দীপক কুমারের আর্থিক দুর্দশার কারণ প্রকাশ্যে। HEC ভারত সরকারের একটি কোম্পানি। এই সংস্থা চন্দ্রযান -৩ নির্মাণ থেকে উৎক্ষেপণে বিশেষভাবে যুক্ত ছিল। 

অবাককাণ্ড! চন্দ্রযান ৩ এখনও চন্দ্রপৃষ্ঠে কাজ করছে। কিন্তু সেই চন্দ্রযান ৩এর লঞ্চপ্যাড তৈরিতে সাহায্যকারী প্রযুক্তিবিদ রাঁচিতে ইডলি বিক্রি করছেন। কিন্তু কেন এমনটা হল? তাই নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দীপক কুমার উপরারিয়া, HEC (হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড)র একজন প্রযুক্তিবিদ। ইসরোর চন্দ্রযান -৩ এক লঞ্চ প্যাড তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই তিনি রাঁচিতে রাস্তার ধারে বসে ইডলি বিক্রি করছেন।

সংবাদ সংস্থা বিবিসি দীপক কুমারের এই দুর্দশার কথা জানিয়েছে। HEC ভারত সরকারের একটি কোম্পানি। এই সংস্থা চন্দ্রযান -৩ নির্মাণ থেকে উৎক্ষেপণে বিশেষভাবে যুক্ত ছিল। সেই সংস্থারই কর্মী দীপক কুমার। কিন্তু সংস্থাটি গত ১৮ মাস ধরে বেতন দিচ্ছে না। তাই আর্থিক অনটনের হাত থেকে রেহাই পেতেই রাস্তার ধারে ইডলির স্টল দিতে বাধ্য হয়েছেন দীপক কুমার।

Scroll to load tweet…

অগাস্ট মাসে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করেছে চন্দ্রযান ৩। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সাফল্যের জন্য ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তিনি লঞ্চপ্যাডের কর্মীদেরও স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময়ও রাঁচিতে এইচইসি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। কারণ তাঁরা গত ১৮ মাস ধরে টানা বেতন পাননি।

টানা ১৮ মাস বেতন না পাওয়ায় এইচইসির কর্মীদের অবস্থা রীতিমত সঙ্গীন। সংসার চালাতে নাজেহাল অবস্থা। এই অবস্থায় পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য দীপক কুমার এর আগে তাঁর একটি ক্রেডিটকার্ডের ওপর নির্ভর করেছিল। ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু অফিস বেতন না দেওয়ায় তিনি ঋণ শোধ করতে পারেননি। ঋণ খেলাপি হয়ে যায়। আর্থিক সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছে হাত পাতেন। প্রায় ৪ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে তিনি ঋণ পরিষোধ করেন। স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন দীপক কুমার। তারপরই সংসার চালাতে রাস্তার ধারে ইডলি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।

প্রযুক্তিবিদ আরও জানিয়েছেন,অনাহারের সময় এসেছে। এটা বুঝতে পেরেই তিনি আয়ের জন্য অন্য উৎস খুঁজতে থাকেন। তিনি বলেছেন, তাঁর স্ত্রী সুন্দর আর সুস্বাদু ইডলি তৈরি করতে পারে। সেই কারণেই এই পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন স্ত্রীর গয়না বিক্রি করেই এই ব্যবসা শুরু করেছেন। বর্তমানে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকার ইডলি বিক্রি করেন তিনি। আয় হয় ১০০-১৫০ টাকা। সেই টাকা দিয়েই কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।

মধ্যপ্রদেশের হার্দা জেলার বাসিন্দা উপারারিয়া। ২০১২ সালে এইচইসিতে ৮ হাজার টাকার বেতনে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু গত ১৮ মাস ধরে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায় বেতন বন্ধ থাকার দরুন। দীপক জানিয়েছেন বেতন বন্ধ থাকায় দুই মেয়ের স্কুলের বেতনও তিনি দিতে পারেননি। স্কুল থেকেও নোটিশ পাঠান হয়েছে। ক্লাসরুমে সন্তানদের অপমান করা হয়েছে। তবে এই মর্মান্তিক দুঃখের কথা শুরুমাত্র দীপক কুমারের একার নয়। তাঁর সহকর্মীদেরও চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। সংস্থাটি বেতন না দেওয়ার কারণে।