সংক্ষিপ্ত
২০১৪ সালে তাঁর ঠিক করা স্ট্র্যাটেজিতে পাকিস্তানের উপর হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী যতদিন না নিয়ন্ত্রণ রেখার উপর থেকে পাকিস্তানের গুলিবর্ষণ বন্ধ হচ্ছে ততদিন টানা হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের জুন মাসে মায়ানমার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকও তার মস্তিষ্কপ্রসূতই।
অজিত দোভাল(Ajit Doval), একডাকে দেশের সবাই এই মানুষটিকে চেনেন। তাঁর হাতে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব (National Security Advisor)। প্রধানমন্ত্রীর পঞ্চম এবং বর্তমান NSA (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা), অজিত ডোভাল বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২০শে জানুয়ারি ৭৭ বছর পূর্ণ করেছেন(Happy Birthday Ajit Doval)। ১৯৪৫ সালে উত্তরাখণ্ডের পাউরি গাড়োয়ালে জন্মগ্রহণ করেন দোভাল। তাঁকে ভারতের জেমস বন্ড বলা হয়।
ডোভাল হলেন ১৯৬৮ ব্যাচের আইপিএস- অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। তিনি কোট্টায়াম এএসপি হিসাবে কেরল ক্যাডারে চাকরিতে যোগ দেন। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে তার একটি আকর্ষণীয় কর্মজীবন ছিল, যেখানে তিনি ২০০৪-০৫ সাল থেকে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম স্থান পেয়ে পাশ করেন অজিত দোভাল। ১৯৬৮ সালে কেরালা ক্যাডারে যোগ দেন এই প্রাক্তন আইপিএস। অজিত দোভাল দেশের পঞ্চম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
২০১৪ সালে তাঁর ঠিক করা স্ট্র্যাটেজিতে পাকিস্তানের উপর হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী যতদিন না নিয়ন্ত্রণ রেখার উপর থেকে পাকিস্তানের গুলিবর্ষণ বন্ধ হচ্ছে ততদিন টানা হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের জুন মাসে মায়ানমার সার্জিক্যাল স্ট্রাইকও তার মস্তিষ্কপ্রসূতই।
কর্ম জীবনে বহু চড়াই-উৎরাই পার করেছেন অজিত দোভাল। মায়ানমার বা চিনের জঙ্গি দমন থেকে জম্মু কাশ্মীরের জঙ্গি দমন, নিজস্ব কৃতিত্বেই ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছেন দোভাল। প্রথম পুলিশ অফিসার হিসেবে কীর্তি চক্র পান ১৯৯৮ সালে। নিজের জীবনের ৭ বছর পাকিস্তানেও গুপ্তচর হিসেবে কাটিয়েছেন তিনি।
মিজোরাম শান্তিপ্রতিষ্ঠা
মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে তাঁর কূটনৈতিক পদক্ষেপের ফল আজও পাচ্ছে সেই রাজ্য। মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের ৭ কমান্ডারের মধ্যে ৬ জনকে তার পক্ষে আনতে সক্ষম হন অজিত দোভাল। এমএনএফ ১৯৮০ সালে মিজোরামে বিদ্রোহ ছড়ানোর জন্য কুখ্যাত ছিল এবং এই পদক্ষেপ তাদের সংগঠনকে ভেঙে দেয়। এরপর মিজোরামে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন - Omicron Threat: ওমিক্রনের জন্য আরও বাড়ল নিষেধাজ্ঞা, আপাতত বন্ধ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল
কুকা প্যারে এবং সৈন্যদের আত্মসমর্পণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
১৯৯০ সালে, অজিত ডোভাল কাশ্মীরে যান এবং কুখ্যাত জঙ্গি মহম্মদ ইউসুফ প্যারে, যে কুকা প্যারে নামে পরিচিত এবং তার সেনাদের দিশা বদলে দেন। কুকা প্যারের সহযোগীরাই কুকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই পদক্ষেপ ১৯৯৬ সালে জম্মু ও কাশ্মীর নির্বাচনের পথ পরিষ্কার করার জন্য সহায়ক ছিল।
পাকিস্তানে গোপনে ৭ বছর
অজিত ডোভাল একজন ফিল্ড অফিসার হিসাবে তার কর্মজীবনকে সফলতার অন্য চূড়ায় নিয়ে যান। ডোভাল মুসলমানের ছদ্মবেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW-তে কাজ করার সময় পাকিস্তানে ৭ বছর কাটিয়েছিলেন। তিনি উর্দু আয়ত্ত করেছিলেন এবং তিনি পাকিস্তানের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন। এই জ্ঞান তাকে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানে গোপনে থাকতে সাহায্য করেছিল।
৪৬ জন ভারতীয় নার্সের মুক্তি
ইরাকের তিকরিত হাসপাতালে আটকা পড়া ৪৬ জন ভারতীয় নার্সকে মুক্তি দিতেও ডোভাল মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২৫ জুন, ডোভাল একটি শীর্ষ-গোপন মিশনের অংশ হিসাবে ইরাকে উড়ে যান, ইরাকি সরকারের উচ্চ-স্তরের আমলাদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং ISIS জঙ্গিদের হাত থেকে নার্সদের নিরাপদে এরবিল শহরের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে রাজি করেন।
অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডারে ভূমিকা
৮০-র দশকে পঞ্জাবে খালিস্তান জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল। অজিত ডোভাল সেখানে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির অনুপ্রবেশের জন্য কাজ করা একজন সক্রিয় ফিল্ড এজেন্ট ছিলেন। অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডারের দৌড়ে, ডোভাল গোল্ডেন টেম্পল এলাকায় একজন রিকশাচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে স্বর্ণ মন্দিরের ভিতরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। নিজেকে একজন পাকিস্তানি আইএসআই এজেন্ট হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
তাদের আস্থা অর্জনের পর, ডোভাল স্বর্ণ মন্দিরে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হন। তাঁর এই পদক্ষেপেই এনএসজি মন্দির কমপ্লেক্সে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি বাঁচাতে পেরেছিল। তাঁর এই কীর্তির জন্য তাঁকে কীর্তি চক্র দেওয়া হয়েছিল। দেশে এই প্রথম কোনও ভারতীয় পুলিশ অফিসার এই সম্মান পান।
কান্দাহারে IC 814 এর হাইজ্যাকারদের সাথে আলোচনা
১৯৯৯ সালে, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স IC 814 কান্দাহারে হাইজ্যাক করা হয়েছিল। যদিও হাইজ্যাকারের দাবির কাছে ভারতের আত্মসমর্পণ ছিল একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তীকালে সমালোচিত হয়েছিল। তবে সেই পরিস্থিতিতেও অজিত ডোভালের নিপুণ পরিচালনা এবং হাইজ্যাকারদের সাথে আলোচনা বিমানের আরও প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি রোধ করেছিল।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এর মত জবাবের রণকৌশল তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর বানানো ব্লু প্রিন্টেই হয়েছে উরি হামলা। এমনকি হালের বালাকোট হামলাটিও তাঁরই ছক। ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন অজিত দোভাল। তারই পুরস্কার পান তিনি। সপ্তদশ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় পাঁচ বছরের জন্যে ক্যাবিনেটের সমতুল্য পদ দেওয়া হয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে।