সংক্ষিপ্ত
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সাড়া পৃথিবীই উদ্বিগ্ন।
প্লাস্টিককে অন্য কোনও উপায়ে কাজে লাগানো নিয়ে গবেষণা চলছে।
এবার সুইস বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিক থেকে তৈরি করলেন ১৮ ক্যারেটের সোনা।
এই সোনা সাধারণ সোনার থেকে অনেক হালকাও।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সাড়া পৃথিবীতেই উদ্বেগের শেষ নেই। অসহজে পচন না ধরা এই প্লাস্টিককে কীভাবে জ্বালানী তৈরি বা অন্য কোনও উপায়ে কাজে লাগানো যায় তাই নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্বজুড়ে। আমাদের দেশেই ভারতীয় সেনার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ মাসকয়েক আগে প্লাস্টিক দিয়ে রাস্তা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তবে সুইস বৈজ্ঞানিকরা যা দাবি করছেন, তা সত্যি হলে প্লাস্টিকের এর থেকে ভালো ব্যবহার আর কিছু হবে না। তাদের দাবি প্লাস্টিক ম্যাট্রিক্সের মিশ্রণ ব্যবহার করে তারা ১৮ ক্যারেটের সোনা তৈরি করতে পেরেছেন।
সম্প্রতি এই গবেষণা সংক্রান্ত একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে 'সায়েন্স' পত্রিকায়। সেই জার্নালে সুইজারল্য়ান্ডের ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রাফায়েল মেজেঙ্গা বলেছেন, এই নতুন সোনার ওজন প্রচলিত ১৮ ক্যারেট সোনার চেয়ে প্রায় দশগুণ কম। প্রচলিত মিশ্রণগুলিতে তিন চতুর্থাংশ সোনার সঙ্গে এক-চতুর্থাংশ তামা মেশানো থাকে। তাতে প্রতি ঘনসেন্টিমিটার সোনার ওজম হয় ১৫ গ্রাম। সেখানে প্লাস্টিক থেকে তৈরি সোনার ওজন প্রতি ঘনসেন্টিমিটারে মাত্র ৭ গ্রাম।
তাই বলে একে নকল বলে ভাবার কিছু হয়নি, রাফায়েল মেজেঙ্গার দাম ওজনে হাল্কা হলেও এটি একেবারে খাঁটি ১৮ ক্যারেটের সোনা। খনিজ সোনার মতোই একরকম চকচকে। প্লাস্টিক সোনা পালিশ করাও তুলনামূলকভাবে সহজ। আর ওজনে হালকা হওয়ার কারণে ঘড়ি বা গয়না তৈরির ক্ষেত্রে এই সোনা বিপুল জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।
তাঁরা জানিয়েছেন, এটি তৈরিতে প্রোটিন ফাইবার এবং পলিমার ল্যাটেক্স ব্যবহার করা হয়েছে। তারমধ্যে প্রথমে সোনার ন্যানোক্রিস্টালের পাতলা একটি ডিস্ক রাখা হয়। প্রথমে এটি জলের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তারপরে অ্য়ালকোহলের মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়ে একটি জেল প্রস্তুত করা হয়। এরপর সেই জেলকে উচ্চ চাপের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের মধ্য নিয়ে দিয়ে এটি আকার দেওয়া হয়। গবেষকরা এই প্রক্রিয়া এবং উৎপাদিত সোনার পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছেন।
আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, পৃথিবীতে প্রায় ৯.১ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক আবর্জনা জমে আছে। আর বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৭.৬ বিলিয়ন। অর্থাৎ, প্রতিটি মানুষের ভাগে প্রায় ১.২ টন করে প্লাস্টিক আবর্জনা রয়েছে। এই সব প্লাস্টিক আবর্জনাকে যদি এভাবে সোনায় পাল্টে ফেলা যায়, তাহলে কী হতে পারে ভেবে দেখেছেন?