সংক্ষিপ্ত
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি বিমানবন্দর , একটি সামরিক কার্যালয় ও একটি টাউনশিপ তৈরী করার উদ্দেশ্যে আন্দামানের ১২ থেকে ২০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ অরণ্য ও রেন ফরেস্টের ৮.৫ লক্ষ গাছ কেটে ফেলার অনুমোদন চেয়ে বুধবার একটি প্রস্তাব পাঠায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রককে। কিন্তু কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক স্পষ্ট জানায় যে ভারতের জীববৈচিত্র নষ্ট করে এমন কোনো প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ভারতের জীববৈচিত্রের খনি হলো আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। প্রায় লক্ষাধিক প্রজাতির জলজ ও স্থলজ প্রাণীর বাস এই দ্বীপে।প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতিভুক্ত অনেক প্রানীরই অস্তিত্ব মেলে এখানে। আর আন্দামানের প্রায় ৮৬ শতাংশই রেন ফরেস্টের অন্তর্গত হাওয়ায় এই জীববৈচিত্র দিন দিন আরও বাড়ছিল বলেই জানিয়েছিলেন পরিবেশ বিদরা। এই প্রানীবৈচিত্রের আকর্ষণেই এক বিরাট পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে এই দ্বীপ কেন্দ্রিক। কিন্তু সম্প্রতি একটি খবর আমাদের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে আন্দামানের জীববৈচিত্র আজ মানুষের হাতে বিপন্ন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি বিমানবন্দর , একটি সামরিক কার্যালয় ও একটি টাউনশিপ তৈরী করার উদ্দেশ্যে আন্দামানের ১২ থেকে ২০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ অরণ্য ও রেন ফরেস্টের ৮.৫ লক্ষ গাছ কেটে ফেলার অনুমোদন চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রককে। কিন্তু কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক স্পষ্ট জানায় যে এই প্রকল্পের জন্য ম্যানগ্রোভ কাটার অনুমোদন দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়।
রিপোর্ট অনুযায়ী, কেন্দ্র, জাতীয় উন্নতির স্বার্থে আন্দামানের রেনফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে একটি সামরিক ও বেসামরিক কার্যালয়, একটি দ্বৈত-ব্যবহারের বিমানবন্দর , একটি আন্তর্জাতিক কনটেইনার ট্রান্স-শিপমেন্ট টার্মিনাল, একটি গ্যাস , ডিজেল- ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র , একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও একটি টাউনশিপ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। আর তার জন্যই তারা ১২-২০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ ও রেনফরেস্টের ৮.৫ লক্ষ গাছ কেটে ফেলার অনুমোদন চেয়ে গত ৩০ সে মার্চ একটি প্রস্তাব পাঠায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রককে।প্রস্তাবিত এই চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন যে গান্ধীনগর-শাস্ত্রী নগর এলাকায় যে বিমান বন্দর তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে সেটি ভারতীয় নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকবে ও এটি বিমান বন্দরটি সামরিক ও বেসামরিক দুরকম কাজেই ব্যবহৃত হবে।
কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক এই প্রস্তাব অনুমোদনে অস্বীকার করলে কেন্দ্র পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলে যে এই প্রকল্পটি প্রতিরক্ষা , জাতীয় নিরাপত্তা , কৌশলগত নিরাপত্তা ও জনসাধারণের উন্নয়নের উদ্দেশ্যেই নির্মিত হবে। এবং সেই কারণেই এই প্রকল্পের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যেহেতু এই বিমানবন্দরটি প্রতিরক্ষার স্বার্থেই নির্মিত হবে তাই এই প্রকল্পের নির্মাণ-পরিকল্পনা বা নকশা নিয়ে প্রকাশ্যে জনসাধারণকে কিছু এখনো জানানো যাবে না ।
গ্রেট নিকোবর দ্বীপ ভারতীয় ভূখণ্ডের দক্ষিণতম অংশ এবং এটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলির মধ্যেও একটা । আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে বঙ্গোপসাগরে ভারতকে একটি কমান্ডিং উপস্থিতি দিয়েছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশাধিকারও প্রদান করে।
তবে কেন্দ্র দ্বারা প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি এখানকার শমপেন এবং নিকোবারিজ আদিবাসী সম্প্রদায় সহ মোট ১৭৬১ জন মানুষকে প্রভাবিত করবে৷ এই দ্বীপটি বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল, যার মধ্যে রয়েছে লেদারব্যাক সামুদ্রিক কচ্ছপ, নিকোবর মেগাপোড , নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় এক প্রজাতির উড়ন্ত পাখি; নিকোবর ম্যাকাক এবং নোনা জলের কুমির।
প্রকল্প সাইটটি গ্যালাথিয়া বে ন্যাশনাল পার্ক এবং ক্যাম্পবেল বে ন্যাশনাল পার্কের ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত। এই বিশেষ এলাকাটি পরিবেশগত দিক থেকেও অত্যন্ত সংবেদনশীল। তিনটি প্রধান প্রতিষ্ঠান - ভারতের জুলজিক্যাল সার্ভে (জেডএসআই), ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউআইআই) এবং সেলিম আলি সেন্টার ফর অর্নিথোলজি অ্যান্ড ন্যাচারাল হিস্ট্রি (স্যাকন) -এই প্রকল্পে পরিবেশে কি প্রভাব পড়তে পারে সেই প্রসঙ্গটি খুঁটিয়ে দেখছেন। তারা ব্যাপারটির সঠিক মূল্যায়নের জন্য বিশেষ কমিটিও গঠন করেছেন।
যদিও জিডিএসআই তার একটি সুপারিশে জানিয়েছে এটি গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডের উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের উপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। আর ইএসি জানান এই প্রকল্প মেগাপোদের ৫১ টি সক্রিয় বাসাগুলির মধ্যে ৩০ টিকেই ধ্বংস করবে যাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বন্যজীবন।