সংক্ষিপ্ত

বিহারে (Bihar) মন্দিরের উপর কর চাপিয়ে বিতর্কে নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) সরকার। রাম মন্দির ট্রাস্টের কামেশ্বর চৌপল একে জিজিয়া করের (Jizya Tax) সঙ্গে তুলনা করেছেন। 
 

বিহারের (Bihar) প্রত্যেকটি মন্দিরকে এবার থেকে সরকারি খাতায় নিজেদের নাম নিবন্ধিত করতে হবে এবং সরকারকে কর দিতে হবে। সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে বিহার স্টেট বোর্ড অফ রিলিজিয়াস ট্রাস্ট (Bihar State Board of Religious Trust)। স্বাভাবিকভাবেই, ডানপন্থী বিভিন্ন সংগঠন এবং হিন্দু ভক্তদের মধ্যে এই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস (Congress) এবং এআইমিম (AIMIM) দলের পক্ষ থেকেও এই সিদ্ধান্তের জন্য নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) সরকারের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।

এমনকী, এই সিদ্ধান্তের ফলে বেশ কয়েকটি বাড়ির মন্দিরকেও কর দিতে হবে, বলে অভিযোগ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের আবাসিক প্রাঙ্গনে নির্মিত হলেও মন্দিরগুলি যদি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তাহলে কর দিতে হবে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, যদি কোনও মন্দির কোনও বাড়ির সীমানা প্রাচীরের মধ্যে থাকে এবং সেখানে শুধুমাত্র একটি পরিবারের সদস্যরাই পূজা করেন, তাহলে সেটিকে ব্যক্তিগত মন্দির হিসাবে বিবেচনা করা হবে এবং তাদের কর দিতে হবে না। তবে, যদি মন্দিরটি বাড়ির সীমানা বাইরে থাকে, অথবা সীমানার মধ্যে মন্দির হলেও, সেখানে বাইরের লোকও এসে পূজা দেয়, তাহলে সেই মন্দিরগুলিকে সর্বজনীন বলেই গন্য করা হবে। সেইক্ষেত্রে সেই মন্দিরের মালিকদের কর দিতে হবে। 

নতুন নিয়মে অনুসারে, বিহার স্টেট বোর্ড অফ রিলিজিয়াস ট্রাস্ট, প্রতিটি সর্বজনীন মন্দিরের জন্য  চার শতাংশ করে, কর নির্ধারণ করেছে। প্রতিটি সর্বজনীন মন্দিরকেই বাধ্যতামূলকভাবে তাদের নাম নিবন্ধিত করতে হবে। একবার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেল, তারপর থেকে তাদের মোট আয়ের চার শতাংশ করে ট্যাক্স দিতে হবে। এই সিদ্ধান্তে হিন্দু ভক্তরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ। কারণ, বিহারে আবাসিক প্রাঙ্গনে বেশ কয়েকটি মন্দির গড়ে উঠেছে। সেই মন্দিরগুলিতে ওই বাড়ির বাসিন্দারাই শুধু পূজা দেন তা নয়, বাইরের মানুষও এসে পূজা দিয়ে থাকেন। তবে, টাইমস নাও-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বিহার স্টেট বোর্ড অফ রিলিজিয়াস ট্রাস্টের অ্য়াসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট, তুলসায়ন সায়গাল (Tulsayan Saigal) বলেছেন, তাঁরা কোনও কর চাপাননি মন্দিরগুলির উপর। আয়ের ৪ শতাংশ অর্থ সরকার নিচ্ছে বার্ষিক পরিষেবা খরচ হিসাবে।

তবে, ট্রাস্ট যাই দাবি করুক না কেন, এই নতুন কর বা পরিষেবা খরচ নিয়ে সমালোচনা থামছে না। শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের (Shri Ram Janmabhoomi Teertha Kshetra Trust) সদস্য কামেশ্বর চৌপল (Kameshwar Chaupal), 'পরিষেবা চার্জে'র নামে এই 'নতুন কর' চাপানোর কারণে রাজ্য সরকারের নিন্দা করেছেন এবং একে 'জিজিয়া করে'র (Jizya tax) সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিহারের নিতিশ কুমার সরকারের বড় শরিক দল বিজেপি (BJP)। তাদের পক্ষ থেকেও এই কর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সঞ্জয় ময়ুখ (Sanjay Mayukh), রাজ্যের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী নীরজ কুমার সিং বাবলু (Neeraj Kumar Singh Bablu) এবং বিজেপি বিধায়ক লালন পাসওয়ানও (Lalan Paswan) এই বিষয়ে তাঁদের আপত্তি জানিয়েছেন।

জিজিয়া কর কী? মুঘল আমলে এই বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। জিজিয়া কর দিলে, তবেই সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে পারতেন অমুসলিম নাগরিকরা। ১৫৭৯ খ্রীষ্টাব্দে আকবর মুঘল সাম্রাজ্যের বাদশা হওয়ার পর এই কর বাতিল করেছিলেন। কিন্তু, ১৬৭৯ সালে অমুসলিম প্রজাদের উপর ফের 'জিজিয়া' কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব।