সংক্ষিপ্ত

কথিত আছে, ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যলোকে এসে তাঁর চার ধামে যাত্রা করেন। এই চার ধাম হল- বদ্রীনাথ ধাম,দ্বারিকা ধাম,পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন,তারপর গুজরাটের দ্বারিকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন।

জগন্নাথদেব হলেন একজন হিন্দু দেবতা। ওড়িশা, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, অসম, মণিপুর ও ত্রিপুরায় তাঁকে পুজো করা হয়। জগন্নাথের মধ্যে বিষ্ণুর সকল অবতারের চিহ্ন আছে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে বিষ্ণুর এক একটি অবতারের মূর্তিতে পুজো করা হয়। ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার কৃষ্ণের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত করা হয় তাঁকে। আর সেই কারণে তাঁকেও অর্পণ করা হয় ছাপান্ন ভোগ। 

কথিত আছে, ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যলোকে এসে তাঁর চার ধামে যাত্রা করেন। এই চার ধাম হল- বদ্রীনাথ ধাম,দ্বারিকা ধাম,পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। প্রথমে হিমালয়ের শিখরে অবস্থিত বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন,তারপর গুজরাটের দ্বারিকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন, ওড়িশার পুরী ধামে ভোজন করেন আর সবশেষে রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম নেন। আর পুরী ধামে যেখানে তিনি ভোজন করেন সেখানে ভোগের কোনও চমক থাকবে না এটা কখনও হয়। সেখানেই তাঁকে ছাপ্পান্ন ভোগ দেওয়া হয়। 

 

কিন্তু, কী এই ছাপ্পান্ন ভোগ? পুরাণ মতে, যশোদা বালক কৃষ্ণকে আট প্রহর খেতে দিতেন। কিন্তু, একটা সময় ইন্দ্রের রোষে পড়ে মহাপ্রলয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় প্রাণীদের রক্ষা করতে নিজের কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পাহাড় তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সাতদিন ওইভাবেই তিনি ছিলেন। খাবার ও জল কোনও কিছুই মুখে দেননি। প্রলয় বন্ধ হওয়ার পর সেই পাহাড় নামিয়ে রেখেছিলেন। এদিকে যে ছেলে দিনে আটবার খাবার খেত তাকে টানা সাতদিন অনাহারে থাকতে দেখে কেঁদে উঠেছিল যশোদার মন। তখন ব্রজবাসী-সহ যশোদা সাতদিন ও আট প্রহরের হিসেবে কৃষ্ণের জন্য ৫৬টি পদ পরিবেশন করেছিলেন। আর সেই থেকেই নারায়ণের ছাপ্পান্ন ভোগ চলে আসছে।

জগন্নাথ মন্দিরের একাংশেই হয়েছে বড় রান্নাঘর। যদিও সেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। দেওয়ালে ছোটো ছোটো ফাঁক রয়েছে। সেখান দিয়েই গোটা বিষয় দেখতে পাওয়া যায়। রয়েছে ৭৫২ টি উনুন, সেখানে এই ভোগ রান্নার কাজ করেন ৩০০-রও বেশি রাঁধুনি। রান্নার সময় এঁরা সারাক্ষণ নাকে, মুখে গামছা জড়িয়ে থাকেন।

জগন্নাথের ভোগে মূলত দুই ধরনের খাবার দেওয়া হয়। ভাত, ডাল, তরকারি, খিচুড়ি জাতীয় রান্না করা খাবার থাকে। আর থাকে খাজা, গজা, খই, মুড়কি জাতীয় শুকনো খাবার। 

 

পুরী মন্দিরের প্রতিদিন সমপরিমাণ প্রসাদ রান্না করা হয়। কিন্তু ওই একই পরিমাণ প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ মানুষ সকলেরই পেট ভরে যায়। আর এই প্রসাদ কখনও কম পড়ে না। এমনকী, নষ্টও হয় না।

রান্নার প্রক্রিয়াও বেশ মজার। মন্দিরের রান্নাঘরে একটি পাত্রের উপর আর একটি পাত্র এমন করে মোট ৭টি পাত্র আগুনে বসানো হয় রান্নার জন্য। এই পদ্ধতিতে যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয়। তার নিচে তারপরে। এভাবে সবচেয়ে দেরিতে সবচেয়ে নিচের পাত্রের রান্না হয়। কথিত আছে জগন্নাথদেবের আশীর্বাদেই এমনটা হয়।

 

মূলত ফুটন্ত জলে সবজি এবং মশলা দিয়ে চলতে থাকে মহাপ্রভুর রান্না। মশলা বলতে শুধুমাত্র নুন এবং হলুদের ব্যবহার। পেঁপে, আলু, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা জাতীয় সবজি জগন্নাথের রান্নায় ব্যবহার করা হয় না। 

বাল্যভোগে জগন্নাথদেবকে দেওয়া হয় খই, চিঁড়ে, বাতাসা, মাখন, মিছরি, কলা, দই এবং নারকেল কোরা। এরপর দেওয়া হয় রাজা ভোগ। এই তালিকায় থাকে মিষ্টি চালের খিচুড়ি, ডাল, তরকারি, ভাজা এবং পিঠেপুলি। দুপুরের ভোগ মূলত অন্নভোগ। সেখানে থাকে ভাত, ডাল, শুক্তো, তরকারি ও পরমাণ্ণ। এছাড়াও থাকে ক্ষীর ও মালপোয়া। সন্ধেবেলায় দেওয়া হয় লেবু, দই দিয়ে মাখা পান্তাভাত। সঙ্গে খাজা, গজায এবং নানা ধরনের মিষ্টি। রাত ১১টার সময় ভাজা ও ক্ষীর দেওয়া হয় তাঁকে। আর মধ্যরাতে ডাবের জল খেয়ে শুতে যান ভগবান। এভাবেই তাঁক ছাপ্পান্ন ভোগ অর্পণ করা হয়ে থাকে।