সংক্ষিপ্ত


সোমবার চিনের (China) গুয়াংজি (Guangxi) প্রদেশে ভেঙে পড়েছিল ১৩৩ জনকে নিয়ে একটি বিমান। এদিন উদ্ধারকারীরা তাঁদের অনেক ব্যবহারের জিনিসপত্র পেলেও, পেলেন না জীবিত কাউকে।

কাদা লাগা মানিব্যাগ। ব্যাঙ্কের কার্ড। সরকার অফিসের পরিচয়পত্র। সোমবার চিনের (China) গুয়াংজি (Guangxi) প্রদাশে পাহাড়ি জঙ্গলে ভেঙে পড়া বিমানের (China Plane Crash), দুর্ঘটনাস্থল থেকে, যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের এরকম বহু অনুস্মারক উদ্ধার করেছেন চিনা উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। কিন্তু, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ওই এলাকায় তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনও প্রাণের সন্ধান পাননি। ১৩৩ জনের, বহু স্মৃতি, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু, এমনকী কারোর দেহাংশও উদ্ধার করা যায়নি। 

সোমবার ওই এলাকায় লাগানো নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধরা পড়া ভিডিওয়, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের (China Eastern Airlines) বিমানটিকে একেবারে উল্লম্বভাবে প্রচন্ড গতিতে মাটির দিকে নেমে আসতে দেখা গিয়েছিল। আর তারপরই পাহাড়ি জঙ্গলের ওই অংশে প্রচন্ড বিস্ফোরণে তৈরি হয়েছিল একটি বিশাল আগুনের গোলা। যার জেরে একটা বড় অংশে আগুন ধরে গিয়েছিল। উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার ফলে পাহাড়টির একপাশে একটি গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। কাছাকাছি এলাকায় কর্মরত এক কৃষক, বিমানটির পতনের প্রত্যক্ষদর্শী। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, বিমানটি সরাসরি এটি পাহাড়ের খাঁজে আঘাত করেছিল। তবে, ওই এলাকায় কোনও বসতবাড়ি ছিল না। 

এদিন, চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমের পোস্ট করা এক ভিডিও ক্লিপে দেখা গিয়েছে, বিস্তৃত বনাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটির ছোট ছোট টুকরো। কিছু কিছু অংশ পড়ে রয়েছে সবুজ ঝোপঝাড়ের মধ্যে। বাকিগুলি পড়ে রয়েছে, আগুনে গাছ পালা পুড়ে ফাঁকা হয়ে যাওয়া অংশে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ধ্বংসাবশেষের বড় বড় টুকরোগুলিকে চিনা কর্তৃপক্ষ টেপ দিয়ে ঘিরে রেখেছে। ছোট টুকরোগুলির পাশে নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের (Yunnan Province) রাজধানী কুনমিং (Kunming) থেকে চিনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে হংকং-এর অদূরে অবস্থিত গুয়াংজুতে (Guangzhou) যাচ্ছিল ফ্লাইট ৫৭৩৫। মাঝে গুয়াংজি অঞ্চলের উঝোউ (Wuzhou) শহরের ঠিক বাইরে সেটি ভেঙে পড়ে। তারপর যে বিশাল অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছিল, তা এমনকী নাসার (NASA) উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে। পড়ে চিনা বন-অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা সেই আগুন নেভাতে সফল হন। ইতিমধ্য়েই কুনমিং এবং গুয়াংজু বিমানবন্দরে যাত্রীদের পরিবারের সদস্যরা জড়ো হয়েছেন। তবে, তাঁরা কোনও উত্তর পাচ্ছেন না। 

ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্যে দেখা গিয়েছে, যে উচ্চতা কোনও বিমানের আধঘন্টা লাগে, সেই উচ্চতা দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি নেমে এসেছিল কয়েক সেকেন্ডে! কিন্তু, কী কারণে বিমানটি আকাশ থেকে আচমকা এতটা উচ্চতা নেমে এসেছিল, তা এখনও রহস্য থেকে গিয়েছে। প্রকতি বিমানের ব্ল্যাক বক্সে ফ্লাইট ডেটা এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ড থাকে। তবে, এই ক্ষেত্রে সেই ব্ল্যাকবক্স খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে, বলে মনে করা হচ্ছে। এর জন্য মানুষের পাশাপাশি ড্রোন প্রযুক্তিকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।

বিমানযাত্রীদের পরিচয় সম্পর্কে প্রাথমিক পর্যালোচনার পর, চিনা বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, যাত্রীদের মধ্যে কোনও বিদেশি ছিলেন না। ডিংলং কালচার নামে, খনন এবং টিভি ও চলচ্চিত্র প্রযোজনার একটি  সংস্থা জানিয়েছে, তাঁদের সিএফও, ফ্যাং ফাং ওই বিমানের এক যাত্রী ছিলেন। এছাড়া, তাদের একটি অ্যাকাউন্টিং ফার্মের দুই কর্মীও ওই উড়ানে ছিলেন।

দুর্ঘটনাস্থলটি তিন দিক থেকে পাহাড়ে ঘেরা। তার উপর মঙ্গলবার বৃষ্টি হওয়ায় উদ্ধারকাজে আরও অসুবিধা হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই এক জায়গায় উদ্ধার অভিযানের বেস ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে সেনা ও অন্য়ান্য উদ্ধারকর্মীরা আগুনে বিধ্বস্ত স্থানগুলি এবং আশেপাশের ঘন জঙ্গলে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছেন। দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি একটি গ্রামে, পুলিশ পোস্টিং করা হয়েছে, তারা ওই এলাকায় সাধারণ মানুষকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। তবে, ইতিমধ্যেই সেখানে আসতে শুরু করেছেন, হতভাগ্য যাত্রীদের আত্মীয়রা।