সংক্ষিপ্ত
হরিদ্বারের ধর্ম সংসদে বিদ্বেষমূলক ভাষণের মামলায় এফআইআরে যুক্ত করা হল আরও দুইজনের নাম। তবে এখনও নিজেদের বক্তব্যে অটল তারা।
সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসায় উস্কানি দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে হরিদ্বারের আয়োজিত একটি ধর্ম সংসদ। সেই মামলায় পুলিশ শনিবার স্বামী ধর্মদাস মহারাজ (Swami Dharam Das Maharaj) এবং সাধ্বী অন্নপূর্ণা (Sadhvi Annapurna) - এই দুই ব্যক্তির নামও যুক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন হরিদ্বারের এসপি সিটি শেখর সুয়াল। এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর, পুলিশ এই মামলায় ওয়াসিম রিজভি (Wasim Rizvi) ওরফে জিতেন্দ্র ত্যাগী (Jitendra Tyagi) এবং আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিল। তবে, এখনও অবধি কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি এবং বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্তরাও এখনও পর্যন্ত তাঁদের বক্তব্যে অটল রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবারই, এই মামলায় জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী এবং আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ম, জাতি, জন্মস্থান, বাসস্থান, বা ভাষার ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচার করার অভিযোগ আনা হয়েছে। জিতেন্দ্র ত্যাগী, এই মাসের শুরুতেই হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। আগে ছিলেন তিনি ওয়াসিম রিজভি, ধর্মান্তরিত হয়ে জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী হয়েছে। গত সপ্তাহে হরিদ্বারে যে ধর্ম সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে তাঁর এবং অন্যান্য বক্তাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত উত্তেজক বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এই সমাবেশের বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এইসব ভিডিওয় বক্তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হরিদ্বারের জ্বালাপুর এলাকার এক বাসিন্দার অভিযোগের ভিত্তিতে এই এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপগুলি সম্পর্কে কোনও ব্যবস্থাই নিতে দেখা যাচ্ছে না পুলিশকে। এই সম্পর্কে উত্তরাখণ্ডের পুলিশ আধিকারিকরা বলেছেন, ঘটনার কোনও ভিডিও ফুটেজ নাকি এখনও পুলিশের কাছে নেই। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
গত ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর হরিদ্বারের জ্বালাপুরের বেদ নিকেতনে (Ved Niketan, Jwalapur) ধর্মসভার নামে ওই ঘৃণা-ভাষণের আসর বসানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) নেতা তথা আরটিআই কর্মী সাকেত গোখলে (Saket Gokhle)। হরিদ্বারের (Haridwar) ওই ধর্ম সংসদের ভিডিও ফুটেজগুলির তীব্র নিন্দা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন প্রাক্তন নৌসেনা (Indian Navy) প্রধান অরুণ প্রকাশ (Arun Prakash), প্রাক্তন সেনাপ্রধান (Indian Army) জেনারেল ভিপি মালিক (General VP Malik), অভিনেত্রী স্বরা ভাস্বর (Swara Bhaswar), টেনিস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভারা (Martina Navratilova)।
সমাবেশের আয়োজক এবং বক্তা - সকলেই উস্কানিঘৃণামূলক বক্তব্য রাখার বিষয়ে দাগী। যতি নরসিংহনন্দ (Yati Narasimhanand), পূজা শকুন পান্ডে (Pooja Shakun Pandey) ওরফে সাধ্বী অন্নপূর্ণা (Sadhvi Annapurna), বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়, হিন্দু রক্ষা সেনার (Hindu Raksha Sena) প্রবোধানন্দ গিরি (Prabodhanand Giri), বিজেপি মহিলা শাখার নেত্রী উদিতা ত্যাগী (Udita Tyagi) স্বামী ধর্মদাস মহারাজকে (Swami Dharam Das Maharaj) - প্রত্যেকেই এর আগেও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য করার জন্য শিরোনামে এসেছেন।
তবে, এফআইআর-এর পরও এই ব্যক্তিরা কেউই ঘৃণামূলক বক্তব্যের জন্য এতটুকু অনুতপ্ত নন। ধর্ম সংসদের উপস্থিত থাকা আনন্দ স্বরূপ শনিবারও সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেছেন, 'আমরা আমাদের বক্তব্যে অটল আছি, যা বলা হয়েছে, ভালভাবে ভাবনা-চিন্তা করেই বলা হয়েছে। কেউ যদি আমাদের বোনকে ধর্ষণ করে, আমরা কি তাকে হত্যা করব না? বক্তারা এমন ব্যক্তিদেরই হত্যা করার কথা বলেছেন, সাধারণ মুসলমানদের নয়, যারা আমাদের বন্ধু। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।'