সংক্ষিপ্ত
কোভিড মহামারির মধ্য়েই দেশে হানা বার্ড ফ্লুর
কিন্তু, তার নেপথ্যে কি রয়েছে অন্য কাহিনি
পাখিদের মৃত্যুর আসল কারণ কি জিও-র ফাইভজি পরীক্ষা
কী জানা গেল তথ্য যাচাই-এ
কোভিড মহামারির মধ্য়েই গত কয়েকদিন ধরে দেশে বাড়ছে বার্ড ফ্লুর আতঙ্ক। এরি মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে ভাইরাল হয়েছে একটি বার্তা। হিন্দি ও ইংরাজি ভাষাটয় সেইসব পোস্টে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ভারতে রিলায়েন্স জিও সংস্থা ফাইভজি যোগাযোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালচ্ছে। আর তার বিকিরণের কারণেই বিভিন্ন রাজ্যে মারা পড়ছে পাখিরা। আর সেই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই মানুষকে মিথ্যা বার্ড ফ্লু সংক্রমণের কাহিনি বলা হচ্ছে। বিভ্রান্ত করা হচ্ছে তাদের।
নিঃসন্দেহে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। যদি দাবি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে বাস্তুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। এই নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা। প্রথমেই জানার জচেষ্টা করা হয়, ভারতে কোনও সংস্থাকেই ফাইভজি ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে কিনা কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি বা ট্রাই, এই সংক্রান্ত এক স্বেতপত্র প্রকাশ করে বলেছিল, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে ফাইভজি চালু করা হবে। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে চলা এই প্রতিযোগিতায় ভারত এখন অন্যান্য দেশের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন এই বহুল প্রতীক্ষিত পরীক্ষা শীঘ্রই শুরু করা হবে।
এরপর, খোঁজ লাগানো হয় রিলায়েন্স জিও সংস্থার ফাইভজি প্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে। সংস্থার পক্ষ থেকে বর্তমানে এই সংক্রান্ত কোনও পরীক্ষার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছে, সরকার অনুমতি না দিলে পরীক্ষার প্রশ্নই নেই। গত ডিসেম্বরেই সংস্থাটি বলেছিল, ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে তারা ফাইভজি পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা করেছে। মার্কিন সংস্থা কোয়ালকমের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ফাইভজি প্রযুক্তির উন্নয়নের কাজ করছে রিলায়েন্স জিও। এই প্রযুক্তির পরীক্ষা এখন পর্যন্ত ভারতে না হলেও ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয়ে গিয়েছে।
তৃতীয় প্রশ্ন হল, ফাইভজি প্রযুক্তি কি কোনওভাবে পাখিদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে? ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের এক পার্কে অজ্ঞাত কারণে বেশ কয়েকটি পাখির মৃত্যু হওয়ার পর, প্রথমবার ফাইভজি সেলুলার নেটওয়ার্ক-এর পরীক্ষাকে পাখির মৃত্যুর কারণ হিসাবে দায়ী করা হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেক ওয়েবসাইটগুলি সেই দাবি নস্যাত করে দিয়েছিল। পাখির উপর সেলুলার নেটওয়ার্ক-এর বিকিরণের প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী বহু গবেষণা হলেও, এখনও এর স্পষ্ট কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
পরের প্রশ্ন ভারতে বার্ড ফ্লু হচ্ছে এটা কি নিশ্চিত? কেন্দ্রীয় সরকার পশুপালন ও গবাদিপশু বিভাগ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, দেশের যে যে অংশ থেকে পাখিদের গণ-মৃত্যুর খবর আসছে, তার বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনায় এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অর্থাৎ বার্ড ফ্লু ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। মৃত পাখিদের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠিত গবেষণাগারে এই বিষয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
উপরের এই সবকটি প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে, বোঝাই যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পোস্টে যে দাবি করা হয়েছে, সেটি সত্যি নয়। পাখির মৃত্যুর পিছনে আসল কারণ রিলায়েন্স জিও-র ফাইভজি পরীক্ষা নয়। বস্তুত, ভারতে এখনও এই পরীক্ষা শুরুই হয়নি। কেন্দ্র এই বিষয়ে অনুমোদন দেয়নি। আর বার্ড ফ্লু সংক্রমণ নিয়ে মানুষকে মিথ্যা বলে বিভ্রান্তও করা হচ্ছে না। দেশের কিছু অংশে সত্য়ি সত্যিই হঠাৎ এভিয়ান ফ্লু ভাইরাস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। আর তা এখন যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।