সংক্ষিপ্ত
এপ্রিল থেকে বেড়েছিল চিনা সেনার গতিবিধি
প্যাংলং লেকে সংঘর্ষের আগেই তৎপর ছিল চিনারা
তেমনই বলছে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট
দাবি ডেমচকের ওপারে মোতায়েন ছিল ১০০ যুদ্ধ যান
পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ সীমারেখার এলাকায় প্রথম চিনের পিপিলস লিবারেশন আর্মির যাতায়াত শুরু হয়েছিল এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। আর চিনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ সীমা রেখার কাছে আস্তানা তৈরির প্রায় দুসপ্তাহ পর প্যাংগং লেক এলাকায় ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে পাওয়া খবরে তেমনই দাবি করা হয়েছে। তবে সেনা বাহিনী সূত্রে খবর তাঁদের কাছে এই জাতীয় কোনও খবরই ছিল না। মে মাসেই সেনার কাছে প্রথম খবর যায় যে লাদাখ সীমান্তে বাড়ছে চিনা সেনার জমায়েত।
এক গোয়েন্দা কর্তার কথায় এপ্রিলের মাঝামাঝি তাঁদের হাতে প্রথম রিপোর্ট আসে। তাঁর কিছুদিন পরেই নির্দেষ্ট তথ্য তাঁরা পেয়ে গিয়েছিলেন। আর সেই তথ্যে বলা হয়েছিল চিনা সেনা সাঁজোয়া গাড়িগুলি সীমান্তের ওপারে মোতায়েন করা হয়েছে। ডেচেকের বিপরীতে বেশ কয়েকটি এলাকায় রীতিমত অগ্রসর হয়েছিল লালফৌজ। গোয়েন্দাদের দাবি প্রায় একশো সরম যান আনা হয়েছিল। যদিও সরকারি এক কর্তার দাবি লাদাখ ইস্যুতে সরকারকে রীতিমত অন্ধকারে রাখা হয়েছিল।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি সংকটের সময় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ সীমারেখা এলাকায় চিনা সেনার পদক্ষেপ রুখতে একই রকমভাবে কাজ করেছে। চিনা সেনা মূলত একটি আস্থা লঙ্ঘন প্রশিক্ষণ অনুশীলন করছিল। আর তাইথেকে সেনাবাহিনীকে স্ট্যান্ডঅফ সাইটগুলিতে সরিয়ে নিয়েছিল।
লাদাখ সীমান্তে বিপুল সংখ্যক চিনা সেনাবাহিনীর হঠাৎ জমায়েত হওয়া এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবার একাধিক স্থানে অনুপ্রবেশ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ দুবছর আগেই যৌথ গোয়েন্দা কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর গোয়েন্দারা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন। তাঁদের কাজের পদ্ধতিগত পরিবর্তনও হয়েছে।
এক গোয়েন্দা কর্তা ভারতীয় সেনাপ্রধান এমএম নারাভানের বিবৃতি উল্লেখ করে বলেছেন, পূর্ব লাদাখ ও সিকিমে ভারত ও চিনা সেনাদের সংঘর্ষ নতুন কোনও ঘটনা নয়। এটি প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এটি বড় কোনও পরিকল্পনাও ছিল না বলে দাবি করা হয়েছে সেনা বাহিনী সূত্র।
প্যাংগং লেক এলাকায় প্রথম সংঘর্ষ ঘটে গত ৫-৬ মে। তারপরই গত ৯ মে সিকিম সীমান্ত সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিল দুই দেশ। একটি সূত্র বলছে প্রথম দিকে এক সংঘর্ষগুলিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চায়নি সেনা। তাঁদের কথায় এই জাতীয় সংঘর্ষই প্রায়সই ঘটে থাকে সীমান্তে। সেনাবাহিনী প্রথম চিনা সেনার অনুপ্রবেশকে গুরুত্ব দেয় প্যাংগং লেকের ফোর ফিঙ্গার এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর। গত ১৭-১৮ প্যাংগং এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল দুই দেশ। এরপরই ১৮ মে চিন স্টাডি গ্রুপের প্রথম বৈঠক হয়। সেখানে লাদাখ সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।
এক কর্মকর্তার কথায় চিনা সেনার এই জাতীয় কাজের জন্য আগামী দিনে গোটা দেশকেই সতর্ক থাকতে হবে। চিনা সেনা ভারতের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করেছে। ভারতীয় সেনা মনে করছে চিনা সেনা সীমান্তে অনুশীলন করছিল। প্রায় ২০০ কিলোমিটার একালায় আচমকাই গতিবিধি বাড়িয়ে দিয়েছিল। পাশাপাশি খুব তাড়াতাড়িই সংঘর্ষস্থান থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছিল চিন।
সেনা বাহিনী সূত্রে খবর প্রতি গ্রীষ্মেই প্রশিক্ষণ আর অনুশীলনের জন্য লাদাখে রিজার্ভ বিভাগের ব্রিগেড আনা হয়। কিন্তু চলতি বছর করোনাভাইরাস মহামারীর আকার নেওয়ায় সেই পথে হাঁটা হয়নি। লে-তে যে সেনা বাহিনী কর্মরত চিনা সেনার গতিবিধি জানার পর দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যবস্থা করে। পরবর্তীকালে আরও অতিরিক্ত সেনা ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল। পূর্ব লাদাখ এলাকায় পর্যাপ্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন এক সেনা কর্তা।
অন্যদিকে গোয়েন্দা কর্তার কথায় তিব্বতে চিনা সেনার গতিবিধি কোনও গোয়েন্দা ইনপুটের ওপর ভিত্তি করে না। চিনা সেনার তৎপরতাই প্রমান করে যে তাদের খারাপ অভিপ্রায় ছিল। প্রাক্তন এক গোয়েন্দা কর্তার কথায় কার্গিলের মতই পরিণতি হতে যাচ্ছিল লাদাখে। কারণ ১৯৯৯ সালে গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল দায়িত্ব প্রাপ্ত আধিকারিকরা। এখানেও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল।
এক গোয়েন্দা কর্তার কথায় জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল সচিবালয়ের কাঠামোর সংস্কারের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে জেআইসি বিলুপ্তি হয়। তারপর ২০১৮সালেই জেআইসির কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানটি অভ্যন্তরীন সুরক্ষার জন্য উপ জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টার কার্যালেয়র পরিবর্তে আরও দুজন উপ এনএসএ এবং সামরিক উপদেষ্ঠার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। গোয়ান্দা ইনপুটগুলি এখন তিন কর্তা বিশ্লেষণ করেন।