সংক্ষিপ্ত

মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের কাছে হিরো। মন্দির তৈরি করেই হচ্ছে তাঁর পুজো। আদর্শের চর্চাও হয় সেখানে।

 

গান্ধী হত্যাকারী ভারতের কট্টর হিন্দুদের কাথে একজন হিরো। তেমনই মনে করেন অশোক শর্ম। তিনি কট্টোর হিন্দু। তিনি মনে করেন মহাত্মা গান্ধী নন, সেই ব্যক্তিই ঠিক কাজ করেছেন যিনি তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছেন। অশোক কুমার শর্মা গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে উৎসর্গ করা একটি মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক। নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ সালে ৩০ জানুয়ারি গান্ধীকে হত্যা করেছিলেন।

এই দেশে দীর্ঘদিন ধরেই নাথুরাম গডসেকে নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু প্রায় এক দশক আগে হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শে তৈরি করা একটি বিকল্প ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করার জন্য গডসের মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। সেই মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছে অশোক শর্মা। তাঁর সহযোগীরা নিত্য সেখানে যান। গডসের আদর্শ নিয়ে চর্চা করেন। তবে অশোক শর্মার কাছে এই পথটি খুব একটা সহজ ছিল না। অনেক কাঁটা বিছান পথ পার হতে হয়েছিল।

অশোক শর্মা জানিয়েছেন, গডসের আদর্শ আঁকড়েধরার জন্য তাঁর পরিবার , তাঁর বন্ধুবান্ধব সকেলই তাঁকে ছেড়ে চলেগেছে। কিন্তু আজ তিনি নিজেকে গডসের শিশ্য হওয়ার জন্য সম্মান জানান। নয়াদিল্লি থেকে কিছু দূরে মিরাট শহরে একটি মাজার তৈরি করে সেখানেই গডসের উপাসনা করেন অশোক। তিনি আরও বলেন, 'দেশে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে গডসে প্রকৃত দেশপ্রেমিক। গান্ধী একজন বিশ্বাসঘাতক।'

অশোক শর্মা ২০১৫ সালে মন্দির কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই দেশের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পরেই তিনি মন্দির তৈরি করেছিলেন। যদিও তাঁর এই প্রচেষ্টা ছিল দীর্ঘ দিনের। কিন্তে আগের সরকারগুলি তাঁর প্রচেষ্টা বানচাল করে দিয়েছিল। সেই সময় গডসের মন্দির তৈরি চেষ্টা করার জন্য তাঁকে জেলেও যেতে হয়েছিল। এই মন্দিরে স্থান পেয়েছে গডসে আর তাঁর সহযোগী নারায়ন আপ্তে। তিনি জানিয়েছেন মূর্তিগুলি ছোট হলেও এখন এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।

অশোক শর্মা ও তাঁর সহযোগীরা গডসের মূর্তির সামনে প্রতিদিন প্রার্থনা করেন। ধর্মীয় উপদেশগুলির স্ত্রোত হিসেব পাঠ করেন। তাঁদের বক্তব্যের সার কথা হল গান্ধীজি ব্রিটেনের উপনিবেশকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বিভক্ত হওয়া থেকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণাতে বাধা দিয়েছিলেন।

অশোক শর্মার এক সহযোগী অভিষেক আগরওয়াল বলেন, গান্ধী ও তাঁর আদর্শের কারণে ভারত বিভক্ত হয়েছিল। মুসলমান ও বহিরাগতদের সামনে হিন্দুদের মাথা নত করতে হয়েছিল। তিনি আর অশোক শর্মা দুজনেই শতাব্দী প্রাচীন হিন্দু মহাসভার সদস্য বলেও জানিয়েছেন। অভিষেক আরও জানিয়েছেন গডসেকে স্বাধীনতা পরবর্তী ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদরা হেয় করেছিলেন। যা হিন্দুদের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র বলেও অনেকে মনে করেন।

নাথুরাম গডসে ১৯১০ সালে ভারতের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন এক ডাককর্মীর ছেলে। খুব অল্প বয়সে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য হন। তাঁর যখন ৩৭ বছর বয়স তখন তিনি গান্ধীজিকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। তারপরই আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। গান্ধীজিকে হত্যার আভিযোগে তরুণ ধর্মীয় ব্যক্তিকে ১৯৪৯ সালেই ফাঁসিতে ঝোলান হয়েছিল।