সংক্ষিপ্ত
তিনিই ভারতের সেই একমাত্র ‘নেতা’, যাঁর জন্ম এক ‘আগমনী’ এবং কাগজেকলমের মৃত্যুটা আজও ‘অন্তর্ধান’। সেই সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকীতে তাঁর জীবনের কিছু অজানা কথা।
অহিংসার জোরে স্বাধীনতা আসবে না, এই নীতি নিয়েই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বরাবর নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসু। তৎকালীন পরাধীন ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করতে যিনি দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিশ্বের প্রবল পরাক্রমী শাসক অ্যাডলফ হিটলারেরও, তাঁর জন্মদিবসকে ভারতবাসী শ্রদ্ধা জানিয়েছে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে। সেই মহান শক্তিধর নেতার জন্ম হয়েছিল ১৮৯৭ সালে ওড়িশার কটক শহরে।
কটক শহরের প্রসিদ্ধ আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও তাঁর স্ত্রী প্রভাবতী দেবীর সংসারে ছিল ৪ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তান। তারপর ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি জন্ম নিল পঞ্চম পুত্র তথা নবম সন্তান ‘সুভাষ’। মোট ১৪ জন সন্তানকে দেখাশোনা এবং পড়াশোনা করানোর ভার ছিল মূলত বাড়ির কর্ত্রী প্রভাবতী দেবীর ওপরেই। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছ থেকে উদার ও কুসংস্কার মুক্তির শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র।
কটকে প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় কটকের র্যাভেনশা কলেজিয়েট স্কুলে। এরপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। এরপর বাবা জানকীনাথ বসুর ইচ্ছায় ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি নিতে তাঁকে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।
১৯২০ সালে নেতাজি ইংল্যান্ডে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা পাস করেন কিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে ভারতবাসীর ওপর অত্যাচার অবমাননা দেখে নিজের চাকরি ছেড়ে দেন। সিভিল সার্ভিস ছেড়ে নিজের মাতৃভূমিকে ইংরেজদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য ভারতীয় রাষ্ট্রীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। পঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তাঁকে মর্মাহত করে তুলেছিল।
কংগ্রেসে যুক্ত হওয়ার পর জাতির জনক মহাত্মা গান্ধির অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলেও দুই শক্তিধর নেতার মতবাদ ও লড়াইয়ের আদর্শের মধ্যে বিরোধ বাধে। মহাত্মা গান্ধির আদর্শ ছিল অহিংসা এবং উদারবাদ। সুভাষচন্দ্র বসু সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন। দু’জনের মূল লক্ষ্য ভারতের ‘স্বাধীনতা’ হলেও, লড়াইয়ের ময়দানে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের জন্য ধীরে ধীরে ত্রাস হয়ে ওঠেন তরুণ সুভাষ। ব্রিটিশ সরকার ভারতের অন্যান্য তাবড় বিপ্লবীদের মতো তাঁকেও বন্দি করে ফেলতে বাধ্য হয়। কিন্তু, তা ছিল তাঁর বাড়ির অন্দরেই। ভাগ্নে শিশির কুমার বসুর সাহায্যে ব্রিটিশ অধীনস্থ সিআইডির কড়া নজর এড়িয়ে দাড়ি রেখে পাঠানের ছদ্মবেশ ধরে ভবানীপুরের বাড়ি ছেড়ে পাকিস্তান, আফগানিস্থান হয়ে রাশিয়ার পথ ধরে চলে যান জার্মানি। হিটলারের কাছ থেকে সহায়তার বিশেষ আশ্বাস না পেয়ে জাপানে গিয়ে রাসবিহারী বসুর তৎপরতায় তৈরি করেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে এই একমাত্র সশস্ত্র বাহিনী সমগ্র ইংরেজ শাসকের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিল। এই বাহিনীই সুভাষচন্দ্র বসুর নামকরণ করেছিল ‘নেতাজি’ হিসেবে।
বিশিষ্ট ভারততত্ত্ববিদ রোম্যাঁ রঁল্যা পরাক্রমি নেতাজিকে লিখেছিলেন, “সক্রিয় রাজনীতিতে থেকেও নিজেকে দলমতের ঊর্ধ্বে রেখে নিজেকে বিচার করতে পারার দুর্লভ ক্ষমতা আপনার রয়েছে।” তাই, আজও ভারতে নেতাজির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে খামতি রাখনে না কোনও সমস্ত দল, সংগঠন এবং মতবাদিরা। দেশবাসীর জন্য তাঁর জীবনকাল যেমন ঔজ্জ্বল্যতায় পরিপূর্ণ, তেমনই চলে যাওয়া আরও ‘রহস্যময়’। তিনিই ভারতের সেই একমাত্র ‘নেতা’, যাঁর জন্মটা এক ‘আগমনী’ এবং কাগজেকলমের মৃত্যুটা আজও ‘অন্তর্ধান’।
আরও পড়ুন-
বিজেপি ছেড়ে এবার তৃণমূলেই হিরণ? ‘কেউ চাইছেন তাড়াতাড়ি যোগ দিতে’, ইঙ্গিত কুণাল ঘোষের
কুস্তিগিরদের প্রতিবাদে নয়া পদক্ষেপ, সভাপতি ব্রিজভূষণের পর সাসপেন্ড ফেডারেশনের সহ-সভাপতি বিনোদ তোমার
মূল্যবৃদ্ধির বাজারে কত বাড়ল জ্বালানির দাম? জেনে নিন রবিবারের আপডেট