সংক্ষিপ্ত
লন্ডনে রাহুল গান্ধীর গণতন্ত্র মন্তব্য নিয়ে উত্তাল সংসদ। অধিবেশন স্থগিত রাজ্যসভার। কিন্তু খাড়গের নিশানায় মোদীর পুরনো ভাষণ।
ব্রিটেনের সংসদে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের জেরে উত্তাল এই দেশের সংসদও। এদিন দফায় দফায় রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। যদিও তার আগেই রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল নাম না করেই রাহুল গান্ধীর তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, কংগ্রেসের এক নেতা লন্ডনে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার জন্য তাঁকে সংসদে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে দেশ তাঁকে ক্ষমা করবে না বলেও জানিয়ে দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় কংগ্রেস। সামিল হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। যদিও কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে তীব্র আপতিতি জানান। তিনি বলেন এটা কখনই হবে না। পাশাপাশি সংসদে আগের দুটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। শাসক ও বিরোধীদের তুমুল উত্তেজনার জন্য রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় সভা মুলতবি করে দেন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে পরে বলেন, 'যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করছে তারাই আবার গণতন্ত্র বাঁচানোর কথা বলেছে।' তিনি সরাসরি নিশানা করেন শাসক দল বিজেপিকে। এদিন বাম, কংগ্রেস-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একজোট হয়ে সংসদভবন থেকে বিজয় চক পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিল করে। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই দেশ শাসন করছেন স্বৈরশাসকের মত। এই দেশে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। এদিন খাড়গে বলেন রাহুল গান্ধী রাজ্যসভার সদস্য নন। তিনি লোকসভার সদস্য। পাশাপাশি তিনি বিজেপিকে মনে করিয়ে দেন, যে কক্ষের সদস্য সেই কক্ষেই তারই বিষয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে সেই নিয়মও মানা হয়নি। তিনি বলেন, 'বিজেপি দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে আর বিজেপিই দেশের গণতন্ত্রকে গর্ব বলে বাঁচানোর কথা বলেছে।' খাড়গে আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতকে অপমান করেছেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, সংযুক্ত আবর আমিরসাহীতে মোদীর বক্তব্যের কথাও উত্থাপন করেন। খাড়গে বলেন, মোদী একটা সময় বলেছিলেন, ভারতীয় হয় জন্ম গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ করেন। এখন তিনি সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। মোদীর এই মন্তব্যও দেশের অপমান বলেও দাবি করেছেন খাড়গে।
গতকালই কর্ণাটকের নসভায় দাঁড়িয়ে রাহুন গান্ধীর নাম করে তাঁর লন্ডন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, 'ভারত শুধুমাত্র বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রই নয়, এই দেশ গণতন্ত্রের জননী। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে লন্ডনে ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কিছু মানুষ ক্রমাগত দেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এই বিশ্বের কোনও শক্তি ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ ইচ্ছেমত দেশের গণতন্ত্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।' এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন ভারতের গণতন্ত্রের ওপর তাঁর পূর্ণ আস্থা হয়েছে। তিনি আরও বলেন লন্ডনে তিনি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনিও একাধিক মূর্তির উন্মোচন করেন। কিন্তু সেই লন্ডনে দাঁড়িয়ে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মোদী এদিন বলেন, ভারতের গণতন্ত্রের ইতিহাস দীর্ঘ পুরনো। তাই এটি আঘাত করলেও কিছু হবে। তবে এজাতীয় মানুষদের সতর্ক থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সেখানে তিনি একাধিক জায়গায় ভাষণ দেয়। সংসদে তিনি বলেন ভারতের গণতন্ত্র বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য কিছুই করছে না। তিনি আরও বলেন, ভারতে তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষিত বলেও তারা হাতগুটিয়ে বসে রয়েছে। রাহুল বলেছিলেন, ভারত বিরোধী রজনৈতিকদলগুলি সুরক্ষিত নয়। তেমনই মিডিয়ারও কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।