সংক্ষিপ্ত
গত তিন বছরে বৃষ্টি থেকে বন্যায় এই দেশের ৬ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। তিন বছর তিনটি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছে পশ্চিমবঙ্গ।
প্রাকৃতিক রুদ্র রূপের কাছে মানুষ নিতান্তই অসহায়। তা আরও একবার প্রমান করল সদ্য প্রকাশিত সরকারি একটি তথ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষত বন্যা, বৃষ্টি, বজ্র বিদ্যুৎ আর ঘূর্ণিঝড় গত তিন বছরে ৬ হাজার ৮১১ জন ভারতীয় প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সংসদে দেওয়া সরকারি তথ্য তেমনয়ই বলছে। সেই তালিকার শীর্ষ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াইতে ক্রমশই প্রকাশ পেয়েছে এই রাজ্যের দুর্বলতা। চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত এই রাজ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ৯৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার অর্থ প্রতি সাত জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে এই রাজ্যে।
তালিকায় দ্বিতীয় নাম মধ্য প্রদেশ। এই রাজ্যে ৯১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। ৭০৮ জনের মৃত্যু নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কেরল। মঘ্যে প্রদেশে বন্যার কারণে শুধুমাত্র ২০১৯-২০ সালেই ৬৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলাঙ্গনার মত কয়েক রাজ্য সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে ভারী বৃষ্টি, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা আর তাপপ্রবাহ ও শৈত্যপ্রবাহ।
জলবায়ু পরিবর্তেনর ফলে গত দুই দশকে বৃষ্টি-বজ্রপাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় আর তাপপ্রবাহ। জলবায়ু সংক্রান্ত সরকারি প্যানেলের মূল্যায়ন তাপমাত্র বৃদ্ধির কারণে প্রতি এক ডিগ্রি সেলসিয়াল তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে বায়ু মণ্ডলে জল ধারণ ক্ষমতা ৭ শতাংশ বেড়ে যাবে। আর সেই কারণেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে। যার পরিণতি ভয়ঙ্কর বলেও জানিয়েছেন ভারতের আবহাওয়া দফতরের প্রাক্তন প্রধান কে জে রমেশ।
পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসুন 'শিসগ্রামে', সেরা পর্যটন গ্রামের জন্য মনোনীত মেঘালয়ের পাহাড়ী গ্রামটি
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৬ সালে ভারতের ১,৮৬৪টি আবহাওয়ার দফতর ভারী বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছিল। অতিভারী বৃষ্টির রেকর্ড গ্রহণ করেছিল ২২৬টি স্টেশন। সেখানে ২০২০ সালে ১৯১২টি হাওয়া অফিস ভারী বৃষ্টির রেকর্ড করেছিল। অতিভারী বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছিল ৩১৪টি স্টেশনে। এই তথ্যগুলির মধ্যে চলতি বছরের কোনও তথ্য নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের অপর একটি তথ্য দেখা গেছে চলতি বছর ১ জুন থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে ৬৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র এই রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। ২০১৯ সালে বুলবুল, ২০২০ সালে আমফান আর ২০২১ সালে ইয়াস-পরপর তিন বছর এই রাজ্য তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করেছে। তিনটি ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে পাহাড়, সমুদ্র, নদী, সমভূমি আর মালভূমি থাকায় এই রাজ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশি পড়ছে। বর্ষার মরশুমের দিনের সংখ্যা কমে গেলেই এই রাজ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও তার শক্তি থাকছে তুলনায় বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে যা জলবায়ুর পরিবর্তনকেই ইঙ্গিত করছে।