চলে গেলেন রতন টাটা, কিংবদন্তি শিল্পপতির জীবনের এই গোপন খবরগুলো জানতেন?
- FB
- TW
- Linkdin
দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়িক ট্রাস্ট টাটা সন্সের সম্মানিত চেয়ারম্যান রতন টাটা মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বয়সের ভারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এই অবস্থায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
মহান ব্যবসায়ী.. উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী রতন টাটা
ভারতের বৃহত্তম ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে একটি, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমেরিটাস রতন টাটা, ৮৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। "আমরা মি. রতন নवल টাটাকে বিদায় জানাচ্ছি, এটি একটি গভীর ক্ষতি, সত্যিকার অর্থেই একজন ব্যতিক্রমী নেতা, যার অমূল্য অবদান শুধুমাত্র টাটা গ্রুপকেই নয়, আমাদের দেশকেও অনেক পরিবর্তনের সাথে এগিয়ে নিয়ে গেছে" - এই মর্মে জানিয়েছেন টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন।
বিশ্বকে গর্বিত করার মতো ব্যবসায়ী রতন টাটা
১৯৯১ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলারের স্টিল-থেকে-সফটওয়্যার শিল্পের নেতৃত্বে থাকা টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হন রতন টাটা, যা শুরু করেছিলেন তাঁর প্রপিতামহ, একশ বছর আগে। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা টাটা টেলিসার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৪ সালে তিনি আইটি সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসকে পাবলিক করেন। ২০০৯ সালে রতন টাটা বিশ্বের সবচেয়ে কম দামের গাড়িটি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের নাগালের মধ্যে আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরণ করেন। টাটা ন্যানো মাত্র ১ লক্ষ টাকা দামে বাজারে আসে।
টাটা ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দু'বার টাটা গ্রুপের চেয়ারপারসন ছিলেন। যদিও তিনি সংস্থার দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে সরে এসেছিলেন, তবুও তিনি এর দাতব্য ট্রাস্টগুলির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাইরাস মিস্ত্রি, রতন টাটার পরে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান হন, কিন্তু ২০২২ সালে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।
৩৬০ ওয়ান ওয়েলথ হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২৩ অনুসারে, এক্স-এ ১৩ মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী এবং ইনস্টাগ্রামে প্রায় ১০ মিলিয়ন অনুসারী নিয়ে ভারতের 'সর্বাধিক অনুসরণীয় প্রতিষ্ঠাতা' হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন রতন টাটা।
কিভাবে কেটেছে রতন টাটার প্রারম্ভিক জীবন?
১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণকারী রতন টাটা ১৯৪৮ সালে তাঁর বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর তাঁর নানী নওয়াজবাই টাটার কাছে বেড়ে ওঠেন। তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে পড়াশোনা করেন। হার্ভার্ডে ম্যানেজমেন্ট কোর্সে অধ্যয়ন করেন। একবার টাটা বলেছিলেন যে লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করার সময় তিনি প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের কারণে মেয়েটির বাবা-মা তাকে ভারতে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানান।
১৯৬২ সালে টাটা গ্রুপে যোগদানের পর, তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং অবশেষে ১৯৯১ সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হন। টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান থাকাকালীন, তিনি টাটা ন্যানো, টাটা মোটরস এবং টাটা স্টিল সহ বেশ কয়েকটি নতুন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। রতন টাটার ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি-নীতি তাকে ভারতে একজন আদর্শ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
তাঁর নেতৃত্বে, তিনি বিভিন্ন দেশে টাটা গ্রুপের উপস্থিতি সম্প্রসারিত করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।টাটা গ্রুপ আজ বিশ্বজুড়ে পরিচিত। টাটা গ্রুপ লক্ষ লক্ষ পরিবারকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। এই সমস্ত পরিবারের কাছে রতন টাটা একজন দেবতার মতো। ২০০৮ সালে রতন টাটা ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণ পান। তিনি ২০০০ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন।
রতন টাটার মৃত্যু শুধু একজন ব্যক্তির মৃত্যু নয়, এটি ভারতীয় শিল্পের এক অপূরণীয় ক্ষতি। টাটার অবদান এবং নেতৃত্ব শুধুমাত্র টাটা গ্রুপকেই নয়, ভারতকেও বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সমগ্র দেশ তাঁর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। রতন টাটার ব্যবসায়িক নীতি সর্বদা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং নীতির উপর দৃষ্টিপাত করেছে। তিনি শুধুমাত্র মুনাফার জন্য নয়, সমাজের উন্নয়নের জন্যও কাজ করে গেছেন। সেই কারণেই তিনি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যেই নয়, বিশ্ব দরবারেও একজন মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে উত্তরোত্তর সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেছিলেন।