সংক্ষিপ্ত
কৃষকদের পর দিল্লির রাস্তায় আন্দোলনে ডাক্তাররা (Delhi Doctors Protest)। দিল্লি পুলিশের (Delhi Police) বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তাঁদের, কেন বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা?
কৃষকদের পর আন্দোলনে ডাক্তাররা (Delhi Doctors Protest)। সোমবার দিল্লিতে দৈনিক করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবথেকে বেশি বেড়েছে। ভারতে তৃতীয় তরঙ্গের উদ্বেগ তৈরি করছে ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট। তারমধ্য়েই, রাজধানীর চিকিৎসা পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিলেন দিল্লির কয়েকশ আবাসিক ডাক্তার (Resident Doctors)। এনইইটি স্নাতকোত্তর (NEET-PG) পরীক্ষা হওয়ার দীর্ঘদিন পরও কলেজ বরাদ্দ না করার প্রতিবাদের বিরুদ্ধে, নির্মম পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এই অবস্থায় সোমবার ডিসেম্বরের শীতল রাতে দিল্লির সরোজিনি নগর পুলিশের স্টেশনের (Sarojini Nagar Police Station ) সামনে অবস্থানে বসেছেন হাজার হাজার ডাক্তার।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিট-পিজি কাউন্সেলিং হচ্ছে না, কলেজ বরাদ্দ করা আটকে আছে। মেডিকেলে ভর্তিতে সংরক্ষণ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court of India)। সেই মামলা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তি করে অবিলম্বে এই কাউন্সেলিং ও কলেজ বরাদ্দ করার দাবিতে গত এক মাস ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন বা ফোরডা (FORDA)। এদিন, তাদের বেশ কয়েকটি কর্মসূচি ছিল। সংগঠনের সভাপতি মনীশ নিগম (Manish Nigam) জানিয়েছেন, বিপুল সংখ্যক আবাসিক চিকিৎসক এদিন প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে তাদের অ্যাপ্রন বা ল্যাব কোট ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরপর মৌলানা আজাদ মেডিকেল কলেজ (MAMC) ক্যাম্পাস থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মিছিল করতে যেতেই দিল্লি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান ডাক্তাররা।
ফোরডার সদস্যরা জানিয়েছেন, মিছিল শুরু করার পরপরই, তাদের আটকেছিল পুলিশ। বেশ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলনে পুলিশের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের অভিযোগ করেছেন। মহিলা ডাক্তারদেরও গায়ে হাত দিয়েছেন পুরুষ পুলিশ কর্মীরা, এমন অভিযোগও করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আবাসিক চিকিৎসক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ছেন বলে জানা গিয়েছে। এই সংঘর্ষের বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্য়াল মিডিয়ায়। সেগুলির কোনওটিতে ডাক্তারদের চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ কর্মীদের। কোথাও গালিগালাজ করতে দেখা গিয়েছে। আবার কোথাও দুদিক দুই পুরুষ পুলিশকর্মী চেপে ধরে মহিলা ডাক্তারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন ছবিও ধরা পড়েছে। ফোরডার সভাপতি মনীশ নিগমের অভিযোগ, এরপর তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসের দিকে মিছিল করতে গেলে, তাঁদের ৪,০০০ সদস্যকে সরোজিনী নগর থানায় আটক করা হয়েছে।
তবে, দিল্লি পুলিশ অত্যধিক বলপ্রয়োগ বা গালিগালাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, মাত্র ১২ জন বিক্ষোভকারী ডাক্তারকে আটক করা হয়েছিল, পরে তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। পুলিশের দাবি, ছয় থেকে আট ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভকারী দিল্লির অন্যতম প্রধান রাস্তা আইটিও মার্গের (ITO Marg) একটা অংশ অবরোধ করে রেখেছিল। তাদের ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও, তারা শোনেনি। পরে, আইটিও মার্গের দুদিকের ক্যারেজওয়েও অবরোধ করলে পরে, পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। পুলিশের আরও অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সময় তারা পুলিশ কর্মীদের ইউনিফর্ম ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এমনকী, পুলিশের গাড়ির কাচও ভেঙে দিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে।
গত শনিবারই আবাসিক ডাক্তারদের সংগঠন সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, তাদের দাবিগুলি শীঘ্র পূরণ না করা হলে, তারা পরিষেবা থেকে গণ ইস্তফা দেবেন। তারা জানিয়েছেন, কাউন্সেলিং-এ দেরি হওয়ায় তিনটি বড় সরকারি হাসপাতাল-সহ বহু হাসপাতালের রোগীর চিকিৎসা প্রভাবিত হচ্ছে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, নিট-পিজি কাউন্সেলিংয়ে দেরি হওয়ায় একটা পুরো ডাক্তারদের দল মেডিক্যাল কলেজে ঢুকতে পারছে না। ফলে, মাত্র ৬৬ শতাংশ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই সকলেরই অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে। ওমিক্রন সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে যদি ডাক্তাররা বেঁকে বসেন, তাহলে যে মোদী সরকার বড় সমস্যায় পড়বে, তা বলাই বাহুল্য।