সংক্ষিপ্ত
জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) জুড়ে চরম শৈত্যপ্রবাহের (Cold Wave) মধ্যে অন্ধকারে ঢাকল গোটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। সেখানার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগের (J&K Power Development Department) হাজার হাজার কর্মচারী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছেন।
এমনিতেই জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) জুড়ে চলছে চরম শৈত্যপ্রবাহ (Cold Wave)। শ্রীনগরের (Srinagar) রাতের তাপমাত্রা পরপর দুদিন মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এরই মধ্যে, রবিবার রাতে প্রায় গোটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অন্ধকারে ঢাকল। কারণ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগের (J&K Power Development Department) হাজার হাজার কর্মচারী অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছেন। অবস্থা সামাল দিতে সেনাবাহিনীকে (Indian Army) ডাকতে বাধ্য হল স্থানীয় প্রশাসন। সেনাকর্মীরাই বিদ্যুত ফেরানোর জন্য বিদ্যুত সংস্থাগুলিকে সহায়তা করছে।
সম্প্রতি, ভারতের পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনে (Power Grid Corporation of India) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টকে। সেইসঙ্গে একে বেসরকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ধর্মঘট শুরু করেছেন প্রায় ২০ হাজার বিদ্যুত কর্মী। সরকারী সম্পত্তির বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পাশাপাশি তাঁরা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিযুক্ত বিদ্যুত কর্মীদের চাকরিতে নিয়মিতকরণ এবং বেতন মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন। সরকার তাদের দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত বিদ্যুত বিভাগের কোনও মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিদ্যুতকর্মীরা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে (Defense Ministry) জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন চিঠি দেওয়ার পরে অবশ্য কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে এসেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে, এই ধর্মঘটের ফলে বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। জম্মু ও শ্রীনগর থেকেও বিদ্যুত বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে বিশাল ফারাক দেখা দিয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের সর্বত্র বিদ্যুতকর্মীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। লাইনম্যান থেকে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার - বিক্ষোভে সামিল সকলেই। তাঁরা বলছেন, কয়েক দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন সরকার যে যে সম্পদের নির্মান করেছিল, তা কেন্দ্রশাসিত প্রশাসনের অধীনে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এটা জম্মু ও কাশ্মীরের স্বার্থের পরিপন্থী, বলে সাফ জানাচ্ছে বিদ্যুত কর্মচারী ইউনিয়ন।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ধর্মঘটকারী কর্মচারীদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে প্রশাসন, কিন্তু বরফ গলেনি। অন্যদিকে, ধর্মঘটীরা দাবি করেছেন, প্পশাসনের নিচুতলার কয়েকজন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু, কোনও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা সংকট সমাধানে এগিয়ে আসেননি। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি আইএএস অফিসার নীতিশ্বর কুমারকে (Nitishwar Kumar) জম্মু ও কাশ্মীরের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহার (Manoj Sinha) প্রধান সচিব। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইছে কর্মচারী ইউনিয়ন।
ইউনিয়নের প্রতি সমর্থন রয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলিরও। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য থেকে জম্মু ও কাশ্মীরকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। সেই সময় থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলি, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে, উপত্যকার জনগণের সম্পদের অপব্যবহার করার অভিযোগ করে আসছে। এই ক্ষেত্রেও তারা ইউনিয়নের সুরেই বলেছে, এটা জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের অস্তিত্বের লড়াই।