সংক্ষিপ্ত

  • সোশ্যাল মিডিয়াগুলি মত প্রকাশের নীতি নির্ধারক হতে পারে না
  • কোনও এক ব্যক্তি বা সংগঠনের সেই অবাধ স্বাধীনতা থাকতে পারে না
  • যা সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করবে
  • কিন্তু বারবার সেই ধরণের ঘটনা ঘটে চলেছে

অখিলেশ মিশ্র- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফেসবুক ও ট্যুইটারের মত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যখন ব্যান করে, তখন উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া এসেছিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাঁক্রোর কাছ থেকে। স্পষ্ট জানিয়ে ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা এমনই হওয়া উচিত।

ম্যাঁক্রো জানান আমি এমন এক পৃথিবীতে থাকতে চান না, যেখানে গণতন্ত্রের হত্যা করে যাবতীয় মূল সিদ্ধান্তগুলি, কোনও এক বিশেষ ব্যক্তি, বিশেষ সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত হবে। কারণ এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তাই আমি চাই যে এটি জনসাধারণের প্রতিনিধি দ্বারা নির্বাচিত কোনও আইন দ্বারা সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। 

তাই সোশ্যাল মিডিয়ার উচিত নিজেদের নিরপেক্ষ ও ভয়হীন হিসেবে তুলে ধরা, যাতে সেই প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারী রাজনৈতিক বা অন্য ধরণের সেন্সরশিপের ভয় ছাড়াই তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ার উচিত বিশেষ বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া। সেগুলি থেকে বিরত থাকা উচিত।  

এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল প্রযুক্তি ও সামাজিক মিডিয়া সংস্থাগুলির ভূমিকা যা বিশ্বব্যাপী জনগণের জন্য একটি ফোরাম হিসেবে উঠে এসেছিল, তার ভূমিকা অনেকটা নিষ্প্রভ। যদি কোনও জঙ্গি সংগঠন হোয়াটসঅ্যাপের মত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে নাশকতার ছক কষে, তবে কি তা জানার পরেও শুধু ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের গুরুত্বকে সামনে রেখে নিরাপত্তাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকবেন, সেই প্রশ্নও উঠছে। যদি কোনও অপরাধ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সংগঠিত হয়, তবে তাও কি সেই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অপরাধীকে ধরা যাবে না

বর্তমানের ছবি
সোশ্যাল মিডিয়াগুলির বোঝা উচিত কোনও এক ব্যক্তি বা সংগঠনের সেই অবাধ স্বাধীনতা থাকতে পারে না, যা সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করবে। কিন্তু বারবার বেশ কিছু ঘটনা সেই ধরণের বিষয়কে সমর্থন করছে। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিতে বসে কেউ কীভাবে নির্ধারণ করতে পারে যে ফ্রান্স বা অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের কোনও নাগরিক তার মত প্রকাশ করবে কি করবে না। মত প্রকাশ করলেও, তার কতটা গণ্ডী থাকবে বা কতটা সীমাবদ্ধতা থাকবে, এটা কোনও একজন কী নির্দিষ্ট করতে পারে, প্রশ্ন থাকছে। 

অথচ শুরুর দিকে সোশ্যাল মিডিয়াগুলির জনপ্রিয়তা পাওয়ার মূল কারণ সাধারণের কথা ভাবা, সাধারণের মত করে চলার নীতি। যা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে এই প্ল্যাটফর্মগুলি।  

ট্যুইটারের সঙ্গে ভারত সরকারের দ্বন্দ্ব 
তথ্য মন্ত্রক এক বিবৃতি জারি করে। তাতে বলা হয়েছে, ভারতে বাক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শতাব্দীপ্রাচীন গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করাটা শুধুমাত্র টুইটারের মতো একটি বেসরকারি, শুধুমাত্র লাভের অঙ্ক কষা, বিদেশী সংস্থার অহংকার নয়, এটা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং এর শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি। অন্যদিকে, টুইটারের বক্তব্য, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রতি শর্তাদি আরোপের চেষ্টা। এই ধরণের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের মাধ্যমে টুইটার ভারতের আইনী ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে চাইছে। এছাড়া, ভারতের নতুন আইটি বিধি মানতে অস্বীকার করছে। এইভাবে তারা ভারতে হওয়া কোনও অপরাধমূলক ঘটনা থেকে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে।

এই সংঘাতের শুরু বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। উল্লেখ্য এক নয়া নির্দেশিকার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াকে এক ছাদের তলায় আনতে চেয়েছিল কেন্দ্র। কেন্দ্র এক নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছিল, সোশ্যাল মিডিয়াগুলিকে নিজেদের তথ্য সরকারকে দিতে হবে। নতুন নির্দেশিকা বাস্তবায়নের জন্য সরকার এই সংস্থাগুলিকে তিন মাস সময় দিয়েছিল। 

তবে মনে রাখতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলি বিশ্বের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা নেয়। তারা লক্ষ লক্ষ মানুষকে ক্ষমতায়িত করেছে এবং মতপ্রদানের ক্ষমতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে, ইতিহাসে যা এর আগে দেখা যায়নি। ফলে ব্যক্তি স্বাধীনতার মাত্রা বজায় রেখে এক মধ্যস্থতার আশা করছেন সকলেই।