সংক্ষিপ্ত
গত কয়েক বছরের ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে ফেলা হচ্ছে গতকালের ওড়িশার এই ঘটনাকে। দেখে নেওয়া যাক শেষ কয়েক বছরের ভয়াবহতম রেল দুর্ঘটনা কোনগুলি।
করমন্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা এখন চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে দেশজুড়ে। যেভাবে হাওড়ামুখী ডাউন বেঙ্গালুরু সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসের লাইনচ্যূত কামরা করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে গিয়ে ধাক্কা মারে এবং যার জেরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কামরা লাইনচ্যূত হয়ে গিয়ে পাশের লাইনে থাকা মালগাড়িতে গিয়ে আছড়ে পড়ে- তা সাধারণ জনমানসে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৩৩ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৯০০ পেরিয়ে গিয়েছে বলেও খবর। বহু জন এখনও দুমড়ে যাওয়া কামরায় আটকে রয়েছেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে যাওয়ার সময় সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিটে ওড়িশার বাহানগা স্টেশনের মুখে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এই বেদনাদায়ক দুর্ঘটনার পরে, সেই ট্রেনগুলির একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে, যেগুলি এখন হয় ডাইভার্ট বা বাতিল করা হয়েছে। এদিকে, গত কয়েক বছরে দেশে যে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছে তারমধ্যে এখন করমণ্ডল এক্সপ্রেসের এই দুর্ঘটনাও তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়েছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক গত কয়েক বছরে ভয়াবহতম রেল দুর্ঘটনা কোনগুলি।
গত কয়েক বছরে ভারতের কিছু ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা
- ৭ জুলাই, ২০১১, উত্তর প্রদেশের ইটা জেলার কাছে ছাপড়া-মথুরা এক্সপ্রেস একটি বাসের সাথে সংঘর্ষে পড়ে। ৬৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে একটি মানবহীন ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি প্রবল গতিতে চলছিল এবং বাসটি প্রায় আধা কিলোমিটার টেনে চলছিল।
- ২০১২ সালকে ভারতীয় রেলের ইতিহাসে রেল দুর্ঘটনার দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল। এই বছর প্রায় ১৪টি দুর্ঘটনার রিপোর্ট করা হয়েছে, যার মধ্যে লাইনচ্যুত এবং মাথার উপর সংঘর্ষ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।
- ৩০ জুলাই, ২০১২ তারিখে, নেলোরের কাছে দিল্লি-চেন্নাই তামিলনাড়ু এক্সপ্রেসের একটি কোচে আগুন লেগে ৩০ জনেরও বেশি লোক মারা যায়।
- ২৬ মে, ২০১৪ তারিখে, উত্তর প্রদেশের সন্ত কবির নগর এলাকায়, গোরখপুরের দিকে রওনা হওয়া গোরখধাম এক্সপ্রেসটি খলিলাবাদ স্টেশনের কাছাকাছি একটি থামানো পণ্য ট্রেনের সাথে সংঘর্ষে পড়ে, যার ফলে ২৫ জন মারা যায় এবং ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়।
- ২৯শে মার্চ, ২০১৫ তারিখে দেরাদুন থেকে বারাণসীগামী জনতা এক্সপ্রেসে একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে। উত্তরের রায়বেরেলির বাচরাওয়ান রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ট্রেনের ইঞ্জিন এবং দুটি সংলগ্ন বগি লাইনচ্যুত হলে ৩০ জনেরও বেশি লোক মারা যায় এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়।
- ২০ নভেম্বর, ২০১৬-এ ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেস ১৯৩২১ কানপুরের পুখরায়ানের কাছে লাইনচ্যুত হয়, কমপক্ষে ১৫০ জন যাত্রী নিহত হয় এবং ১৫০ জনেরও বেশি আহত হয়।
- ১৯ আগস্ট, ২০১৭-এ, হরিদ্বার এবং পুরীর মধ্যে চলমান কলিঙ্গ উৎকল এক্সপ্রেস উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের খাতৌলির কাছে একটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। ট্রেনের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ২১যাত্রী নিহত এবং ৯৭ জন আহত হন।
- ২৩ আগস্ট, ২০১৭-এ দিল্লিগামী কাইফিয়াত এক্সপ্রেসের নয়টি ট্রেনের বগি উত্তরপ্রদেশের আউরিয়ার কাছে লাইনচ্যুত হয়, যার ফলে কমপক্ষে ৭০ জন আহত হয়।
- ১৩ জানুয়ারী, ২০২২-এ, পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের কমপক্ষে ১২টি বগি লাইনচ্যুত হয়, ৯ জন মারা যায় এবং ৩৬ জন আহত হয়।
করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় আরও বাড়ল মৃতের সংখ্যা। শনিবার ভোর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ২৩৩। আহত প্রায় ৯০০। রেল মন্ত্রকের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেছেন, যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট করোমন্ডেল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগির লাইনচ্যুত বগিকে আঘাত করেছিল যা বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং বিপরীত ট্র্যাকে ছিটকে পড়ার জেরেই এই দুর্ঘটনা। বালেশ্বরে এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। ওড়িশার দমকল বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু ষড়ঙ্গী জানিয়েছেন, শনিবার ভোর পর্যন্ত উদ্ধার করা গিয়েছে ১২০টিরও বেশি মৃতদেহ। ইতিমধ্যেই দু'শো ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। উদ্ধারকাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে এখনও আটকে রয়েছেন বহু যাত্রী। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী।