভোপালের ৫,৭৪,৩৮৫ জন গ্যাস-ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ গ্যাসের সংস্পর্শে আসার ফলে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের ব্যাধি এবং কিডনির অসুস্থতার মতো বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এই ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্যদের থেকে ৭৯ শতাংশ বেশি। আর যাদের দেহে এই রোগগুলির একাধিক বর্তমান, তাদের ক্ষেত্রে প্রাণহানির সম্ভাবনা ২.৫ গুণ বেশি। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে অন্তত ৬০ বছরের বেশি বয়সী এবং একাধিক শারীরিক সমস্যা থাকা গ্যাস ক্ষতিগ্রস্থদের প্রক্যেকের যেন পরীক্ষা করা হয়। কারণ ৮০ শতাংশ কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না।
এরপরই ভোপালের কালেক্টর তরুন পিঠোড়ের নেতৃত্বে একটি প্রশাসনিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ভোপালের ৫০-ঊর্ধ্ব বয়সের গ্যাস ক্ষতিগ্রস্থদের সবাইকে কোভিড-১৯'এর জন্য পরীক্ষা করা হবে। তাদের চিকিৎসার জন্য একটি পৃথক কোভিড-১৯ হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।