সংক্ষিপ্ত


মানব বিবর্তনের ইতিহাস বদলে দিল 'ড্রাগন ম্যান'

চিনে খোঁজ মিলল নতুন মানব সদৃশ্য প্রজাতি

তারাই আমাদের সবচেয়ে কাছের পূর্বপুরুষ

মানুষের থেকে কতটা আলাদা ছিল তারা

বদলে গেল মানব ইতিহাস। আধুনিক মানুষের জন্ম হয়েছিল আফ্রিকায়। কিন্তু, পূর্ব এশিয়া যে মানব বিবর্তনের ইতিহাসে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেল। শুক্রবার নৃতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেছেন, উত্তর-পূর্ব চিন থেকে পাওয়া একটি খুলি থেকে সম্পূর্ণ নতুন এক মানব সদৃশ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে 'হোমো লঙ্গি', বা 'ড্রাগন ম্যান'। এতদিন জানা ছিল, বিবর্তনের ইতিহাসে হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানব প্রজাতির সবচেয়ে নিকটতম প্রজাতি ছিল 'নিয়ান্ডার্থাল'। কিনতু, এই আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীদের দাবি, হোমো সেপিয়েন্স-এর নিকটাত্মীয় হল এই 'হোমো লঙ্গি'।

ওই খুলিটি অবশ্য কোনও সাম্প্রতিক আবিষ্কার নয়। চিনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের হারবিন শহর থেকে এই খুলিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল সেই ১৯৩০ এর দশকে। লং জিয়াং নদীর পাশে এই খুলিটি মিলেছিল। সেই থেকেই তাঁর নাম হয়েছে হোমো লঙ্গি বা ড্রাগন মানব। কারণ লং জিয়াং কথার অর্থ 'ড্রাগন নদী'। তবে সেই সময় ওই খুলি জাপানি সেনাবাহিনীর হাতে চলে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় ৮৫ বছর ধরে সেটি লুকানো ছিল ওই এলাকার একটি কূপে। ২০১৮ সালে সেটি ফের খনন করে তুলে এনে গবেষণার জন্য দেওয়া হয়েছিল হেবেই জিইও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জি কিয়াং-এর হাতে।

৮৫ বছর ধরে এই খুলি লুকানো ছিল চিনের হারবিন শহরের একটি কূপে

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক ক্রিস স্ট্রিংগার-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে খুলিটি নিয়ে যৌথ গবেষণা করেছেন কিয়াং, তারপর তা প্রকাশ করেছেন 'দ্য ইনোভেশন জার্নাল'-এ। তাঁদের দাবি, 'হারবিন' গ্রুপটি, 'নিয়ান্ডার্থাল'-দের থেকেও হোমো সেপিয়েন্স-এর আরও অনেক কাছের। আরও অনেক সাম্প্রতিককালে হোমো লঙ্গি এবং আমাদের অর্থাৎ আজকের মানুষের এক পূর্বপুরুষ ছিল।

জানা গিয়েছে হারবিন ক্রেনিয়াম অর্থাৎ ওই খুলিটি অন্তত ১ লক্ষ ৪৬ হাজার বছরের পুরোনো। আধুনিক মানুষের তুলনায় আরও মস্তিষ্ক আঁটতে পারে সেই খুলিতে। মানুষের তুলনায় তাদের অক্ষিকোটরও অনেকটাই বড়। ভ্রু-এর অংশটি আরও পুরু, মুখগহ্বর অনেক বেশি প্রশস্ত এবং দাঁতের আকারও মানুষের তুলনায় অনেকটাই বড়। খুলিটি সম্ভবত ৫০ বছর বয়সী এক পুরুষের।

মানুষের এই পূর্বপুরুষরা প্লাবনভূমিতে গঠিত বনাঞ্চলে বাস করতেন। তারা খাদ্যের জন্য শিকার করার উপর নির্ভর করত। হারবিনের বর্তমান সময়ের তাপমাত্রা থেকে গবেষকদের অনুমান, নিয়ান্ডার্থাল-দের থেকেও অনেক বেশি শীত সহ্য করতে হয়েছে হোমো লঙ্গি-দের। গবেষকরা আরও মনে করেন, সেই কঠোর পরিবেশের সঙ্গে তারা খুব ভালভাবে মানিয়ে নিয়েছিল এবং সম্ভবত পুরো এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছিল।