বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয় গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেকেশুক্রবার কানপুর আনার পথে সংঘর্ষে হল মৃত্যুকেন এই পুলিশি সংঘর্ষ ঘিরে উঠছে ষড়যন্ত্রের প্রশ্নউত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাজে কোথায় কোথায় রয়েছে অসঙ্গতি

কানপুরে আট পুলিশ সদস্যকে হত্যা করার পর থেকে সে ছিল পলাতক। বৃহস্পতিবার বিতর্কিতভাবে তাকে মধ্যপ্রদেশের উজ্জইন শহরের বিখ্যাত মহাকালমন্দির থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেকে। শুক্রবার সকালে কানপুর আনার পথে পালানোর চেষ্টা করে সে, আর সেই সময়ই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এমনটাই জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। তবে তাঁর এনকাউন্টার ঘিরে উঠছে গুরুতর ষড়যন্ত্রের প্রশ্ন। এমনকী কামপুরে হত শহিদ কনস্টেবলের স্ত্রীও এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু, কেন এই প্রশ্ন উঠছে, কোথায় ফাঁক রয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাজে?

সন্তুষ্ট, তবে অনেক প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে গেল

গত ২ জুলাই কানপুরে বিকাশ দুবে-কে গ্রেফতার করতে গিয়ে বিকাশের গ্যাঙ-এর গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল কনস্টেবল সুলতান সিং-এর। এদিন বিকাশের মৃত্য়ুর খবর পাওয়ার পর শহিদ সুলতান সিং-এর স্ত্রী উর্মিলা ভার্মা বলেছেন, বিকাশের পরিণতিতে তিনি সন্তুষ্ট। কে কীভাবে তাকে সমর্থন দিচ্ছিল এখন তা আর প্রকাশ্যে আসা সম্ভব নয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এর পিছনে কারা কারা জড়িয়ে আছে তার পর্দাফাঁস হতে পারত।

তিনি যে বিষয়টির কথা তুলেছেন, বেশিরভাগ বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক নেতারাও সেই প্রশ্নই তুলেছেন, সপা-র অখিলেশ যাদব, বসপা-র মায়াবতী, কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, দিগ্বিজয় সিং, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা, তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মিত্র কিংবা শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী - সকলেরই অভিযোগ বিকাশ দুবের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পুলিশ কর্তা, প্রশাসনিক কর্তাদের বাঁচাতে তার মুখ বন্ধ করাটা প্রয়োজনীয় ছিল। আর তাই পরিকল্পিতভাবে সাজানো সংঘর্ষে তাকে মেরে ফেলা হল।

শুধু যে এই কারণেই বিকাশ দুবের মৃত্যু সত্য়ি সংঘর্ষ না পরিকল্পিত খুন - এই প্রশ্ন উঠছে তা নয়। বস্তুত, এদিনের ঘটনার আগেই এই বিষয়ে দিগ্বিজয় সিং-এর মতো রাজনৈতিক নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তার গ্রেফতারির ঘটনা নিয়েই উঠেছিল প্রশ্ন। এমনকী এই বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলাও করা হয়েছিল। আর এদিনের ঘটনাক্রমেও রয়েছে বড়সড় ফাঁক।

Scroll to load tweet…

আগেই ছিল আশঙ্কা

বিকাশ দুবের গ্রেফতারির পর তাকে ভুয়ো এনকাউন্টারে হত্যা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়ে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা র গ্রেপ্তার করেছিলেন ঘনশ্যাম উপাধ্যায় নামে এক আইনজীবী। তিনি এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন। আবেদনে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে কীভাবে দুবের আরও তিন সহযোগীর 'এনকাউন্টার' হল, সে সম্পর্কে আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্তের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল পুলিশের ভূমিকা।

গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন

বিকাশের গ্রেফতারি নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। গ্রেফতারি না, ওই গ্যাংস্টার নিজের পছন্দ মতো সময়ে পছন্দমতো জায়গায় আত্মসমর্পন করলেন তাই নিয়ে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ পুলিশের মধ্যে বক্তব্যের অসঙ্গতি ছিল। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ যেখানে দাবি করেছিল, তারা বিকাশ-কে গ্রেফকতার করেছে, সেখানে পুলিশ সূত্র ও উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সরকারিভাবে দাবি করেছিল, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে এনকাউন্টারে মৃত্য়ুর আশঙ্কাতেই সে আত্মসমর্পণ করে।

থামানো হল মিডিয়া-কে

ঝাঁসি থেকে এদিন সকালে বিকাশ দুবেকে নিয়ে পুলিশের একটি কনভয় কানপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। তাদের অনুসরণ করছিল বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। কানপুর-দেহাত সীমান্তের টোলপ্লাজার আগে মিডিয়ার গাড়িগুলিকে আটকে দেয় পুলিশ। তার একঘন্টার মধ্যেই সাচেন্দি পাসের কাছে হয় এনকাউন্টার।

Scroll to load tweet…

যেসব প্রশ্নের উত্তর নেই

১. গত কয়েকদিনে পুলিশি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে বিকাশ দুবের আরও পাঁচ শাগরেদের। একদিন আগেই এরকমই স্তানান্তরের পথে এনরকাউন্টারে মারা যায় প্রভাত মিশ্র। সেই ক্ষেত্রে পুলিশের গাড়ির টায়ার পাংচার হয়েছিল। এদিন গাড়ি উল্টে যায়। এগুলো কি শুধুই কাকতালীয় ঘটনা?

২. কেন এনকাউন্টারের একঘন্টা আগেই তামিয়ে দেওয়া হল মিডিয়ায় গাড়ি?

৩. একদিন আগেই যে আত্মসমর্পণ করল (উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বয়ান অনুযায়ী), সে পরের দিন পালাতে গেল কেন? পুলিশ আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তা নিল না কেন?

৪. কাদের সহায়তায় সে এতদিন ধরে অধরা ছিল? গাড়ি নিয়ে ১৫০০ কিমি পারি দেওয়ার পথে তাকে কোথাও আটকানো হল না কেন?