সংক্ষিপ্ত
টিপরা মোথা ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ২৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫৮ জন প্রার্থী।
বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় মোট ৬০টি বিধানসভা আসনের জন্য ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সর্বত্র পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আসুন জেনে নিই নির্বাচন সংক্রান্ত দশটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১. কখন থেকে ভোট অনুষ্ঠিত হবে?
নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া তফসিল অনুযায়ী, ত্রিপুরার সবকটি আসনে সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে এবং চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। যারা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটার লাইনে যোগ দেবেন তাদের ভোট দিতে দেওয়া হবে। কারিগরি সমস্যার কারণে ভোটগ্রহণে কোনো বিঘ্ন ঘটলে সংশ্লিষ্ট জেলার নির্বাচন আধিকারিক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
২. কোন কোন দলে কতজন প্রার্থী রয়েছে?
এবার ত্রিপুরার ৬০টি আসনে ২৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিজেপির ৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং IPFT-এর পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কংগ্রেস ও সিপিআই(এম) জোট গঠন করেছে। এর অধীনে সিপিআই(এম) ৪৩টি আসনে এবং কংগ্রেস ১৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একটি আসনে স্বতন্ত্রকে সমর্থন দিয়েছেন। প্রদ্যোত বিক্রমের নতুন দল টিপরা মোথা, যিনি ত্রিপুরার রাজপরিবারের অন্তর্গত, তিনিও এবার মাঠে রয়েছেন। টিপরা মোথা ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ২৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫৮ জন প্রার্থী।
৩. কতজন মহিলা প্রার্থী নির্বাচনে?
ত্রিপুরায় মোট ৩০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সর্বোচ্চ ১২ জন মহিলাকে টিকিট দিয়েছে। সিপিআই(এম) দুইজন, টিপরা মোথা দুইজন, তৃণমূল কংগ্রেস তিনজন, কংগ্রেস একজন প্রার্থী দিয়েছে। অন্য দলগুলো ১০ জন মহিলা প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে।
৪. কতজন ভোটার ভোট দেবেন?
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কিরণ গীতে জানিয়েছেন যে ত্রিপুরার চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ২৮,১৩,৪৭৮ জন ভোটার রয়েছে, যার মধ্যে ১৪,১৪,৫৭৬ জন পুরুষ, ১৩,৯৮,৮২৫ জন মহিলা এবং ৭৭ জন ট্রান্সজেন্ডার ভোটার রয়েছে, ১০,৩৪৪ জন পরিষেবা ভোটার রয়েছে৷ তিনি জানান, ৮০ বছরের বেশি বয়সী ভোটার ৩৮ হাজার ৩৯ জন এবং ১০০ বছরের বেশি বয়সী ভোটার ৬৭৯ জন। তিনি বলেন, ১৮-১৯ বছর বয়সী ৬৫,০৪৪ ভোটার নথিভুক্ত রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৪,৭০৪ জন পুরুষ, ৩০,৩২৮ জন মহিলা এবং ১২ জন উভলিঙ্গের মানুষ।
৫. প্রথমবার কতজন ভোট দেবেন?
নির্বাচন কমিশনের মতে, ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো ৬৫ হাজার ৪৪ জন যুবক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে।
৬. নির্বাচন কমিশন কি বলেছে?
ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক গীতে কিরণ কুমার দিনকর রাও জানিয়েছেন, ২,৫০৪টি জায়গায় ৩৩২৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৩১ হাজার ভোটকর্মী তাদের নির্ধারিত ভোট কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য সর্বত্র নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ), ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর) এবং রাজ্য পুলিশ কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে।
৭. নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি করা হয়?
ত্রিপুরায় হিংসামুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিটি কোণায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ৪০০ কোম্পানি CAPF বা ৩০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী পাঠিয়েছে। সিএপিএফ ছাড়াও আসাম রাইফেলস, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স, সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স, সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স ছাড়াও প্রায় নয় হাজার টিএসআর কর্মী এবং ছয় হাজার ত্রিপুরা পুলিশের কর্মীও মোতায়েন করা হয়েছে।
৮. ত্রিপুরার সমীকরণ কি কি?
আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভোটারদের সংখ্যা ত্রিপুরায় সবচেয়ে বেশি। তাদের সংখ্যা প্রায় ৩২ শতাংশ। ৬০টি আসনের মধ্যে ২০টি তপশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। ৪০টি আসন অসংরক্ষিত। এজন্য সব দলই তাদের পূর্ণ শক্তি দিয়েছে। রাজ্যটির বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত রয়েছে এবং জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ বাংলাভাষী। আট শতাংশ মুসলিম। গতবার বিজেপি এবং আইপিএফটি ২০টি সংরক্ষিত আসন জিতেছিল।
৯. কোন আসনগুলো হাই প্রোফাইল?
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা খোদ টাউন বর্দোয়ালি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার তাঁর সরাসরি লড়াই হবে কংগ্রেসের আশিস কুমার সাহার সঙ্গে। সবার দৃষ্টি থাকবে এই আসনের দিকে। একইভাবে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণুদেব ভার্মা চারিলাম বিধানসভা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সবার নজর থাকবে এই আসনের দিকেও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিককে ধানপুর আসন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে, সেদিকেও সবার নজর থাকবে।
১০. কতজন প্রার্থী কোটিপতি?
ত্রিপুরায়, ২৫৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ৪৫ জনের (১৭ শতাংশ) এক কোটি টাকা বা তার বেশি সম্পদ রয়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত নির্বাচনে মাত্র ১২ শতাংশ প্রার্থী ছিলেন কোটিপতি ক্যাটাগরিতে। পাঁচ কোটি বা তার বেশি সম্পদ রয়েছে এমন নয়জন প্রার্থী রয়েছেন। ২০ জন প্রার্থীর সম্পদ রয়েছে দুই থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত। ৫৯ জন প্রার্থীর সম্পদ ৫০ লক্ষ থেকে দুকোটি টাকা পর্যন্ত। ৭০ জন প্রার্থীর সম্পদ ১০ থেকে ৫০ লক্ষের মধ্যে এবং ১০১ জন প্রার্থীর সম্পদ ১০ লাখের কম।