সংক্ষিপ্ত
'পঞ্চায়েত প্রধান' মানেই মনে হয় গ্রামের এক কেউকেটা। কিন্তু, ওড়িশার (Odisha) গঞ্জাম (Ganjam) জেলার এক গ্রামে পঞ্চায়েত প্রধানকে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা করতে হচ্ছে।
'পঞ্চায়েত প্রধান' বললেই আমাদের চোখের সামনে গ্রামের এক কেউকেটা ব্যক্তির ছবি ভেশে ওঠে। যিনি একার হাতে গ্রামবাসীর সব সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেন, যাঁর হাত ধরে গ্রামের উন্নয়নের কাজ হয়। রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ হলে, আবার ইদানিং 'কাটমানি'র প্রসঙ্গও চলে আসে। কিন্তু, এর সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি দেখা গেল ওড়িশার (Odisha) গঞ্জাম (Ganjam) জেলার এক গ্রামে। সেই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানকে বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা করতে হচ্ছে।
গঞ্জাম জেলার খল্লিকোট ব্লকের (Khallikote block) অন্তর্গত বাদাপল্লি গ্রাম পঞ্চায়েত (Badapalli Panchayat) । সেই পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান হেমা নায়েক, এখন ঘরে ঘরে ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করছেন। তিনি তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। বাদাপল্লীর গ্রাম পঞ্চায়েত মূলত আদিবাসী অধ্যূসিত। এই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের পদটি মহিলা তফসিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ার পরই, তিনি এই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছিলেন। তবে, পঞ্চায়েতের শীর্ষ পদে তাঁর এই নির্বাচন, তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন তিনি পুরোপুরি ভিক্ষার উপরই নির্ভরশীল। পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের শুরুতেই।
হেমা নায়েকের স্বামী পঞ্চায়েত অফিসেই পিয়নের কাজ করেম। তাঁর এক ছেলেও আছে, সে দিনমজুরের কাজ করে। তবে, পরিবারের দুই পুরুষ সদস্যের উপার্জন, তাঁদের সংসার চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। জানা গিয়েছে , যেদিন যেদিন স্থানীয় বিধায়ক বা অন্য কেউ কোনও সরকারি কাজে বাদাপল্লী গ্রামে আসেন, সেই দিন হো নায়েক সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকেন। বাকি দিনগুলিতে তিনি বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে বেড়ান।
দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদন অনুসারে খল্লিকোট ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বা বিডিও ৬ মাস আগে পঞ্চায়েত প্রধানের ভিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে খবর পেয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, হেমা নায়েক শিক্ষিত নন, বাইরের জগতের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ খুবই কম ছিল। তাই পঞ্চায়েতের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করার বিষয়ে তিনি তাঁর স্বামী এবং ছেলের সাহায্য নেন। পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে তিনি মাসে মাসে ২,৩৫০ টাকা করে সাম্মানিক ভাতা পান। হেমার হয়ে তাঁর স্বামীই সেই সাম্মানিক অর্থ গ্রহণ করেন। এরপরও কেন বাদাপল্লীর পঞ্চায়েত প্রধানকে ভিক্ষা করতে হচ্ছে, তা জানতে প্রসানের পক্ষ থেকে একটি দল পাঠানোর কথা চলছে। সাম্মানিক ভাতা পাওয়ার পরও তাঁকে কেন ভিক্ষা করতে হচ্ছে তা বুঝে পাচ্ছে না প্রশাসন। এই খবর সমাজে ভুল বার্তা দিচ্ছে বলে মনে নিয়েছেন তিনি।
নবীন পট্টনায়কের নেতৃত্বাধীন বিজেডি সরকারের, ওড়িশায় তিন স্তরের পঞ্চায়েতি রাজে জাতি ও লিঙ্গের ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ আসন মহিলা ও পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত করেছিল। তাদের দাবি ছিল, এতে করে মহিলা ও পিছড়েবর্গীয়দের ক্ষমতায়ন হবে। হেমা নায়েকের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই বলেছেন, এই সংরক্ষণ যে অনেক জায়গায় নামেই এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের ক্ষমতায়িত করছে, তা এই ঘটনাতেই প্রমাণিত।