সংক্ষিপ্ত

  • গালওয়ান উপত্যকায় শহিদ হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান
  • ১৫ জুন রাতে লালফৌজের একাধিক জওয়ানও প্রাণ হারায়
  • তবে সেনা মৃত্যুর হিসেব দেয়নি পিপলস লিবারেশন আর্মি
  • সংখ্যাটি যে যথেষ্ট বেশি এদিন তা স্পষ্ট করে দিলেন রাজনাথ সিং

গত ১৫ জুন রাতে গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনার অতর্কিত হামলার যোগ্য জবাব দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। মুখোমুখি সেই সংঘর্ষ শহিদ হয়েছিলেন ভারতীয় সেনার ২০ জন বীর জওয়ান। এই সংঘর্ষে চিনের বহু সেনারও মৃত্যু হয়েছে বলে এতদিন দাবি করে এসেছে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি। এবং সেই সংখ্যাটা ভারতীয় সেনার দ্বিগুণ বলেই দাবি উঠেছে। যদিও চিনা প্রশাসন এনিয়ে সরাসরি কোনও বিবৃতি দেয়নি। অনেকেই বলছেন ভারতীয় সেনার কাছে এভাবে চিনা সেনার পরাজয় ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেনি বেজিং। তাই নিজেদের সেনার  মৃত ও আহতের সংখ্যা নিয়ে চুপ থেকেছে জিনপিংয়ের দেশ। কিন্তু চিনের সেই অস্বস্তি এবার বাড়িয়ে দিলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। গালওয়ান সংঘর্ষে বিপুল সংখ্যক চিনা বাহিনীর মৃত্যু হয় বলে সংসদে দাবি করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

মে মাসের গোড়া থেকেই পূর্ব লাদাখের সীমান্তে চিনের সক্রিয়তা বাড়ছিল। যার চরম পরিণতি ঘটে ১৫ জুনের রাতে। দুই দেশের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের পর দুই তরফই সামরিক পর্যায়ে আলোচনা চালানোর পাশাপাশি কূটনৈতিক ভাবেও সমস্যার সমাধান করতে বসেছে। যার মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতির সময়ে মস্কোয় চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনাথ সিং ও জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এদিকে করোনা আবহে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। চিনের আগ্রাসন নিয়ে শাসক দলের বিবৃতি চেয়ে অনেকদিন ধরেই সরব ছিল বিরোধীরা। সংসদ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন মূলত সীমান্তে কোথায় সমস্যা ও গত কয়েক মাসে কী কী হয়েছে, সেটাই বিস্তারিত জানান রাজনাথ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, ভারত চায় প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আলোচনার মাধ্যমে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। কিন্তু চিন বারবার আগ্রাসনের চেষ্টা চালানোতেই প্যাংগং, গালওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বেড়েছে। গালওয়ানে সেনা সংঘর্ষ হয়েছে।

চিন ও ভারতের মাঝে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ঠিক ভাবে চিহ্নিত নয়, সেকারণ অনেক জায়গার ওপর দাবি করে চিন ও ভারত দু'জনেই।  রাজনাথ অভিযোগ করেন, এই সমস্যা নিরসনে প্রাথমিক ভাবে আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরে তেমন কিছু করেনি চিন। তিনি জানান যেখানে এলএসি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক আছে, সেখানে শান্তি কী ভাবে বজায় রাখতে হবে, সেই নিয়ে একাধিক বোঝাপড়া হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে যেটা সীমান্ত হিসাবে চিহ্নিত, সেটা মানে না চিন বলে তিনি জানান। সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর যে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নির্ভরশীল, সেটাও স্পষ্ট করে দেন তিনি। 

সংসদের প্রথম দিনের অধিবেশনে চিনার সঙ্গে উত্তেজনার আবহে সেনার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও ভারতীয় সেনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। রাজনাথ বলেন, ‘‘আমাদের জওয়ানরা বেজিংকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। গালওয়ানে সংঘর্ষে ভারতের ২০ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু চিনের পক্ষে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আবার যেখানে সংযম দেখানোর দরকার, জওয়ানরা সেখানে সংযম ও ধৈর্য দেখিয়েছে। এই শৃঙ্খলা ও শৌর্যের জন্য শুধু সংসদ নয়, সারা দেশবাসীর ভারতীয় সেনার পাশে দাঁড়ানো উচিত।’’ সেনাবাহিনী যে দেশের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর, তাও জানান রাজনাথ সিং। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংসদে বলেন, ভারত চায় শান্তিপূর্ণ ভাবে এই সমস্যা মিটে যাক, কিন্তু কোনও ভাবেই লাল ফৌজের আগ্রাসনকে মেনে নেওয়া হবে না।