সংক্ষিপ্ত

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতারণা পদ্ধতিতে পিছিয়ে পড়াই শুধু নয়, গোটা দেশ জুড়ে জামতাড়ার প্রতারণাচক্রের নাম এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে এই জেলা অপরাধের ১ নম্বর স্থান থেকে পিছিয়ে ৫ নম্বরে চলে গিয়েছে।

আইআইটি কানপুরের সহায়তায় ভারতের সাইবার ক্রাইমের হিসেব সমীক্ষা করে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সাইবার অপরাধে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়াকে ছাড়িয়ে ১ নম্বরে উঠে এসেছে রাজস্থানের ভরতপুর। বিভিন্ন উপায়ে সারা ভারতের মানুষকে ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা লুঠ করাই এখন এই জেলার তরুণ-যুবদের ‘কুটির শিল্প’। নতুন সমীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ থেকেও দশটি জেলাকে সাইবার অপরাধের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকা তপন ব্লকও এই তালিকায় রয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া মোট সাইবার অপরাধের মধ্যে ১৮ শতাংশ গড় নিয়ে রাজস্থানের ভরতপুর বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে, ১২ শতাংশ অপরাধের উৎসস্থল হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের মথুরা। তৃতীয় স্থানে হরিয়ানার নুহ। সাইবার জালিয়াতির খতিয়ানে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর। ভারতের মোট সাইবার অপরাধের দশ শতাংশের এই অঞ্চল। ৯.৬ শতাংশ অপরাধ হয় জামতাড়ায়, এই জেলা এখন রয়েছে পঞ্চম স্থানে।

রিপোর্ট বলছে, দেশের সাইবার ক্রাইমের ট্রেন্ড অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত অপরাধ হয়েছে ১২ শতাংশ। অনলাইন ফিনান্সিয়াল ফ্রড হয়েছে ৭৭ শতাংশ। আবার এই ফিনান্সিয়াল ফ্রডের ক্যাটাগরিতে শুধুমাত্র ইউপিআই সংক্রান্ত প্রতারণা হয়েছে ৪৭ শতাংশ। বাকি ১১ শতাংশ অন্যান্য প্রতারণা। যার অধিকাংশই সাধারণ মানুষের লোভ এবং ভয়ের ফল।

সেক্সটরশন (বন্ধুত্ব পাতিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কলে ছবি তুলে অশ্লীলভাবে এডিট করে ব্ল্যাকমেল), ওএলএক্স ফ্রড (ই-কমার্সে জিনিস বিক্রির নামে প্রতারণা) কিংবা কাস্টমার কেয়ারের নামে ভুয়ো নম্বর দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নিত্য নতুন ফন্দি এঁটে রাজস্থানের ভরতপুরের প্রতারকরা দেশ জুড়ে কারবার ফেঁদে বসেছে, তাদের আঞ্চলিক নাম হল ‘টাটলুবাজ’। জামতাড়া পুরনো লোক-ঠকানোর পদ্ধতি থেকে এখনও নতুন পদ্ধতিতে পৌঁছতে পারেনি। ওখানকার প্রতারকদের স্থানীয় নাম ‘সাইবার’। এরা এখনও ওটিপি স্ক্যাম, কেওয়াইসি ফ্রড, ইলেকট্রিক বিল স্ক্যাম কিংবা কেবিসি ফ্রডের মতো পদ্ধতিই বেছে নিচ্ছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতারণা পদ্ধতিতে পিছিয়ে পড়াই শুধু নয়, গোটা দেশ জুড়ে জামতাড়ার প্রতারণাচক্রের নাম এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে এই জেলা অপরাধের ১ নম্বর স্থান থেকে পিছিয়ে ৫ নম্বরে চলে গিয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে মূলত ঝাড়খণ্ডের এই ছোট্ট জনপদ সাইবার ক্রাইমকে ব্যবসায় পরিণত করে। দেশ জুড়ে দেদার মানুষকে বুদ্ধু বানিয়ে টাকাও লুটে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। এতেই টনক নড়ে পুলিশ-প্রশাসনের। খুব দ্রুত ওই এলাকার অপরাধীরা গোটা দেশের নজরে পড়ে যায়। তখন অপরাধীদের বিরাট অংশ ঝাড়খণ্ড ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে।

সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জামতাড়ার অপরাধীরা এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গিয়েছে। অপরাধের চক্রটাও বিরাট আকার নিয়েছে। রাজস্থানের ভরতপুর জেলা দিল্লি, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের কাছাকাছি, তাই অপরাধ করেই পাশের রাজ্যে পালিয়ে যাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। তাদের পাকড়াও করাও জটিল হয়ে যাচ্ছে।